খুলনা | বৃহস্পতিবার | ১২ জুন ২০২৫ | ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে দিতে যুক্তরাজ্যের কাছে ৩ সংস্থার আহ্বান

খবর প্রতিবেদন |
১২:৩২ এ.এম | ১১ জুন ২০২৫


বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অবৈধ অর্থ জব্দ করে বাংলাদেশকে ফিরিয়ে দিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দুর্নীতিবিরোধী তিনটি সংস্থা– ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), স্পটলাইট অন করাপশন এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল-ইউকে।  দুর্নীতিবিরোধী ওই তিন বেসরকারি সংস্থা মঙ্গলবার এক যৌথ বিবৃতিতে এ আহ্বান জানিয়েছে।

টিআইবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস রাষ্ট্রীয় সফরে যুক্তরাজ্যে আছেন। সে কারণে কর্তৃত্ববাদী সরকারের আমলে যুক্তরাজ্যে পাচার হওয়া অবৈধ অর্থ জব্দ করে বাংলাদেশকে ফিরিয়ে দিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি এ আহ্বান জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংগঠনগুলো যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে দেশটিতে অবস্থানরত সন্দেহভাজন অর্থ পাচারকারী বাংলাদেশি অলিগার্ক, যাদের দুর্নীতি ও চৌর্যবৃত্তির সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহের যথেষ্ট কারণ রয়েছে, তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং যুক্তরাজ্যে পাচার হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধারে দেশটির আইনপ্রয়োগকারী সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রচেষ্টা অধিকতর জোরদার করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানকে উদ্ধৃত করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও জবাবদিহিমূলক সুশাসনের পথে অগ্রযাত্রার অভূতপূর্ব সম্ভাবনার বর্তমান সুযোগের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারের লক্ষ্যে যুক্তরাজ্য সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে এগিয়ে আসতে হবে। রাষ্ট্র সংস্কারের চলমান উদ্যোগ, বিশেষ করে দুর্নীতির কার্যকর নিয়ন্ত্রণের অন্যতম ক্ষেত্র হিসেবে পাচার হওয়া সম্পদ বাংলাদেশকে ফিরিয়ে দিতে যুক্তরাজ্যকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। এর মাধ্যমে এমন জোরালো বার্তা দিতে হবে যে, চূড়ান্ত বিবেচনায় অর্থপাচারকারীদের শুধু উৎস হিসেবে বাংলাদেশই নয়, গন্তব্য দেশ যুক্তরাজ্যেও কার্যকরভাবে জবাবদিহি করতে হয়।

স্পটলাইট অন করাপশনের নির্বাহী পরিচালক সুসান হাওলি বলেন, সময়ের অপচয় না করে তাৎক্ষণিকভাবে যুক্তরাজ্য সরকারের উচিত বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ জব্দের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। একইসঙ্গে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ ও অর্থ পুনরুদ্ধারে সংশ্লিষ্ট আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকের পলিসি ডিরেক্টর ডানকান হেমস বলেন, অর্থপাচারের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্য সরকার যে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, তার প্রতিফলন ঘটাতে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্টজনদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও চৌর্যবৃত্তির মাধ্যমে অর্জিত (বাংলাদেশ থেকে পাচার করা) যুক্তরাজ্যে ৪০০ মিলিয়ন পাউন্ড সম্পদের যে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, যথাযথভাবে অনুসন্ধান করে যুক্তরাজ্য সরকারকে তা জব্দ করতে হবে। যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতিশ্রুতি যেন শুধু কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পুনর্যাত্রার প্রচেষ্টায় কার্যকরভাবে সহযোগীর ভূমিকা পালন করতে হবে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দ্য অবজারভার ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকের তদন্তে যুক্তরাজ্যে শেখ হাসিনার ঘনিষ্টজনদের মালিকানায় থাকা ৪০০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) ইতোমধ্যে ৯০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের সম্পদ জব্দ করেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দুর্নীতি নির্মূল ও শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে পাচার হওয়া কোটি কোটি পাউন্ড পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যার আনুমানিক পরিমাণ প্রতিবছর ১১ বিলিয়ন পাউন্ড (১৬ বিলিয়ন ডলার)। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিশনের অনুমান অনুসারে, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বার্ষিক ১৬ বিলিয়ন ডলার হারে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার দেশ থেকে পাচার হয়েছে।

পাচার হওয়া অর্থ ফেরতে যুক্তরাজ্যের প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাই কমিশনার শান্তি পুনরুদ্ধার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, অন্যদিকে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ‘অর্থপাচারের স্বর্ণযুগ শেষ হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের অগাস্টে শেখ হাসিনার টানা ১৫ বছরের শাসনাবসান হয়। ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী লীগ আমলে বিভিন্ন দেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরানোর চেষ্টায় অন্তবর্তী সরকার যেসব দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, তার মধ্যে যুক্তরাজ্য অন্যতম। সেই উদ্যোগ এগিয়ে নিতে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস যুক্তরাজ্যে তার চার দিনের সফরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল মোমেনকেও সঙ্গে নিয়েছেন।

্রিন্ট

আরও সংবদ