খুলনা | সোমবার | ২৬ মে ২০২৫ | ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ড. ইউনূসেই আস্থা দলগুলোর, শক্ত হাতে হাল ধরার আহ্বান

খবর প্রতিবেদন |
১১:০৬ পি.এম | ২৫ মে ২০২৫


রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে পদত্যাগের কথা ভেবেছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তবে উপদেষ্টা পরিষদসহ ঘনিষ্ঠজনদের পরামর্শে তিনি সেই সিদ্ধান্ত পাল্টিয়েছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে এবার প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ করছেন। দ্বিতীয় দিনের সংলাপে আজ রোববার (২৫ মে) বিভিন্ন দলের ২০ জনকে আমন্ত্রণ জানান নিজের বাসভবন যমুনায়। সেখানে দুই পর্বে বৈঠক হয় রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে। প্রায় সব দলই ড. ইউনূসের প্রতি নিজেদের আস্থার কথা জানিয়েছেন। পদত্যাগের কথা চিন্তা না করে শক্ত হাতে হাল ধরার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় দুই দফায় রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন প্রধান উপদেষ্টা। সেখানে নির্বাচন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, মানবিক করিডোর ইস্যুসহ সাম্প্রতিক বিভিন্ন ইস্যুতে খোলামেলা আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা সাংবাদিকদের সঙ্গে সেই আলোচনার কথা তুলে ধরেন।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ভারতীয় আধিপত্যবাদ আমাদের এ অর্জন মেনে নিতে পারছে না। পারলে একদিনে তা ধ্বংস করে দেবে। এটা যাতে কোনোভাবেই না হয়, সে জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, গেল কয়দিনের ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার মন খারাপ ছিল। এজন্য তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। মাঝনদীতে মাঝি বদলাতে হয় না।  এজন্য ড. ইউনূসের ওপর সবাই আস্থা রাখাতে চায় বলে তাকে জানানো হয়েছে।

সাইফুল হক বলেন, অনেক ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার দলনিরপেক্ষ অবস্থা বজায় রাখতে পারছে না। এটি পরিহার করে নিরপেক্ষ আচরণ দেখতে চাই। এক সরকারের মধ্যে আরেকটি সরকার দেখতে চাই না। মানবিক করিডোরসহ জাতীয় কোনো সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়া নেওয়া উচিত নয় বলে আমরা বৈঠকে জানিয়েছি।

আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ পাবেন না বলে ধারণা করেছিলেন। তাই তিনি পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। নির্বাচনের জন্য একটু শক্তিশালী প্রশাসন দরকার, সেটি প্রস্তুত হলেই নির্বাচন আয়োজন হবে বলে প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন।

মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বলেছি আপনি যদি দায়িত্ব ছেড়ে দেন এখন, তাহলে নির্বাচন, সংস্কার–সবকিছু অনিশ্চিত হয়ে যাবে। জাতি দিশেহারা হয়ে যাবে।

সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, দেশে ও দেশের বাইরে থেকে গণঅভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করতে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। মতের পার্থক্য থাকবে এটা মেনে নিতে হবে, কিন্তু কোনটা কার্যকর হবে সেটা ঠিক করবে জনগণ।

সেলিম বলেন, অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যে সংস্কার দরকার, তা করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। সময়ক্ষেপণ করলে পরিস্থিতি ঘোলাটে হবে, তখন কিছু করার থাকবে না।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করেই তাকে (ড. ইউনূস) যেতে হবে। নানা ধরনের অনাস্থা তৈরি হচ্ছে, এরমধ্য দিয়ে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। এই জায়গাটা দূর করতে হবে বলেও তিনি বৈঠকে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জনগণ দৃশ্যমান বিচার দেখতে চায়। বিচারের আন্তর্জাতিক মান যাতে বজায় থাকে, সে ব্যাপারেও দৃষ্টি দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

বৈঠকে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দাবি করেন সাকী। প্রধান উপদেষ্টাও বলেছেন, এটা যে জরুরি তা সরকারও মনে করে। তবে, নির্বাচনের জন্য যে পরিবেশ দরকার, যে প্রতিষ্ঠানগুলো জড়িত, সে প্রতিষ্ঠানগুলো যখন আত্মবিশ্বাসী হবেন যে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তারা প্রস্তুত, তখনই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন।

এর আগে চলমান রাজনৈতিক সংকটের সমাধান খুঁজতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের নিজের বাসভবন যমুনায় আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা। বিভিন্ন দলের ২০ জন প্রতিনিধির সঙ্গে দুই দফায় বৈঠক করেন সরকারপ্রধান। প্রথম দিনের সংলাপে শনিবার বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। 

্রিন্ট

আরও সংবদ