খুলনা | বৃহস্পতিবার | ১২ জুন ২০২৫ | ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বিশ্বে জন্মহার কমছে নজিরবিহীন : জাতিসংঘ

খবর প্রতিবেদন |
০১:০৬ এ.এম | ১১ জুন ২০২৫


বিশ্বে সন্তান জন্মের হার নজীরবিহীন ভাবে কমে গেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ)। স¤প্রতি এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, বিশ্বজুড়ে শত শত কোটি মানুষ এখন চাইলেও ইচ্ছেমতো সন্তান নিতে পারছেন না। এর পেছনে কারণ হিসেবে সংস্থাটি বলছে, সন্তান লালন-পালনের খরচ আর উপযুক্ত সঙ্গীর অভাব।
ইউএনএফপিএর নির্বাহী পরিচালক ড. নাটালিয়া ক্যানেম বলেন, বিশ্ব এক নজিরবিহীন জন্মহার হ্রাসের দিকে এগোচ্ছে। জরিপে অংশ নেওয়া অধিকাংশ উত্তরদাতা দু’টি বা তারচেয়ে বেশি সন্তান চান। কিন্তু তাঁরা মনে করেন, তাঁরা যে পরিবার গড়তে চান, তা তৈরি করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না এবং সেটিই এখন সবচেয়ে বড় সংকট।
সংস্থাটি মোট ১৪টি দেশে ১৪ হাজার মানুষের ওপর একটি জরিপ চালিয়েছে। জরিপে অংশ নেওয়া প্রতি পাঁচজনের একজন বলেছেন, তাঁরা তাঁদের ইচ্ছেমতো সন্তান নিতে পারেননি বা ভবিষ্যতেও পারবেন না বলে মনে করেন।
এই জরিপে যে ১৪টি দেশের মানুষ অংশ নিয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, ইতালি, হাঙ্গেরি, জার্মানি, সুইডেন, ব্রাজিল, মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মরক্কো, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নাইজেরিয়া। যে দেশগুলোর মোট জনসংখ্যা বিশ্ব জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ।
উচ্চ, মধ্যম ও নিম্ন আয়ের এবং উচ্চ ও নিম্ন জন্মহারের দেশ মিলিয়ে এই দেশগুলো থেকে জরিপে অংশ নিয়েছেন তরুণ প্রজনন সক্ষম মানুষ থেকে শুরু করে প্রজনন বয়স পার করে আসা ব্যক্তিরাও।
জরিপটি মূলত একটি পাইলট স্টাডি ছিল, যার ভিত্তিতে চলতি বছরের শেষের দিকে আরও ৫০টি দেশে বড় পরিসরে গবেষণা চালানো হবে। ফলে এর তথ্য ও তত্ত্ব সীমিত। প্রত্যেক দেশের বিভিন্ন বয়সভিত্তিক অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা এতই কম যে, সেখান থেকে কোনো সার্বিক সিদ্ধান্ত টানা সম্ভব নয়। তবে এই সীমিত উপাত্ত থেকে উঠে আসা চিত্রও বেশ ভয়াবহ।
জরিপে অংশ নেওয়া ৫০ বছরের বেশি বয়সী অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৩১ শতাংশ জানিয়েছে, তারা চেয়েছিল তাদের আরও বেশি সন্তান থাকুক, কিন্তু তা সম্ভব হয়নি।
সব দেশ মিলিয়ে ৩৯ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা তাঁদের সন্তান নেওয়া থেকে বিরত রেখেছে। বিশেষ করে দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষ এ বিষয়ে বেশি সম্মতি জানিয়েছেন। দেশটির ৫৮ শতাংশ মানুষ সায় দিয়েছেন যে তাঁরা আর্থিক সংকটের কারণে অধিক সন্তান নিতে পারছেন না।
আর ১২ শতাংশ মানুষ জানান, বন্ধ্যাত্ব বা সন্তান ধারণে বিভিন্ন সমস্যার কারণে তাঁরা সন্তান নিতে পারছে না। তবে কিছু দেশে এই হার তুলনামূলকভাবে বেশি ছিল-থাইল্যান্ডে ১৯ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ১৬ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৫ শতাংশ, নাইজেরিয়ায় ১৪ শতাংশ ও ভারতে ১৩ শতাংশ।
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল আরও একটি বিষয় চিহ্নিত করেছে, যেটি অর্থনৈতিক বাধার চেয়েও বড়-সময় না থাকা।
হংকং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির জনসংখ্যাবিদ অধ্যাপক স্টুয়ার্ট গিয়েটেল-বাস্তেন বলেন, জাতিসংঘ প্রথমবারের মতো কম জন্মহারের বিষয়ে এত জোরালো ভাবে কথা বলছে। এই সংস্থা এত দিন মূলত এমন নারীদের গুরুত্ব দিতো, যাঁদের প্রয়োজনের চেয়েও বেশি সন্তান ছিল এবং যাঁদের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অবলম্বন করার দরকার।
তবে ইউএনএফপিএ জন্মহারের বাড়া-কমা নিয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক নাটালিয়া বলেন, ‘আমরা এখন যেটা দেখতে পাচ্ছি, তা হলো-অতিরিক্ত জনসংখ্যা বা জনসংখ্যা হ্রাস-দু’টি নিয়েই অতিরঞ্জিত বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে। মানুষের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।’
তিনি মনে করিয়ে দেন, ৪০ বছর আগেও চীন, কোরিয়া, জাপান, থাইল্যান্ড ও তুরস্ক মনে করতো তাদের জনসংখ্যা অতিরিক্ত। কিন্তু ২০১৫ সালের মধ্যে এসব দেশ প্রজনন হার বাড়াতে চাইলো।
জনসংখ্যাবিদ অধ্যাপক গিয়েটেল-বাস্তেন বলেন, ‘আমরা চাই এসব দেশ যেন আতঙ্কিত হয়ে ভুল নীতিনির্ধারণ না করে। আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি, কম প্রজনন হার, জনসংখ্যার বার্ধক্য ও স্থবিরতা-এসবকে জাতীয়তাবাদী, অভিবাসন বিরোধী ও লিঙ্গ রক্ষণশীল নীতির অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।’

্রিন্ট

আরও সংবদ