খুলনা | শুক্রবার | ১৩ জুন ২০২৫ | ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

নির্বাচনের জন্য বিএনপি প্রস্তুত : ফখরুল

‘ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠকে খুলবে সম্ভাবনার দুয়ার’

খবর প্রতিবেদন |
১২:৫৫ এ.এম | ১১ জুন ২০২৫


‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য একটি নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারে। যে কোনো সময়ই নির্বাচনের জন্য বিএনপি প্রস্তুত বলে দাবি করেন দলটির মহাসচিব। মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে ঈদ পরবর্তী মতবিনিময়কালে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এ সময় তিনি নিশ্চিত করেন, শুক্রবার (১৩ জুন) লন্ডন সময় সকাল ১১টায় বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
বিগত ১৫ বছরে ‘ফ্যাসিস্ট’ আওয়ামী লীগ শাসনকালীন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সব ইনস্টিটিউশনকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। সেগুলোকে নতুন করে গড়ে তোলা ছেলে খেলা নয়। একটা রাষ্ট্রকে সম্পূর্ণ নষ্ট করে ফেলা হয়েছিল, এটাকে রাতারাতি নতুন করে সুস্থ করে তোলা এত সহজে হয় না। ইট টেকস টাইম।
তবে সব সত্তে¡ও তিনি আশাবাদী জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, একেকজনের মত বা চিন্তা-ভাবনা ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু সবাই সবার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ ভাবে এ চেষ্টা চালাচ্ছেন।
রাজনীতির এ চলমান টানাপোড়েন ও অনিশ্চয়তার আবহে তারেক রহমান ও ড. ইউনূসের মধ্যকার এ বৈঠক রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য একটি নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারে বলেই মনে করছেন বিএনপির মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্রের ট্রানজিট পিরিয়ডে আমাদের এমনভাবে কথা বলা উচিত যেন আমাদের এ চ্যালেঞ্জের সময়ের যাত্রাটা বিঘিœত না হয়। আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য এখন জাতীয় ঐক্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনের ঘোষিত সময়সূচি নিয়ে বিএনপি এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তিনি আশা ব্যক্ত করেছেন যে, সরকার বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে সময় বিবেচনা করবে।  
তিনি বলেন, রোজা ও ঈদের পরপরই নির্বাচন হলে প্রার্থীরা প্রচারণায় বিপাকে পড়বেন। ইফতার পার্টির মাধ্যমে প্রচারণা চালাতে গিয়ে ব্যয় দ্বিগুণ হয়ে যাবে। এছাড়া সেই সময়ে প্রচণ্ড গরম এবং ঝড়-বৃষ্টির প্রকোপ থাকবে, যা নির্বাচনী জনসভায় সাধারণ মানুষের উপস্থিতিকে বাধাগ্রস্ত করবে।  
এ সময় তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, দেশের বেশির ভাগ জাতীয় নির্বাচনই ডিসেম্বর কিংবা জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে, ব্যতিক্রম মাত্র দু’বার।
গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় জাতিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহŸান জানিয়ে বিএনপি’র মহাসচিব বলেন, একটা বিষয়ে জাতি ইউনাইটেড-আমরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে চাই। আমার ভোটটা আমি দিয়ে সরকার নির্বাচিত করতে চাই। সংস্কার চাই। এ বিষয়ে জাতিকে কেউ বিভক্ত করার চেষ্টা করবেন না। এতে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীরা সুযোগ পেয়ে যাবে।
ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের সম্ভাব্য বৈঠককে দেশের সা¤প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে দেখছেন মির্জা ফখরুল।  
তিনি বলেন, যদি সব কিছু ঠিকঠাক থাকে, তাহলে এ সাক্ষাৎ রাজনীতিতে একটি টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ বৈঠকের গুরুত্ব অনেক বেশি। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এ আলোচনার মাধ্যমে বহু সমস্যার সমাধান সম্ভব। এতে দুইপক্ষের মধ্যকার সম্পর্ক সহজ হতে পারে এবং রাজনীতিতে নতুন একটি মাত্রা সৃষ্টি হতে পারে।