খুলনা | শনিবার | ৩১ মে ২০২৫ | ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান : বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদ ও ঐক্যের প্রতীক

|
০১:১০ এ.এম | ৩০ মে ২০২৫


শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ একটি যুগান্তকারী ধারণা, যা আমাদের জাতিগত পরিচয়ে নতুন একমাত্রা যুক্ত করেছে। মুক্তিযুদ্ধের পর, যখন পুরো জাতি একটি সত্তার সন্ধানে ছিল, তখন জিয়া তাঁর সাহসী ও বিচক্ষণ নেতৃত্বের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদকে একটি বৃহত্তর দৃষ্টিকোণে উপস্থাপন করেন। তাঁর শব্দগুলো, ‘আমরা ধর্মে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান; ভাষায় বাঙালি, কিন্তু একত্রে আমরা বাংলাদেশি’, আজও আমাদের আবেগতাড়িত করে। এই প্রথাগত চিন্তা আমাদের বিভক্তির প্রাচীর ভেঙে, বাঙালি ও মুসলিম পরিচয়ের সীমানা পেরিয়ে একটি সম্পূর্ণ জাতির পরিচয় প্রতিষ্ঠা করেছে।  
স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের অসামান্য দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের ভেদাভেদ ভুলে একত্রিত হওয়ার আহŸান জানায়, যেখানে ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্য সমন্বিত হয়ে একজাতীয়তার ধারণা প্রতিষ্ঠা করে। তাঁর নেতৃত্বের মূর্তিমান ছবি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, কিভাবে এক শ্বাসরুদ্ধকর ইতিহাসের পটভূমিতে আমরা স্বাধীনতার সূর্য উজ্জ্বল করেছি। আজকের বাংলাদেশে, যখন আমরা সামনের দিকে এগুচ্ছি, জিয়ার আদর্শ আমাদের জন্য একটি প্রেরণার উৎস হয়ে আছে, যা আমাদের ঐক্য ও মানবিকতাকে আরও মজবুত করে। বাঙালি জাতির এক চরম ক্রান্তিলগ্নে তাঁর আবির্ভাব হয়েছিল অসীম সাহসিকতা ও প্রজ্ঞা নিয়ে; চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে তাঁর স্বাধীনতার ঘোষণা জাতিকে উজ্জীবিত করেছিল, একত্রিত করেছিল এক লক্ষ্য অভীষ্টে। মুক্তিযুদ্ধে যোদ্ধা হিসেবে তাঁর অবদান, জেড ফোর্সের নেতৃত্ব, এগুলো ছিল তাঁর অদম্য সাহসের প্রতীক। শহীদ জিয়া যখন স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, তখন কেউ ধর্ম বর্ণ কোনোকিছুর দিকে তাকায়নি, তাঁর ঘোষণার সাথে ঐক্যমত পোষণ করে একটি স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ে।
লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে তিনি যে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা আজও আমাদের হৃদয়ে গেঁথে রয়েছে। স্বাধীনতার পর, যখন দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছিল সাহসী নেতৃত্বের উপর, তখন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর উপপ্রধান পদে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে দেশের নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করেছেন। তাঁর নেতৃত্বের সেই সময়ের নিঃস্বার্থ ত্যাগ ও সাহস আমাদের অনুপ্রাণিত করে, যেন তিনি ছিলেন আমাদের আশার আলো, যার সাহস ও নেতৃত্বের কথা জাতির ইতিহাসে চিরকাল অমলিন থাকবে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর দেশের পরিস্থিতি চরম সংকটময় হয়ে ওঠে। শহিদ জিয়া বন্দী হলে সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়, এবং ঠিক তখনই ৭ নভেম্বর সিপাহি জনতার বিপ্লব ঘটে। জনগণের সমর্থন নিয়ে তিনি বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। এরপর রাষ্ট্রপতি পদে নিযুক্ত হয়ে তিনি গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম পুনরুজ্জীবিত করেন এবং ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৮১ সালে শহিদ হওয়ার পরও তাঁর আদর্শ আজও আমাদের মধ্যে বিদ্যমান কারণ তিনি চার বছরের রাষ্ট্র পরিচালনায় আমাদের এগিয়ে দিয়েছেন চার দশকেরও বেশী সময়।
এই সংগ্রামময় পথে খালেদা জিয়া দলের হাল ধরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আপ্রাণ চেষ্টা চালান। ১৯৯১ সালে জনগণের ভোটে দল ক্ষমতায় ফিরে আসে, এবং এর মাধ্যমে জনগণের মুক্তির নতুন অধ্যায় শুরু হয়। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আত্মত্যাগ ও আদর্শ আজও আমাদের পথনির্দেশ করছে, জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রেরণার মূল কান্ডারি হিসেবে।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আমাদের শেখান যে একটি জাতির পরিচয় কেবল একাধিক উপাদানে নয়, বরং সেগুলোর সমন্বয়ে গড়ে ওঠে। তার চিন্তার মাধ্যমে আমরা আজ বুঝতে পারি, আমাদের শক্তি আমাদের বৈচিত্র্যে; এবং এই বৈচিত্র্যের মধ্যে দিয়ে আমরা একসাথে গড়ে তুলতে পারি একটি সমৃদ্ধ ও সম্মানজনক বাংলাদেশ। তাঁর আদর্শ আজও আমাদের প্রেরণা দেয়, যেন আমরা নিজেদের বাংলাদেশি হিসেবে গর্ব অনুভব করতে পারি।
বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ আমাদের ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে, যেখানে আমরা একে অপরের বিভিন্নতাকে সম্মান করি এবং সবার অধিকারকে সমান গুরুত্ব দিই। লারমার বক্তব্য আমাদের মনে করিয়ে দেয়, জাতীয় পরিচয় নির্মাণের পেছনে রয়েছে গভীর ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধের সমন্বয়। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও জাতীয়তাবাদ রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে প্রবলভাবে স্থান পেয়েছে, যা আমাদের সা¤প্রদায়িক ঐক্যকে আরও মজবুত করেছে। তাঁর চিন্তা ও দর্শন আজও আমাদের হৃদয়ে জীবন্ত, আমাদের পথপ্রদর্শক-একটি গর্বিত ও স্বাধীন জাতির স্বপ্নের চেতনায়। জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ কেবল রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নয়, এটি একটি আন্দোলন, যা আজও আমাদের সামনে প্রেরণা জোগায়।

্রিন্ট

আরও সংবদ