খুলনা | শনিবার | ১৪ জুন ২০২৫ | ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

যাত্রী ছিলেন গুজরাটের দুইবারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রুপানি

আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান বিধ্বস্ত, নিহত ২৯৪

খবর প্রতিবেদন |
১২:৫৯ এ.এম | ১৩ জুন ২০২৫


ভারতের আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমান  মেডিক্যাল কলেজের হোস্টেল ভবনে বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯৪ জনে। নিহতদের মধ্যে বিমানের আরোহী ও হোস্টেলে থাকা শিক্ষার্থীরাও রয়েছেন। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় দুপুরে আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরেই এয়ার ইন্ডিয়ার লন্ডনগামী ড্রিমলাইনার বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
বিমানটিতে থাকা ২৪২ যাত্রীর মধ্যে অন্তত একজন বেঁচে আছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। আহমেদাবাদের পুলিশ কর্মকর্তা বিধি চৌধুরী বলেন, প্রায় ২৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে কলেজ হোস্টেলে থাকা বেশ কিছু শিক্ষার্থীও রয়েছেন। আমরা একজন যাত্রীকে জীবিত পেয়েছি, যার সিট নম্বর ছিল ১১এ। এর আগে  সংবাদমাধ্যম নিউজ-১৮ জানায় ভারতের গুজরাটের আহমেদাবাদে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় বিমানে থাকা ২৪১ আরোহী নিহত হয়েছেন। বিমানটি একটি ভবনে আঘাত করায় সেখানে থাকা ৫ জন মেডিকেল শিক্ষার্থী প্রাথমিক ভাবে নিহতের খবর দিয়েছে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যম। তবে আহতের সংখ্যা কত তা নির্দিষ্ট করে জানাতে পারেনি ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। ধারনা করা হচ্ছে নিহত ও আহতের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। বিমানে অন্যতম যাত্রী ছিলেন গুজরাটের দুইবারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রুপানি। তিনি বিমানের ১২ নং আসনের বিজনেস ক্লাসের যাত্রী ছিলেন বলে, এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ। বিজয় রুপানি লন্ডনে মেয়ের সঙ্গে সাক্ষাতে যাচ্ছিলেন বলে জানা যায়।
এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে আহমেদাবাদের সর্দার বল­ভভাই প্যাটেল বিমানবন্দর থেকে বিমানটি যুক্তরাজ্যের লন্ডনের উদ্দেশ্যে উড্ডয়ন করে। এর কিছুক্ষণ পরই এটি আছড়ে পড়ে। বিমানটিতে ছিলেন ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ, ৭ জন পর্তুগিজ এবং একজন কানাডিয়ান।
বিমানটি আছড়ে পড়ার মুহূর্তটি ধরা পড়েছে ক্যামেরায়। এতে দেখা যাচ্ছে, বিধ্বস্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। এরপর সেখান থেকে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলি বের হতে দেখা যায়।
সাবেক পাইলট ও এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বিমানটি লম্বা যাত্রা হওয়ায় জ্বালানি বা ফুয়েল ছিল ভরপুর। যে কারণে দুর্ঘটনার পর দ্যার্য পদার্থের শক্তিমাত্রা বেড়ে যায় ধারনার চেয়ে কয়েকগুণ। এছাড়া দুর্ঘটনাস্থলে থাকা কয়েকটি গাড়িতে আগুণ লেগে যাওয়ায় গোটা এলাকায় এক ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হয়। চারি দিকে আগুণ আর ধোঁর কুণ্ডুলি ছড়িয়ে পড়ে। দিন-দুপুরে ভয়াবহ ঘটনা স্থানীয়দের মাঝে কিয়ামতের মতো আতঙ্ক দেখা দেয়।
ভয়ঙ্কর এই দুর্ঘটনার পর রমেশ নামের এক যুব অলৌকিক ভাবে বেঁচে গেছেন। তার এই বেঁচে যাওয়া অনেকেই মিরাক্কল বলে মনে করছেন। তার আসন ছিল বিজনেস ক্লাসের ১১। তার পাশে ছিলেন, গুজরাটের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রুপানি। 
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিমানটি বেশি উঁচু না থাকায় এবং তার আসনের কাছ থেকে বিমানের কিছু অংশ ভেঙে যাওয়ায় খুব নিচ থেকে সে ছিটকে পড়ে। তাকে পরে দিব্বি হেটে চলতে দেখা গেছে বলে ভারতের একাধিক গণমাধ্যম নিশ্চিত করেন। তবে ওই যুবক ট্রমার মধ্যে রয়েছেন এবং তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বিমান বিধ্বস্তের স্থানের ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায়, ঘন কালো ধোঁয়ার কুন্ডলি আকাশে উড়ছে। ঘটনাস্থলে দুই ডজনের বেশি এ্যাম্বুলেন্স মোতায়েন করা হয়েছে। কয়েকজন যাত্রীকে আহত অবস্থায় উদ্ধারের পর স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। জরুরি মেডিক্যাল টিম ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সেখানে তৎপরতা পরিচালনা করছেন।
