খুলনা | শনিবার | ০৭ জুন ২০২৫ | ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আল্লাহর রাহে সর্বোচ্চ ত্যাগের শিক্ষা কুরবানি

প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউসুফ আলী |
০২:০৯ এ.এম | ০৫ জুন ২০২৫


কথায় বলে, ভোগে সুখ নেই, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ। কথাটা কুরবানির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কুরবানির ঈদ আমাদের উৎসর্গ ও ত্যাগের  শিক্ষা দেয়। কুরবানির ঈদে সারা বিশ্বের মুসলমান তাদের প্রিয় পশু কুরবানির মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও রহমত কামনা করবে। আরবি শব্দ আদহা বা আযহার বাংলা প্রতিশব্দ হলো কুরবানি। কুরবানি অর্থ নৈকট্য, উৎসর্গ, বিসর্জন ও ত্যাগ ইত্যাদি। কুরবানি হলো ঈদুল আযহার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। এজন্য এই ঈদের আর এক নাম কুরবানির ঈদ। কুরবানি আমাদের সামনে নিয়ে আসে ত্যাগের এক  প্রকৃষ্ট উদাহরণ। কুরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং ইসলামের একটি  প্রাচীন ঐতিহ্যও বটে। একবার সাহাবীগণ (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ ! এই কুরবানি কি? হুজুর (সাঃ) উত্তর করলেন, তোমাদের পিতা হযরত ইব্র্রাহিম (আঃ) এর সুন্নত। সাহাবীগণ (রাঃ) আবারও প্রশ্ন করলেন, এতে আমাদের কি ছওয়াব রয়েছে ইয়া রাসূলুল্লাহ? হুজুর (সাঃ) জবাব দিলেন, কুরবানির পশুর প্রত্যেক লোমের পরিবর্তে একটি করে নেকি রয়েছে। তারা আবারও জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! পশমওয়ালা পশুদের পরিবর্তে কি হবে? হুজুর (সাঃ) উত্তর করলেন, পশমওয়ালা পশুদের প্রতিটি পশমের পরিবর্তেও একটি করে নেকি রয়েছে (মেশকাত)। 
আমরা সাধারণতঃ আনন্দ-ফূর্তির সময় মহান ¯্রষ্টার কথা বেমালুম ভুলে যায়। কিন্তু ঈদ হল সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমধর্মী একটি পবিত্র উৎসব। আনন্দ-ফূর্তির সাথে সাথে আল্লাহর স্মরণ এবং ইবাদতও এই দিন বেশী বেশী করা চায়। ঈদের দিনে সকল মুসলিম আল্লাহর প্রশংসা বার্তা ’ আল্লাহ আকবার, আল্লাহ আকবর . .  . .’ ধ্বনি দিতে দিতে ঈদগাহে যায়। শুধু নাযায়েজ হাসি তামাশা আর আমোদ-ফূর্তিতে যাতে ঈদের সময়টুকু না কাটে সে দিকেও খেয়াল রাখা দরকার। ঈদ যেমন আনন্দ তেমনি ইবাদতও বটে। এ কারণে ঈদেরও কিছু সুন্নত তরিকা আছে। এর সুন্নত তরিকাগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো, ১. নিজ মহল্লার মসজিদে ফজরের নামায আদায় করা। ২. মিসওয়াক করা। ৩. গোসল করা। ৪. খুশবু ব্যবহার করা। ৫. সামর্থ্য থাকলে কুরবানি করা। ৬. সাধ্যানুযায়ী উত্তম পোশাক পরিধান করা। ৭. খুশি ও আনন্দ প্রকাশ করা। ৮. ঈদের ময়দানে যাওয়ার পূর্বে কোন কিছু না খাওয়া। ৯. কুরবানির গোশত দিয়ে দিনের খানা শুরু করা। ১০. সামর্থ্য অনুযায়ী অধিক পরিমাণ দান-সাদকা করা। ১১. আগেভাগে ঈদগাহে যাওয়া। ১২. পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া। ১৩. ঈদগাহে এক পথে যাওয়া এবং অপর পথে ফিরে আসা। ১৪. ঈদগাহে যাওয়ার সময় তাকবীরে তাশরীক পাঠ করা। তাকবীরে তাশরীক হলো, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ। ১৫. ঈদুল আযহার দিনে ফজরের ফরজ নামাজের পরে  ঈদের জামাত পর্যন্ত আর কোন সুন্নত বা নফল নামাজ না পড়া। ১৬. ঈদের নামাজ ঈদগাহে পড়া সুন্নত। তবে যদি বৃষ্টি-বাদল হয় অথবা অন্য কোন বৈধ কারণ থাকে, তাহলে মসজিদে আদায় করা যায়।
প্রকৃতপক্ষে কুরবানি আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় সেই শিশু ইসমাইল (আঃ) ও আল্লার প্রেমে পাগল ইবরাহিম খলিলুল্লার (আঃ) উৎসর্গের কথা। মাওলা প্রেমের এ এক বিরল চিত্র। পিতার হাতে ধারালো ছুরি, আর ছুরির নিচে নিজেরই প্রাণপ্রিয় সন্তান। আল্লাহর আদেশ পালনার্থেই চালাবেন সন্তানের গলায় ছুরি। সমস্ত পৃথিবী নিঃস্তব্দ, আসমানের ফেরেশতারাও পেরেশান, এ কি হতে যাচ্ছে? প্রেমজগতের এরূপ দৃশ্য কেউ  কি অবলোকন করেছে কখনও? গলায় চালাচ্ছেন ছুরি কিন্তু আল্লাহর হুকুমে ছুরি তার কাটার শক্তিকে হারিয়ে ফেললো।  অবশেষে মহান আল্লাহ তায়ালা তার কুরবানিকে কবুল করলেন এবং শিশু ইসমাঈলের পরিবর্তে একটি পশুকে কুরবানি দেওয়া হলো। এই ঘটনা আমাদেরকে নিখিল বিশ্বের সৃষ্টিকর্তা ও আমাদের একমাত্র মালিক মহান আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিনের সামনে মাথা নত করার ও নিজের ইচ্ছাকে তার সামনে কুরবানি করা শেখায়। এটিই দাসত্বের চরম নিদর্শন, সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ। প্রকৃতপক্ষে আমাদের একমাত্র মালিক মহান আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিনের প্রতিটি হুকুমের সামনে মাথা নত করতঃ সর্বোচ্চ ত্যাগের শিক্ষা দেয় এই কুরবানির ঈদ। 

্রিন্ট

আরও সংবদ

ইসলাম

প্রায় ২ দিন আগে