খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২৯ মে ২০২৫ | ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

‘সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর কোনো মতপার্থক্য হয়নি’ : ‘কেউ মব তৈরি করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে’

করিডরের সঙ্গে বর্ডারে আরসার মুভমেন্টের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই : সেনা সদর

খবর প্রতিবেদন |
০১:৫০ এ.এম | ২৭ মে ২০২৫


সরকার ও সেনাবাহিনী একসঙ্গে কাজ করছে বলে জানিয়েছে সেনা সদর। সোমবার দুপুরে সেনানিবাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশন্সের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ নাজিম-উল-দৌলা।
করিডরের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না এবং এ বিষয়ে সেনাবাহিনী কী ভাবছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করিডরের বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। এটা আমাদের দেশ, আমাদের সবার দেশ। এই দেশের স্বার্থ ও সার্বভৌমত্বের সঙ্গে আমরা সবাই জড়িত। এ দেশকে ভালো রাখতে আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে। সুতরাং আমি মনে করি না যে এই বিষয়টা এমন একটি পর্যায়ে গেছে, যেভাবে বিষয়টা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
মোঃ নাজিম-উল-দৌলা বলেন, সরকার ও সেনাবাহিনী খুব সুন্দরভাবে ওতপ্রোতভাবে একে অপরের সম্পূরক হিসেবে কাজ করছে। আমরা প্রতিনিয়ত সরকারের সঙ্গে কাজ করছি এবং সরকারের নির্দেশে দায়িত্ব পালন করছি। সরকার ও সেনাবাহিনী খুব সুন্দর ভাবে একে অপরের সহযোগিতায় কাজ করছে। করিডরের সঙ্গে বর্ডারে আরসার মুভমেন্টের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। দুইটা বিষয় আলাদা। সরকার ও সেনাবাহিনী ভিন্ন ভিন্ন চিন্তা করছে, এ রকম যেন আমরা না ভাবি। সরকার ও সেনাবাহিনী একসঙ্গে কাজ করছে, ভবিষ্যতেও আমরা আরও সুন্দর ভাবে কাজ করে যাব বলে দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি।
চট্টগ্রামের একটি কারখানায় সন্ত্রাসী সংগঠন কেএনএফের পোশাক পাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশন্সের পরিচালক বলেন, কেএনএফ মূলত বম কমিউনিটি ভিত্তিক সংগঠন। পোশাক পাওয়ার সংবাদটি একটি বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ। সংগঠনটির অস্ত্রের ব্যবহার আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে দেখছি। তাদের আক্রমণে আমাদের কয়েকজন সেনাসদস্য মৃত্যুবরণ করেছেন এবং আহত হয়েছেন। সেই প্রেক্ষাপটে নিশ্চয়ই এটা ভালো কোনো খবর নয়। 
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সক্রিয় নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ), যা বম পার্টি নামেও পরিচিত। এই সংগঠনের সদস্যদের পোশাক উদ্ধারের বিষয়ে ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, কুকি চীনের (কেএনএফ) ৩০ হাজার পোশাক পাওয়া গেছে, এটা সামাজিক মাধ্যমে এসেছে, এটা বস্তুনিষ্ঠ। আমরা বিষয়টি আমলে নিয়েছি। খুঁজে দেখার কাজ করছি। বম স¤প্রদায়ের মানুষই আছে ১২ হাজার। তাই এই ৩০ হাজার পোশাক এই সংগঠনেরই কি না তা খুঁজে দেখা হচ্ছে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ নাজিম-উল-দৌলা আরও বলেন ৩০ হাজার ইউনিফর্ম পাওয়ার ছবি দেখার সঙ্গে সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, এটার আসলে ব্যাপারটা কি এ বিষয়ে আমাদের জানতে হবে। এ পোশাক কাদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল, সেটা আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। এটা নিয়ে কাজ চলছে। এ সংগঠনের সঙ্গে অন্যদের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। কিন্তু বম কমিউনিটির জনসংখ্যা মাত্র ১২ হাজার।  সুতরাং এই ৩০ হাজার ইউনিফর্ম কেএনএফের জন্য ছিল কি না সেটা খুঁজে দেখার সুযোগ আছে। এ বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি। বিষয়টি দেশের নিরাপত্তার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বিষয়টিকে আমরা হালকাভাবে নিইনি, নিশ্চিত করে বলতে পারি। এ ব্যাপারে যতটুকু ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, আমাদের দায়িত্বের মধ্যে যেটা পড়ে, সেটা আমরা করবো।
