খুলনা | শনিবার | ০৭ জুন ২০২৫ | ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বন বিভাগ বিকল্প প্রস্তাব দিলেও ভারত মানছে না

সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে দিয়ে ভারতের নৌযান চলাচলের রুট থাকায় হুমকীর মুখে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০২:১৯ এ.এম | ০১ জুন ২০২৫


সুন্দরবনের অভ্যয়ারণ্যে মধ্য দিয়ে ভারতের জাহাজ চলাচলের রুট ব্যবহৃত হওয়ায় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়েছে। অত্যাধিক নৌযান চলাচলের কারণে শব্দ দূষণ ও পানি দূষণ হচ্ছে এবং খালসমূহ পাড় ভেঙ্গে সুন্দরবনের ক্ষতি হচ্ছে।  ফলে সুন্দরবনের বণ্যপ্রাণির আবাসস্থল হুমকীর মুখে এবং বন্যপ্রাণি প্রজননের উপর বিরুপ প্রভাব পড়ছে। সুন্দরবন কর্তৃপক্ষ এই রুট পরিবর্তন করে বিকল্প প্রস্তাব করে একাধিকবার পত্র দিলেও কার্ষকর কিছুই হয়নি। একই ভাবে এই রুট বৃহৎ  চোরাচালানীর রুট পরিণত হয়েছ। বিষয়টি নিয়ে এখনই পদক্ষেপ না নিলে সুন্দরবনের অভয়ারণ্য  বিলুপ্তি হয়ে যাবার সম্ভবনা রয়েছে। 
১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট এন্ড ট্রেড অনুযায়ী সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের শিবশা-আড়ুয়া শিবসা আড়পাঙ্গাশিয়া হয়ে বজবজা-আড়াইবেকি-দোবেকি কচিকাটা খাল হয়ে রায়মঙ্গল রুট ব্যবহার করে ভারতের পশ্চিমবাংলা চারটি নদী বন্দরে ভারতের মালবাহী লাইটার জাহাজ ও কার্গা চলাচল করে। এই রুটে জাহাজ/ কার্গো চলাচলের কারণে শিবসা ডালফিন অভয়ারণ্য ও পানখালী ডলফিন অভয়ারণ্যের মধ্যে পড়েছে। এর ফলে সুন্দরবনের বন্যপ্রাণির আবাসস্থল হুমকীর মুখে এবং এতে বন্যপ্রাণির প্রজননের উপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে ।
খুলনা বিশ্ব বিদ্যালয়ের পরিবেশ ডিসিপ্লিনের একাধিক গবেষণায় বিষয়টি উঠে এসেছে বলে জানান, ডিসিপ্লিন প্রধান  প্রফেসর ড আবদুল­াহ হারুন চৌধুরী । তিনি জানান, তাদের একাধিক গবেষনায় বিষয়টি উঠে এসেছে। সুন্দরবর কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। সুন্দরবন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে  অবহিত করে বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্ব না দেয়ায় কার্যকর কিছুই হচ্ছে না। 
খুলনা কাস্টমস হাউস সূত্রে জানা গেছে, ভারত থেকে বাংলাদেশ জলসীমায় প্রবেশ করে ভারতীয় নৌযান আবার ভারতে ফেরত না যাবার ঘটনাও জানিছিলেন আংটিহারা শুল্ক কর্তৃপক্ষ। চোরাচালানীর বড় বড় চালান ধরা পড়ে এই রুটে। খুলনা কাস্টমস কমিশনার আতিকুর রহমান জানান, ভারতীয় জলযান ভারতীয় সীমান্ত পার হয়ে সুন্দরবনের আংটি হারা শুল্ক ফাঁড়িতে রিপোর্ট করে যে, জলযান  বোঝাই পণ্য বাংলাদেশের বিভিন্ন বন্দরে যাবে। সে সময় সেই জলযানে বাংলাদেশী শুল্ক কর্তৃপক্ষ একজন প্রতিনিধি দেয়া হয়। সেটি নির্দিষ্ট বন্দরে গিয়ে পণ্য খালাস, শুল্ক পরিশোধ করে। কিন্তু তাদের লোকবল সংকটের কারণে বেশীর ভাগ জলযানে প্রতিনিধি দেয়া সম্ভব হয় না। 
সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ জেড এএম হাসানুর রহমান জানান, গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর একই ভাবে পত্র দেয়া হয়েছে। সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহাসিন হোসেন লিখিতভাবে অভিযোগ করেন ভারত বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত প্রটোকল লংঘন করে জাহাজ চলাচল করে। বিকল্প রুট হিসাবে প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। এই প্রস্তাবে বলা হয়েছে যে বর্ণিত রুটটি সুন্দরবনের শিবসা ডলফিন অভয়ারণ্য এবং পানখালী ডলফিন অভয়াণ্যর মধ্যে পড়েছে। এই রুটে জলযান চলার কারণে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং অত্যাধিক জলাযান চলার কারণে শব্দ দূষণ ও পানি দূষণ  এবং খাল সমূহের পাড় ভেঙে সুন্দরবনের ক্ষতি হচ্ছে। ফলে সুন্দরবনের বন্যপ্রাণির আবাসস্থল হুমকীর মুখে এবং বন্যপ্রাণি প্রজননের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত প্রটোকল লংঘন করে জাহাজ চলাচল বন্ধ করার এখতিয়ার বন বিভাগের নেই। 
গত ২০২২ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ও ২০২৩ সালের ১১ অক্টোবর দু’টি পত্রে বলাহয়, বিকল্প রুট হিসাবে মোংলা-পশুর মজজাত-আকরাম পয়েন্ট হয়ে অফসোর রুট ব্যবহার করে হাড়িভাঙ্গা নদী রায়মঙ্গল নদী হয়ে ভারতের বন্দরে যাতায়াতের একটি প্রস্তবানা উর্ধতন কর্তৃপক্ষর নিকট প্রেরণ করা হয়েছে। তবে বিকল্প রুটটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একাধিক মন্ত্রাণালয়ের যৌথ সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।
ভারতের সাথে বাংলাদেশের প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট চুক্তি থাকলেও এটি মূলত কার্ষকরি হয় বিগত আ’লীগ সরকার প্রথম ১৯৯৬ সালে ক্ষতমায় আসার পর। অথচ সুন্দরবনের মধ্যে সীমান্ত এলাকায় নৌ বাহিনী বা কোস্ট গার্ড টহল থাকেনা অভয়ারণ্যের কারণে। ফলে টহলবিহীন এই এলাকায় বড় বড় চোরাচালানী ধরা পড়েছে না।

্রিন্ট

আরও সংবদ