খুলনা | রবিবার | ০১ জুন ২০২৫ | ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

চোখ বেঁধে আনা হয় সীমান্তে, পরে পুশইন

খবর প্রতিবেদন |
০২:১২ এ.এম | ৩১ মে ২০২৫


চোখ ও হাত বেঁধে সীমান্তে এনে লোকজনকে বাংলাদেশে ঠেলে দিচ্ছে (পুশইন) ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। দেশের তিনটি সীমান্তপথ দিয়ে শুক্রবার অর্ধশত লোককে বাংলাদেশে প্রবেশ করানো হয়েছে। ফেনীর ছাগলনাইয়ার মটুয়া, হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের কালেঙ্গা ও খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার আম বাগান এলাকা দিয়ে অন্তত ৪৯ জনকে পুশইন করে বিএসএফ। পুশইনের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে নারী, পুরুষদের সঙ্গে শিশুরাও রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। বাংলাদেশ সীমান্তে আসার পর তাদের বিজিবি আটক করে।  
বাংলাদেশে যেটি পুশইন, ভারতের দিক থেকে তা আবার পুশ-ব্যাক। ভারতের মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, ভারত থেকে এভাবে পুশ-ব্যাক করে দেওয়া সম্পূর্ণই আইন বহির্ভূত কাজ।
ফেনী সীমান্ত দিয়ে ১৩ জনকে পুশইন : বৈরী আবহাওয়ার সুযোগে ফেনীর ছাগলনাইয়ার মটুয়া সীমান্ত দিয়ে ১৩ জনকে পুশইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। ভোর রাত ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জানায়, সকাল ৯টার দিকে ফেনী ব্যাটালিয়নের (৪ বিজিবি) ছাগলনাইয়া বিওপির টহলদল মটুয়া এলাকায় একটি পরিত্যক্ত ঘরের মধ্যে ১৩ জনকে দেখতে পায়। তদের দেখে সন্দেহ হলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের মধ্যে পুরুষ চারজন, নারী তিনজন ও শিশু ছয়জন।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা বিভিন্ন সময় ইট-ভাটার কাজ করার জন্য ভারতে প্রবেশ করেন। রাত ৩টার দিকে বৈরী আবহাওয়ার সুযোগে বিএসএফ তাদের হাত ও চোখ বেঁধে নিয়ে আসে। পরে বাঁধন খুলে তাদের বাংলাদেশে পুশইন করে।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, রাতে অন্ধকার থাকায় এবং এলাকা না চেনায় ওই ১৩ জন মটুয়া এলাকায় পরিত্যক্ত একটি বাড়িতে অবস্থান করেন। পরে তাদের আটক করা হয়।
তাদের ছাগলনাইয়া থানায় নেওয়ার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। জেলা প্রশাসনকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। বিজিবি জানায়, কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোশাররফ হোসেন বিএসএফ কোম্পানি কমান্ডারের কাছে মৌখিক প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং প্রতিবাদলিপি পাঠানোর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
কালেঙ্গা সীমান্ত দিয়ে ২২ জনকে পুশইন : হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার কালেঙ্গা সীমান্ত দিয়ে আরও ২২ জনকে বাংলাদেশে পুশইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। ভোরের দিকে তাদের পুশইন করা হয়। তাদের মধ্যে আট নারী, নয় পুরুষ ও পাঁচটি শিশু রয়েছেন।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কালেঙ্গা সীমান্ত ফাঁড়ির কোম্পানি কমান্ডার জাকারিয়া ইবনে কাদের সংবাদ মাধ্যমকে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, পুশইন করা ১৭ নারী-পুরুষ ভারতের হারিয়ানার ইটভাটায় কাজ করতেন। সেখান থেকে তাদের ধরে বাসে করে কালেঙ্গা সীমান্তে এনে কালো কাপড় দিয়ে চোখ বেঁধে ছেড়ে দেয় বিএসএফ। পরে বাংলাদেশে প্রবেশ করলে বিজিবি তাদের আটক করে। একটি বিদ্যালয়ে রেখে তাদের খাবার দেওয়া হচ্ছে।
বিএসএফ এর আগে গত ২৬ মে একই সীমান্ত দিয়ে আরও ১৯ জনকে বাংলাদেশে পাঠায়। এ সীমান্ত দিয়ে দুই দফায় পুশইনের সংখ্যা ৪১। এর আগের ১৯ জনকে হেলিকপ্টারে করে সীমান্তে এনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল।  
মাটিরাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে আরও ১৪ জনকে পুশইন : খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে আরও ১৪ জনকে পুশইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। ভোরে মাটিরাঙ্গার তাইন্দং ইউনিয়নের আম বাগান সীমান্ত এলাকা দিয়ে তাদের পুশইন করা হয়। পরে তাদের আটক করে বিজিবি।  তাদের ১২ জন কুড়িগ্রাম ও দুইজন দিনাজপুরের বাসিন্দা বলে জানা গেছে। তারা ২৩ বিজিবি যামিনীপাড়া ব্যাটালিয়নের তত্ত¡াবধানে ডিপিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থান করছেন।
আটককৃতরা জানান, ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে ইট ভাটায় কাজ করতেন। সেখান থেকে আটক করে বিমানে করে তাদের ত্রিপুরার আগরতলায় নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে জোরপূর্বক বাংলাদেশে প্রবেশ করানো হয়।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার জানান, যাদের পুশ-ইন করা হয়েছে, তারা কোন দেশের নাগরিক তা যাচাই-বাছাই চলছে।
এ নিয়ে চলতি মাসে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে মোট ১৩২ জনকে ঠেলে দিয়েছে ভারত। যাদের মধ্যে ১১৮ জনকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

্রিন্ট

আরও সংবদ