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, একটি বিশেষ মুহূর্তে তারা দায়িত্ব নিয়েছে বা আমরাই তাদের দায়িত্ব দিয়েছি। রাজনৈতিক দিক দিয়ে তাদের অভিজ্ঞতা যথেষ্ট নয়। নিজ নিজ ক্ষেত্রে তারা অত্যন্ত অভিজ্ঞ ও পণ্ডিত লোক। তবে তাদের পলিটিক্যাল উইজডম পুরোপুরি আছে, বলা যাবে না। কিন্তু তাদের আন্তরিকতার অভাব আছে বলে আমার মনে হয় না। তারা কাজ করতে চান, কাজ করার চেষ্টা করছেন। দেশে নতুন রাজনৈতিক দল ও চিন্তার উত্থান হচ্ছে। এ রাজনৈতিক দ্ব›দ্ব ও নতুন ভাবনার জট খুলে একটি নিরপেক্ষ জায়গায় নিয়ে আসা একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করে প্রবীণ এ নেতা বলেন, এই প্রেক্ষাপটে লন্ডনে অনুষ্ঠেয় সাক্ষাৎ বড় সমাধানের পথে পৌঁছাতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা তো বলেছি, আপনি যদি ইলেকশন কালকে করতে পারেন, আমরা কালই রেডি। বিএনপি নির্বাচনের দল। বিএনপি অলওয়েজ রেডি ফর ইলেকশন। কারণ এটা (বিএনপি) নির্বাচনের দল, নির্বাচন করেই বিএনপি ক্ষমতায় যেতে চায়। আমরা তো বিপ্লবী দল নই। আমাদের পরিষ্কার কথা, আমরা কোনো বিপ্লবী দল নই। আমরা নির্বাচন করেই জনগনের ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে চাই। তবে যখন সবাই চাইবে, একমত হবে, তখন নির্বাচন হবে। অসুবিধা নাই।
‘সরকারের আন্তরিকতার অভাব নেই’ : মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, একটা বিশেষ মুহূর্তে এসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। একথা বললে অস্বীকার করা হবে না যে, আমরাই দায়িত্ব দিয়েছি। কিন্তু রাজনৈতিক দিক থেকে তাদের অভিজ্ঞতা যথেষ্ট নয়। তারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে সবাই অত্যন্ত অভিজ্ঞ মানুষ, পন্ডিত লোক, উইজডম সব আছে। কিন্তু পলিটিক্যাল উইজডম যে পুরোপুরি আছে সেটা বলা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, বাট অ্যাট দ্য সেইম টাইম দে হ্যাভ গেট দ্য সিনসিয়ারিটি। তাদের আন্তরিকতার অভাব আছে বলে আমার মনে হয় না। তারা কাজ করতে চান, কাজ করছেন। দৃষ্টিভঙ্গি বিভিন্ন হতে পারে। তবে এখানে একটা ইউনিক চাপ আছে। চাপটা হচ্ছে, আপনারা জানেন যে, এখানে নতুন নতুন রাজনৈতিক চিন্তাভাবনার সৃষ্টি হচ্ছে, নতুন নতুন রাজনৈতিক চিন্তা আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে একটা জায়গায় নিয়ে আসা-এটাও বড় একটা চ্যালেঞ্জিং জব। সেই ক্ষেত্রে আমি মনে করি, একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে দুই নেতার মিটিয়ের মধ্য দিয়ে একটা বড় সমাধান হয়ে যেতে পারে। একেবারে মুহূর্তের মধ্যে বাংলাদেশের সব সমস্যার সমাধান হবে এটা মনে করার কোনো কারণ নেই।
‘জাতীয় ঐক্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ : মির্জা ফখরুল বলেন, আমি মনে করি, এই সময়টা গণতন্ত্র উত্তরণের যে কালটা, ট্রান্সজিশনটা এটাতে সবার দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। প্রত্যেকটা কথা আমাদের সাবধানে বলা উচিত। প্রত্যেকটা কথা এমনভাবে আমরা বলব, যে কথাগুলো এই যে একটা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার যে যাত্রা এটা যেন বিঘ্নিত না হয়, ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। জাতীয় ঐক্য এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যখন আমরা আন্দোলন করেছি, সংগ্রাম করেছি তখনও বলেছি জাতীয় ঐক্যের কথা। এখনো আমরা বলছি যে, জাতীয় ঐক্য আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
‘সমঝোতায় শরিকদের আসন ছাড়বে বিএনপি’ : শরিকদের কিছু কিছু আসন বিএনপি ছেড়ে দেবে কি না এরকম প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, এটা সংসদীয় রাজনীতিতে খুবই স্বাভাবিক, এটা ন্যাচারাল। এটা হওয়া উচিত। আমরা আগে থেকে কমিটেড যে, নির্বাচনের পর একটা জাতীয় সরকার করব। এটা পরের ব্যাপার। যদি আলোচনা হয় হবে। রাজনীতিতে পার্লামেন্টারি ডেমোক্রেসিতে শেষ কথা বলতে কিছু নাই। চরম বিরোধী দলের সঙ্গেও অ্যালায়েন্স হয়ে যায়। আপনি ভারতে তাকিয়ে দেখেন একেবারে কট্টর ডানপন্থি, কট্টর বামপন্থির মধ্যেও অ্যালায়েন্স হয়ে নির্বাচন হচ্ছে। কারণ ওখানে সংখ্যার ব্যাপারটা ইম্পরটেন্ট।
এর আগে চোখের অস্ত্রোপচারের জন্য থাইল্যান্ডে গিয়েছিলেন বিএনপি মহাসচিব। সেখানে সফল অস্ত্রোপচারের পর দেশে ফেরেন ঈদের আগের রাতে। পরের দিন ঈদের নামাজ শেষে জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন তিনি। সাংবাদিকদের সঙ্গে ঈদের পরে শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আসেন বিএনপি মহাসচিব। রাজনীতি, নির্বাচন, লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠক, নির্বাচনে শরিকদের সঙ্গে আসন সমঝোতা, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মকাণ্ড, সংস্কার কমিশনসহ নানান বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের খোলামেলা জবাব দেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘সজ্জন ব্যক্তি’ হিসেবে পরিচিত মির্জা ফখরুল।

্রিন্ট

আরও সংবদ