খুলনা | শুক্রবার | ০৬ জুন ২০২৫ | ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

অনুদান ছাড়া ঘাটতি ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা : ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ই বাজেট প্রস্তাব পাস হবে ৩০ জুন ১ জুলাই থেকে শুরু হবে নতুন অর্থবছর

গণঅভ্যুত্থানে আ’লীগ সরকার পতনের পর প্রথম ব্রিফকেস বিহীন বাজেট

খবর প্রতিবেদন |
০১:৫৪ এ.এম | ০৩ জুন ২০২৫


ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আ’লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম বাজেট সোমবার ঘোষণা করা হয়। প্রতিবছর বাজেটকে কেন্দ্র করে থাকে নানান আয়োজন। প্রধানমন্ত্রী বা সরকার প্রধানের সঙ্গে ব্রিফকেস হাতে অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপন করতে আসতেন। তবে এবার ভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থাপন করা হলো ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট।
সংসদ না থাকায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। গতকাল বিকেল তিনটায় জাতির উদ্দেশ্যে অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রথম ও দেশের ইতিহাসে ৫৪তম বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) পাশাপাশি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোও তা সরাসরি স¤প্রচার করে। যেহেতু এবারের বাজেট প্রস্তাবনা আগে ধারণ করা এবং জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হয়নি, এ কারণে এবারের বাজেটে ব্রিফকেসের মতো এ ধরনের আনুষ্ঠানিকতা রাখা হয়নি।
আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হচ্ছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম। বিশাল অংকের এ বাজেটের ঘাটতি ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। আর অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৩ দশমিক ৬ শতাংশ।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম আগের বছরের তুলনায় বাজেটের আকার কমলো। এ বাজেটে অনুদান ছাড়া ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। এটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম বাজেট। এর আগে সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা মোঃ আজিজুল ইসলাম ২০০৭-০৮ ও ২০০৮-০৯ অর্থবছরের বাজেট বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারের মাধ্যমে ঘোষণা করেছিলেন।
গত অর্থবছরে (২০২৪-২৫) ইসির সংশোধিত বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ১৪১ কোটি ৮৫ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছরে অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ইসির সংশোধিত বাজেট ছিল ৪ হাজার ৭৬৯ কোটি ৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। এর আগের অর্থবছরে (২০২২-২৩) সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটির সংশোধিত বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৪২৩ কোটি ১৩ লাখ ৫২ হাজার টাকা।
সম্পদের সুষম বণ্টন ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে অর্থ উপদেষ্টা যে বাজেট প্রস্তাব উপস্থান করেন, সেখানে অনুদান ছাড়া ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। অনুদানসহ সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছর ৪ হাজার কোটি টাকা অনুদান পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
এই ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশি ঋণ পরিশোধ করা হবে ৩৯ হাজার কোটি টাকা। এতে নিট বৈদেশিক ঋণ দাঁড়াবে ৯৬ হাজার কোটি টাকা।
২০২৫-২৬ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ঋণ নেওয়া হবে এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক থেকে নেওয়া হবে এক লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংক বহির্ভূত ঋণ নেওয়া হবে ২১ হাজার কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার।
প্রস্তাবিত বাজেটে ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ এক লাখ কোটি টাকা। এছাড়া বৈদেশিক ঋণের সুদ ২২ হাজার কোটি টাকা।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর-বহির্ভূত কর ধরা হয়েছে ১৯ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া কর ছাড়া অন্য খাত থেকে পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৬ হাজার কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা। পরিচালন ব্যয়ের মধ্যে আবর্তক ব্যয় ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা। এছাড়া দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। পাশাপাশি ৩৬ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা ধরা হয়েছে মূলধন ব্যয় বাবদ।
আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে স্কিমে ব্যয় হবে ৫ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। এডিপি বহির্ভূত বিশেষ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি (এডিপি বহির্ভূত) ও স্থানান্তরে ২ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
বাজেট প্রস্তাবনা: আকার ও বরাদ্দ : অর্থ উপদেষ্টা ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য মোট সাত লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের বাজেট প্রস্তাব করেছেন, যা জিডিপির ১২.৭ শতাংশ। এর মধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট পাঁচ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন।আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে মোট পাঁচ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার, যা জিডিপির ৯ শতাংশ। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে চার লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য উৎস হতে ৬৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করার চিন্তা রয়েছে সরকারের।
বাজেট ঘাটতি ও অর্থায়ন : ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে দুই লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৩.৬ শতাংশ।
প্রস্তাবিত বাজেটে মোট ঘাটতির মধ্যে এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস হতে এবং এক লাখ এক হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক উৎস হতে পূরণ করা হবে।
বাজেট চূড়ান্তকরণ ও কার্যকারিতা : জানা গেছে, সংসদ না থাকায় এবার বাজেট উপস্থাপনে কোনো সংসদীয় আলোচনা বা বিতর্ক হবে না। তবে, ঘোষণার পর প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর জনমত নেওয়া হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় দেশের নাগরিকদের কাছ থেকে মতামত চাইবে। সেই মতামতের ভিত্তিতে বাজেটের চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হবে।
এর আগে রোববার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ বিশেষ বৈঠকে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের অর্থ বিল অনুমোদন করেছে। সেই সঙ্গে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট অনুমোদন করেছেন। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও অন্যান্য উপদেষ্টাগণ উপস্থিত ছিলেন। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের এই বাজেট প্রস্তাব পাস হবে ৩০ জুন। ১ জুলাই থেকে শুরু হবে নতুন অর্থবছর।
বাজেট অধিকতর অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যে অর্থ বিভাগের ওয়েবসাইটে ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ওয়েবসাইটে বাজেটের সব তথ্য ও গুরুত্বপূর্ণ দলিলসমূহ পাওয়া যাচ্ছে। যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এসব দলিল পড়তে ও ডাউনলোড করতে পারবেন। এছাড়া দেশ ও বিদেশ থেকে যে কেউ বাজেট নিজস্ব সম্পর্কে মতামত ও সুপারিশ দিতে পারবেন। ই-মেইলের মাধ্যমে মতামত ও সুপারিশ দেওয়া যাবে।

্রিন্ট

আরও সংবদ