ঈদের আনন্দ ম্লান করে গত দুই দিনে খুলনা নগরী ও জেলায় ৪ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ এবং বিভিন্ন স্থান থেকে ৩ জনের অর্ধগলিত ও ভারসাম্যহীন মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। একই সময়ে পুলিশের অভিযানে শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেনেড বাবুর আস্তানা থেকে উদ্ধার হয়েছে অস্ত্র ও বৈদেশিক মুদ্রা। সব মিলিয়ে ঈদ-উল-আযহার দিনগুলো খুলনার জন্য হয়ে উঠেছে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার : বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্রী মাহফুজা আফরিন উপমার (২৩) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সোমবার নগরীর জিন্নাপাড়া এলাকার বাড়ি থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি ওই এলাকার বাসিন্দা মোঃ মাহবুবুর রহমানের মেয়ে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, রাত ১১টার দিকে মাহফুজা আফরিন উপমা খাবার খেয়ে রাতে ঘুমাতে যান। পরদিন সকালে ডেকে কোনো সাড়া না পেয়ে পরিবারের সদস্যরা ডাকতে গিয়ে জানালা থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ এসে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে।  
লবণচরা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তৌহিদুজ্জামান বলেন, ফ্যানের হুকে ওড়না ঝুলিয়ে ওই শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা শেষে তার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
গৃহবধূ হত্যা ও অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার: ৮ জুন, শনিবার, রূপসা উপজেলার আইচগাতী এলাকায় সুমাইয়া খাতুন জান্নাত (২৫) নামে এক গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। পারিবারিক কলহের জেরে এ হত্যাকান্ড ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। একই দিনে উপজেলার শ্রীফলতলা গ্রামে ইদ্রিস আলীর কলাবাগান থেকে ভ্যানচালক রবিউল মোল­ার (৪০) অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। রবিউলকে হত্যা করা হয়েছে নাকি অন্য কোনো কারণে তার মৃত্যু হয়েছে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া, কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের একটি পুকুর থেকে ভারসাম্যহীন নারী নমিতা (৪৫) এর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
শীর্ষ সন্ত্রাসীর আস্তানায় অভিযান : ৭ জুন, শুক্রবার, পবিত্র ঈদ-উল-আযহার রাতে খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী গেনেট বাবুর (৪৫) বাড়িতে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়েছে। এ সময় বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা, একটি পাইপ গান ও কয়েক রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। গ্রেট বাবুকে আটক করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এই অভিযান খুলনার অপরাধ জগতে নতুন করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) এবং জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি ঘটনার তদন্ত চলছে। অস্বাভাবিক মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটনে এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ বদ্ধপরিকর। তবে ঈদের ছুটিতে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।