খুলনা | শুক্রবার | ০৬ জুন ২০২৫ | ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কমিটি নিতে আ’লীগের সুবিধাভোগীরা তৎপর

কমিটি না থাকায় খুলনা বিসিডিএসের কার্যক্রমে স্থবিরতা

আশরাফুল ইসলাম নূর |
০১:৫০ এ.এম | ০৫ জুন ২০২৫


কমিটি গঠন না হওয়ায় খুলনা জেলা কেমিস্ট এ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির (বিসিডিএস) কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। ফার্মাসিস্ট ভর্তি ও ক্লাশ, লাইসেন্স প্রদান বন্ধ এবং ব্যবসায়ীদের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে কথা বলতে না পারায় জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীরা পকেট কমিটির গঠনের মধ্য দিয়ে সমিতির নিয়ন্ত্রণ নিতে দৌড়-ঝাঁপ শুরু করেছে। অন্যদিকে ফ্যাসিস্ট বিরোধী ব্যবসায়ীরা সুবিধাভোগীদের বাদ দিয়ে কমিটি গঠনসহ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে।
সমিতির সূত্র জানায়, বিসিডিএস নিয়ন্ত্রিত হতো আওয়ামী লীগ সমর্থিত ব্যবসায়ীদের দ্বারা। শেষ কয়েক বছর খুলনার শেখ বাড়ি থেকেই কমিটি দেওয়া হতো। তাদের মতের বাইরে যারাই যেত তাদের বাদ দিয়ে ঘোষণা করা হতো কমিটি। সর্বশেষ ২০১৪ সালে এই সমিতির দ্বিবার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পরে আর কোনো নির্বাচন হয়নি। এরপর থেকে শেখ বাড়ির হস্তক্ষেপে কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বারবার মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। এই লম্বা সময়ে সরকারি হাসপাতালের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, ওষুধ কোম্পানির কাছে চাঁদাবাজিসহ নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে। ২০২৪ সালের ফেব্র“য়ারি মাসে খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল তার বন্ধু মনিরুজ্জামান খান বাবুকে সভাপতি করেন। অনেকটা অপেশাদারদের নিয়ে করা এই কমিটি নিয়ে সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে ছিল ক্ষোভ ও হতাশা। তবে শেখ পরিবারের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পেতেন না।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর শেখ পরিবার ঘোষিত কমিটির বেশির ভাগ সদস্য সমিতি নিয়ে হইচই বন্ধ করে দেন। এরপর থেকে অনেকটা অচলাবস্থার সৃষ্টি হয় বিসিডিসি ঘিরে।
সমিতির নিয়ন্ত্রণ নিতে এখন দুইটি পক্ষ সক্রিয়ভাবে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এর একটি অংশের নেতৃত্বে রয়েছে আওয়ামী লীগ আমলে শেখ পরিবারের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা বিশেষায়িত হাসপাতাল, খুলনা শিশু হাসপাতালসহ খুলনার অধিকাংশ সরকারি হাসপাতালের ওষুধ সরবরাহ কাজে তার একচেটিয়া প্রভাব রয়েছে। তার নিয়ন্ত্রণে এসব হাসপাতালগুলোতে বছরের পর বছর ওষুধ সরবরাহ সিন্ডিকেট পরিচালিত হতো। তাকে খুলনার স্বাস্থ্য বিভাগের মাফিয়া হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়। তার অন্যতম ব্যবসায়ী সহযোগী ছিলেন শেখ পরিবারের আস্থাভাজন শেখ মোজাম্মেল হক ও শেখ জুয়েলের বন্ধু মনিরুজ্জামান বাবু। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বিএনপি অফিস পোড়ানো মামলা হয় মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে। সাইফুল ইসলাম এখন একটি বড় রাজনৈতিক দলের কতিপয় নেতাকে হাত করে পকেট কমিটি গঠনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন। সর্বশেষ ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয় নিয়ে গত ২২ মে ওষুধ ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে পৃথক মানববন্ধন করে খুলনার ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে সাইফুলের নেতৃত্বে মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন শেখ বাড়ির ঘোষিত জেলা কমিটির ব্যবসায়ী ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ সুজা, প্রতাপ রুদ্র নাথ, হেদায়েতুল ইসলাম পলাশ, জাকির হোসেন, কাজী লুৎফর রহমান মুকুল, ফরিদ উদ্দিন হাওলাদার, আব্দুল মান্নান মোড়ল, আব্দুল লতিফসহ শেখ বাড়ির আশির্বাদপুষ্ট নেতারা।
শেখ পরিবারের ঘনিষ্টতার বিষয় নিয়ে সাইফুল ইসলামের ব্যবহৃত মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
অন্যদিকে যেসব ব্যবসায়ীরা আওয়ামী লীগ আমলে কখনই সমিতির কোন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেনি ও শেখ বাড়ির প্রভাবে কাছে নত শিকার করেনি তারা চাচ্ছে স্বচ্ছ ব্যবসায়ীদের দিয়ে গ্রহণযোগ্য কমিটি গঠন করতে। তবে সাইফুলসহ আওয়ামী লীগ আমলের সুবিধাভোগীদের অগাধ অর্থের কাছে অনেকটা কোনঠাসা। এই গ্র“পের নেতৃত্বে রয়েছেন আজিজুর রহমান। তিনি এর আগে দুই বার নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। আওয়ামী বিরোধী ব্যবসায়ীরা নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের দাবি জানিয়ে আসছে। এছাড়াও সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কবির উদ্দিন বাবলু সরকার পতনের পরেও সমিতির নিয়ন্ত্রন নিতে তৎপর ছিলেন। বর্তমানে তিনি রাজনৈতিক ভাবে কোণঠাসা থাকায় সামনে আসছেন না।
সমিতির কমিটি গঠন নিয়ে সাবেক সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান বলেন, ‘কমিটি না থাকায় জটিলতা তৈরি হয়েছে। যেমন ফার্মসিস্ট ভর্তি অন্যান্য বিভাগে ৫শ’ কোটা পেলেও খুলনায় মাত্র ২০০ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। ক্লাস নেওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ ধরনের সমস্যাগুলো বড় হচ্ছে। সাধারণ ব্যবসায়ীরা চায় ফ্যাসিস্টমুক্ত বিসিডিসি।’ তিনি সাইফুল ইসলামকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘অতিতে যারা শেখ বাড়ির আশির্বাদপুষ্ট হয়ে সব হাসপাতালের টেন্ডার নিয়ন্ত্রন করতো তারাই আবার ভিন্ন মাধ্যম দিয়ে পুনর্বাসন হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।’
জেলা কমিটি গঠনের এই রেষারেষির মধ্যেই খুলনার বড় বাজার হেরাজ মার্কেট ওষুধ ব্যবসায়ী সমিতির কমিটি গঠন করা হয়। যেখানে সভাপতি করা হয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ সুজাকে এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয় বিএনপি নেতা নাজমুল সাকিব পিন্টুকে। ৩১ সদস্যের কমিটির সভাপতিসহ বেশির ভাগই শেখ বাড়ি থেকে ঘোষিত বিগত কমিটির সদস্য, যা নিয়ে বিএনপি নেতারাও ক্ষুব্ধ।
এসব বিষয় নিয়ে সংগঠনের সচিব মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, উভয় পক্ষ আমাদের ওপর নানা চাপ সৃষ্টি করছে। বিষয়টি কেন্দ্রে জানানো হয়েছে। বর্তমান অচলায়তন নিয়ে কেন্দ্রও কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারছে না।

্রিন্ট

আরও সংবদ