খুলনা | সোমবার | ২৬ মে ২০২৫ | ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

দেশে গত ১৬ বছর দুর্নীতির চাষাবাদ হয়েছে : কমিশনার হাফিজ

দুদকের গণশুনানিতে উঠে আসা ১১৮ অভিযোগের মধ্যে ৫৭-৫৮টি তৎক্ষণাৎ নিষ্পত্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:৩৯ এ.এম | ২৬ মে ২০২৫


দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) হাফিজ আহসান ফরিদ বলেছেন, গত ছয় মাসে আমরা যে পরিস্থিতি দেখলাম তাতে বাংলাদেশের দুর্নীতির অবস্থা ভয়াবহ। এর পরিধি ব্যাপক এবং অত্যন্ত গভীর। কারণ গত ১৬ বছর দুর্নীতির চাষাবাদ হয়েছে এই দেশে। আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া দুর্নীতি রোধ করা অসম্ভব। তিনি রোববার সকালে দুদকের গণশুনানিতে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর আয়োজনে খুলনা সদরে অবস্থিত সরকারি দপ্তর সমূহে সেবাবঞ্চিত ও হয়রানির শিকার নাগরিকদের অভিযোগ বিষয়ে সরাসরি গণশুনানি রোববার সকালে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। 
অনুষ্ঠানে ভুক্তভোগীরা সরাসরি অভিযোগ উপস্থাপন করেন যার মধ্যে ঘুষ, হয়রানি, অনিয়ম ও দীর্ঘসূত্রিতার মতো বিষয় উঠে আসে। দুদক এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে তাৎক্ষণিক তদন্তের নির্দেশনা বা প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। গণশুনানি উঠে আসা ১১৮টি অভিযোগের মধ্যে ৫৭-৫৮টি তৎক্ষণাৎ নিষ্পত্তি করা হয়।
এসময় খুলনাবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহসান ফরিদ বলেন, কোনো জায়গায় ঘুষ দেবেন না। আপনারা প্রতিবাদ করেন। আমি আপনাদের এটা বলছি না-আমাদের বাচ্চারা যারা নিরস্ত্র ভাবে বুক পেতে দাঁড়িয়েছিল তাদের মতো আপনারাও দাঁড়ান। আমি বলছি না-আপনারাও রক্ত দেন। আমি শুধু বলছি, ঘুষ দেবেন না। আপনারা প্রতিবাদ করেন। এতে আপনাদের কষ্ট হবে, কাজ একটু দেরিতে হবে। কিন্তু সে আর ঘুষ খেতে পারবে না।
সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশের একটা সংস্কৃতি চালু হয়েছে, সেবা গ্রহীতার টাকায় সেবাদাতা পালিত। মনে হয়-যে সেবাদাতা হলো-প্রভু, আর সেবা গ্রহীতা হলো-ভৃত্ত। এই সংস্কৃতি পরিহার করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা সবাই দুর্নীতি বন্ধে প্রতিশ্র“তি দিচ্ছি, একই সাথে মানসম্মত সেবা প্রদানের নিশ্চয়তাও দিতে হবে।
গণশুনানিতে প্রধান অতিথি দুদকের কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী বলেন, জনগণের দেওয়া ট্যাক্সের টাকায় সরকারি চাকুরিজীবীদের বেতন হয়। যাদের টাকায় আমাদের বেতন হয়, আমরাই আবার তাদের প্রভু সেজে যাই। সরকারি কর্মচারীরা আল­াহর দেওয়া যোগ্যতার সম্পূর্ণ ব্যবহার করে ইমানদারি সঙ্গে নাগরিকদের সেবা দিতে দায়বদ্ধ। যে সৃষ্টিকর্তাকে ভয় করে, সে জ্ঞানত অন্যায় করতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, আমরা নিজ নিজ অবস্থানে প্রত্যেকেই বিচারক। যদি আমরা আমাদের পরিবারে নিজের আয়ের চেয়ে বেশি উপহার বা তৈজসপত্র দেই তবে সন্তানদের সামনে কীভাবে জবাবদিহি করবো। আমরা নিজে সৎ থাকব এবং পরিবারবর্গকে সৎ পথে রাখব।
তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তোমরা হতাশ হবে না। পরিবারকে যেমন সেবা করতে হবে, তেমনি লব্ধ জ্ঞান প্রজাতন্ত্রের কাজে ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনে উদ্যোক্তা হতে হবে।
সরকারি কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমরা সবাই দুর্নীতি বন্ধে প্রতিশ্র“তি দিচ্ছি, একই সঙ্গে মানসম্মত সেবা প্রদানের নিশ্চয়তাও দিতে হবে।
অনুষ্ঠান শেষে দুদক কর্মকর্তারা জানান, ভবিষ্যতেও এ ধরনের শুনানি অব্যাহত থাকবে এবং যে কোনো দুর্নীতির অভিযোগে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে সেবা পেতে হয়রানি, ঘুষ, দুর্নীতির শিকার সেবা প্রত্যাশী জনসাধারণ এবং সেবা প্রদানকারী সরকারি দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে এ গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত জানান দুদকের খুলনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোঃ আবদুল ওয়াদুদ। এ সময় বিভাগীয় কমিশনার মোঃ ফিরোজ সরকার, দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মোঃ আক্তার হোসেন, পুলিশের খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি মোঃ রেজাউল হক, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ জুলফিকার আলী হায়দার ও পুলিশ সুপার টি এম মোশাররফ হোসেন বক্তৃতা করেন। গণশুনানিতে খুলনা সদরে অবস্থিত সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, ব্যাংক ও অর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী, বিশিষ্ট নাগরিক ও অভিযোগ উত্থাপনকারী ব্যক্তিরা  উপস্থিত ছিলেন।
উলে­খ্য, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারুণ্যের একতা, গড়বো আগামীর শুদ্ধতা’ এই শ্লোগান নিয়ে খুলনা মহানগরে সেবা বঞ্চিত ও হয়রানির শিকার নাগরিকদের অভিযোগ সরাসরি শুনতেই এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দুদক। বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে সেবা পেতে ঘুষ, দুর্নীতি, হয়রানির শিকার ব্যক্তিরা অনুষ্ঠানে তাদের অভিযোগ তুলে ধরেন। উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে দুদক কর্তৃক তাৎক্ষণিক তদন্ত করার নির্দেশ বা উপযুক্ত সিদ্ধান্ত  প্রদান করা হয়।

্রিন্ট

আরও সংবদ