বাংলাদেশ একটা ছায়া যুদ্ধের মধ্যে আছে, সেটা বিভিন্ন মাধ্যমে বলা হচ্ছে। আরসা বাংলাদেশের লোকজনকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশে ঢুকে তারা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অনেক সময় বিভিন্ন মাধ্যমে খবর আসছে তাদের কাছে ভারি ভারি অস্ত্র আছে, তাদের কাছে এই অস্ত্র কোথায় থেকে আসছে। এসব বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে আসলে বর্ডার কি আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে নাকি আমরা বর্ডার ক¤েপ্রামাইজ করেছি-এমন প্রশ্নের জবাবে মোঃ নাজিম-উল-দৌলা বলেন, আমি যদি এক লাইনে উত্তর দিতে চাই, অবশ্যই আমরা বর্ডার ক¤েপ্রামাইজ করিনি। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের গায়ে বিন্দুমাত্র শক্তি থাকবে, আমরা কখনোই বর্ডার ক¤েপ্রামাইজ করব না। এটা আমাদের দেশ আর দেশকে আমরা যেকোনো মূল্যে রক্ষা করব। এটা আপনার দেশ, এটা আমাদের দেশ। কোনো একটা স¤প্রদায়ের মাধ্যমে এ দেশের সার্বভৌমত্ব বিনষ্ট হতে পারে, সেটা কখনোই হবে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার বর্ডার অত্যন্ত জটিল একটি পরিস্থিতির মুখে আছে। মিয়ানমারের সরকারের অস্তিত্ব বিলীনের মুখে। আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যটিকে প্রায় দখল করে নিয়েছে। তাদের দখলে রাখাইন রাজ্যের ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ রয়েছে। আরাকান আর্মি কোনো অথরাইজ সংগঠন নয়। এ জায়গাটাতে না আছে কোনো সরকারের অস্তিত্ব, না আছে আরাকান আর্মিকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টা। এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের বর্ডারের পরিস্থিতি যেকোনো সময়ের তুলনায় সংবেদনশীল। সেক্ষেত্রে এ সময়ে ওই এলাকায় কিছু সশস্ত্র গ্র“পের মুভমেন্ট করাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তার মানে এই নয় যে এটাকে আমরা স্বীকৃতি দেব বা দেখেও না দেখার ভান করব। এ ধরনের ঘোলাটে পরিস্থিতিতে এ ধরনের মুভমেন্ট হতে পারে কিন্তু আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, বিজিবি প্রাথমিকভাবে ডেফিনেটলি সাপোর্টেড বাই আর্মি, আমরা এই বর্ডারে প্রচণ্ডভাবে নজরদারি রাখছি। এখানে যেন সার্বভৌমত্ব বিঘিœত হতে না পারে, এমন পরিস্থিতি যেন সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে আমরা ওয়াকিবহাল আছি। তবে অবশ্যই এই মুভমেন্টটি উদ্বেগের বিষয় এবং কাক্সিক্ষত নয়।
সীমান্তে পুশইন কোনো ভাবেই কাম্য নয় জানিয়ে ব্রিফিংয়ে বলা হয়, আমরা বসে থাকবো এটা ভাবার কারণ নেই। এই পরিস্থিতি বিজিবিই নিয়ন্ত্রণ করছে। আমাদের সহায়তা লাগলে প্রয়োজনে সেনাবাহিনী সেখানে যাবে।
মব তৈরির বিষয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে ব্রিফিংয়ে বলা হয়, কেউ মব তৈরি করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে সেনাবাহিনী তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গত ৪০ দিনে সেনাবাহিনী ২৪১টি অবৈধ অস্ত্র ও ৭০৯ রাউন্ড গোলাবারুদ এবং আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত সর্বমোট ৯ হাজার ৬১১টি অবৈধ অস্ত্র ও ২ লাখ ৮৫ হাজার ৭৬১ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। এছাড়াও গত এক মাসে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত মোট ১ হাজার ৯৬৯ জনকে এবং এ পর্যন্ত সর্বমোট ১৪ হাজার ২৬৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যাদের মধ্যে কিশোর গ্যাং, তালিকাভুক্ত অপরাধী, অপহরণকারী, চোরাচালানকারী, প্রতারক ও দালাল চক্র, চাঁদাবাজ, ডাকাত, ছিনতাইকারী, ইত্যাদি উলে­খযোগ্য।
ব্রিফিংয়ে বলা হয়, গত ২০ মে ভাষানটেক এলাকায় একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ৪টি বিদেশি পিস্তল, ২৮ রাউন্ড গুলিসহ দুর্র্ধর্ষ সন্ত্রাসী হিটলু বাবুসহ তার গ্যাং এর দশ জন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যার ফলে স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্থি ও নিরাপত্তা বিরাজ করছে।
অন্যদিকে সোমবার দুপুরে সেনা সদরে লেঃ কর্নেল মোঃ শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে বলেন দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দায়িত্ব। সেনাবাহিনী অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের নির্দেশনা মেনেই সেই দায়িত্ব পালন করছে। সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর কোনো মতপার্থক্য হয়নি।
সেনা কর্মকর্তা বলেন, গত ৫ আগস্টের পর থেকে সেনাবাহিনী দেশের স্বার্থে সবার সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করছে। সেনাবাহিনী তাদের দায়িত্ব অব্যাহত রাখবে।
লেঃ কর্নেল মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, সীমান্তের নিরাপত্তায় সেনাবাহিনী কোনো ছাড় দেবে না। বাংলাদেশ-মিয়ানমার করিডোর একটি স্পর্শকাতর বিষয়। নিরাপত্তা বিঘিœত হয় এমন কোনো কাজে সেনাবাহিনী সম্পৃক্ত হবে না।
সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, আমাদের যতক্ষণ শক্তি থাকবে সীমান্তে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা কাজ করব। আরসা বাহিনী অস্ত্র নিয়ে টহল দিচ্ছে। এটা উদ্বেগের বিষয়। সীমান্ত পরিস্থিতি এখন বেশ সংবেদনশীল, আমরা সতর্ক আছি।
 

্রিন্ট

আরও সংবদ