খুলনা | শুক্রবার | ১৩ জুন ২০২৫ | ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বাজেট ২০২৫-২৬ : রাজস্ব সংগ্রহের সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন

|
১২:১৩ এ.এম | ১১ জুন ২০২৫


অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ গত ২ জুন (সোমবার) ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণা করেছেন। প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা; এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে আদায় হবে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য উৎস থেকে আরও ৬৫ হাজার কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি হবে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। এ ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। কোষাগারের বিদ্যমান নাজুক পরিস্থিতি উত্তরণে সরকার নজর দিয়েছে কর ও ভ্যাটে। রান্নাঘরের সামগ্রী, গৃহস্থালি ও প্লাস্টিকের তৈরি পণ্যসহ বেশকিছু পণ্যে যুক্ত করা হয়েছে বাড়তি ভ্যাট। এসি-ফ্রিজসহ বিভিন্ন পণ্য প্রস্তুতকারী বেশকিছু শিল্পপ্রতিষ্ঠানের করপোরেট কর বৃদ্ধি করায় এসব পণ্যে দাম বেশি গুণতে হবে ভোক্তাদের। এছাড়া শিল্প খাতে কর অব্যাহতির সুবিধায় লাগাম টানা হয়েছে। বাজেটে বাড়ি নির্মাণ বা ফ্ল্যাট নির্মাণের কিছু উপকরণের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। অনেক সমালোচনার পরও বাজেটে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছে। 
দেশে বিভিন্ন কারণে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ স্থবিরতায় কর্মসংস্থান কমেছে সব খাতে। এদিকে বেড়েছে খেলাপি ঋণের অঙ্ক। বিশ্বব্যাংকের সহজে ব্যবসা করার সূচকে বাংলাদেশের অবস্থার উন্নতি হয়নি। বর্তমানে রাজনীতি, অর্থনীতি ও প্রশাসনে যে পরিস্থিতি বিরাজমান, তা বাজেট বাস্তবায়নে প্রভাব ফেলবে। দেশে রাজস্ব সংগ্রহের সক্ষমতা খুবই দুর্বল। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই বাজেট বাস্তবায়ন করতে হবে।  
প্রস্তাবিত বাজেটে কর অব্যাহতি প্রত্যাহারের মাধ্যমে স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষা কমানো হয়েছে। অপরদিকে লোকসানি প্রতিষ্ঠানেরও কর বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্থান-স্থাপনা ভাড়ার উৎসেও কর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। দেশীয় টেক্সটাইল মিলে তৈরি সুতা উৎপাদনে ভ্যাটহার বাড়ানো হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের এ সিদ্ধান্তে ভারতীয় সুতার সঙ্গে প্রতিযোগিতার সক্ষমতায় আরও পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন মিল মালিকরা। প্রস্তাবিত বাজেটে শিল্পের কর অব্যাহতি সুবিধা কমানোয় নতুন বিনিয়োগের পথ সংকুচিত হবে বলে মনে করেন বিজিএমইএ নির্বাচনে সদ্যবিজয়ী ফোরামের প্যানেল লিডার মাহমুদ হাসান খান বাবু।  
প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে রাখার কথা বলা হয়েছে। অথচ বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের উপরে রয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাজেটে মূল্যস্ফীতির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটি বাস্তবসম্মত বলে মনে হচ্ছে না। আগামী অর্থবছরে সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ভাতার পরিমাণ ও আকার বৃদ্ধি করবে। নতুন করে আরও ৫ লাখ পরিবার নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আসছে। এছাড়া জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহিদ পরিবারের সদস্যদের জন্য ভাতা, আহতদের সুচিকিৎসা, অনুদান ও পুনর্বাসনে ২৩২ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা আছে। এগুলো ইতিবাচক। তবে বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় দরিদ্র, প্রান্তিক ও ঝুঁকিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ আরও বাড়ানো দরকার।
প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। আমরা আশা করবো, কর প্রস্তাবসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন মহল থকে যেসব সুপারিশ উঠে আসবে-যৌক্তিকতা বিবেচনায় বাজেটে সে অনুযায়ী সংশোধনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

্রিন্ট

আরও সংবদ