জরুরি পরিষেবা সংস্থাগুলোর নির্বিঘেœ উদ্ধার তৎপরতা পরিচালনার জন্য বিমানবন্দর ও এর আশপাশের এলাকায় জনসাধারণের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যানজট এড়াতে বিকল্প রুটও চালু করেছে কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে বিমানটি আছড়ে পড়েছে একটি মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসে। যেখানে এমবিবিএস শিক্ষার্থীরা থাকতেন। বিমান সরাসরি ছাত্রাবাসে আছড়ে পড়ায় অনেক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর শঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, বিমান কলেজের ছাত্রাবাসে বিধ্বস্ত হওয়ার পর সেখানে হৃদয়বিদারক ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ইতিমধ্যেই একাধিক শিক্ষার্থীর মৃত্যু নিশ্চিত হওয়া গেছে। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে স্থানীয় সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে কিছু বলা হয়নি।
তবে স্থানীয় এক কর্মকর্তা জানিয়েছে, এ দুর্ঘটনায় অনেক তরুণের প্রাণ গেছে। মূলত তিনি ওই ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীদের কথা বলেছেন। তিনি বলেন, “আহমেদাবাদের ইতিহাসে এটি অন্যতম একটি কালো দিন। আমরা এত তরুণের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছি।”
ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল বিষয়ক মন্ত্রণালয় বিমান দুর্ঘটনা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানিয়েছে। দেশটির বিমান পরিবহনমন্ত্রী রাম মোহন নাইডু এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘আহমেদাবাদে বিমান বিধ্বস্তের খবর শুনে আমি মর্মাহত ও শোকাহত। আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছি। আমি নিজে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি এবং সব বিমান ও জরুরি সেবা সংস্থাগুলোকে দ্রুত ও সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছি। উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। এছাড়া চিকিৎসা সহায়তা ও ত্রাণ তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। 
বৃহস্পতিবার দুপুরে সেখানকার সর্দার বল­ভভাই প্যাটেল বিমানবন্দর থেকে যুক্তরাজ্যের লন্ডনের উদ্দেশ্যে বিমানটি রওনা দেয়। উড্ডয়নের কয়েক মিনিট পরই এটি বিধ্বস্ত হয়। বিমানে যে ২৪১ আরোহী ছিলেন তাদের মধ্যে ২৩০ জন ছিলেন সাধারণ যাত্রী। আর বাকি ১২ জন ছিলেন ক্রু। বিমানটিতে করে যুক্তরাজ্যে যাচ্ছিলেন ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ, ৭ জন পর্তুগিজ এবং একজন কানাডিয়ান নাগরিক।  
লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দর এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘‘আজ (বৃহস্পতিবার) আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে যাত্রা করা এয়ার ইন্ডিয়ার এআই১৭১ ফ্লাইটটি গ্যাটউইকে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিটে অবতরণ করার কথা ছিল।’’
আহমেদাবাদ সিটি পুলিশ কমিশনার জিএস মালিক বার্তাসংস্থা এপিকে এর আগে প্রাথমিকভাবে জানান, দুর্ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে বিমানটির কোনো আরোহী বেঁচে নেই। তিনি বলেন, “মনে হচ্ছে বিমান বিধ্বস্তে কেউ বেঁচে নেই। এটি আছড়ে পড়েছে আবাসিক এলাকায়। এতে স্থানীয় কিছু মানুষও হয়তো মারা গেছে। সব মিলিয়ে কতজনের মৃত্যু হয়েছে সেটি নিরূপণ করা হচ্ছে।” তবে সন্ধ্যা নাগাদ জানা যায়, অন্তত ৭৫জন মেডিকেল শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। এছাড়া যে ভবনে আছড়ে পড়ে কলেজটির নাম বি.জে. মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। তবে মৃত দেহগুলো এতই বিকৃত যে নিহতদের সনাক্ত করা কঠিন এবং ডিএনএ টেস্ট ছাড়া পরিচয় নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়। 
তবে ওই ভবনের আশে-পাশের কয়েকটি বাড়ি পুড়ে ছারখার হয়ে যায়। স্থানীয়রা বলছেন, হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এ সময় আশে-পাশের অনেক গাড়িতে আগুন লেগে পুড়ে ছারখার হয়ে যায়। 
ভারতে বিমানটি পাখির আঘাতে বিধ্বস্ত হয়ে থাকতে পারে প্রাথমিকভাবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। দুর্ঘটনার আগ মুহূর্তে বিমানের পাইলট ‘মে ডে’ বলে খুবই খারাপ অবস্থা বা জরুরি সাহায্যের সংকেত দেন। তিনি পরপর তিন বার ‘মে ডে’ বলে সংকেত দেন বলে ইন্ডিয়ার এয়ার ট্রাপিক কন্ট্রোল নিশ্চিত করেছে। তবে পাইলটের মেসেস দেওয়ার পর মুর্হতে সব কিছু নিস্তব্ধ হয়ে যায় এবং ইন্ডিয়ার ট্রাপিক কন্ট্রোল আর কোনো যোগাযোগ করতে পারেনি।
ভারতের এ ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এতে দেখা গেছে, বিমানবন্দরের রানওয়ে থেকে উড্ডয়নের পর অনেকটা দুলতে দুলতে বিমানটি এগিয়ে যাচ্ছে। এর কিছুক্ষণ পরই এটি বিধ্বস্ত হয়। এয়ার ইন্ডিয়ার এ বিমানটি সেখানকার একটি মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসে আঘাত হানে। 
বিমান চলাচল বিষয়ক এক বিশেষজ্ঞ সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে জানিয়েছেন, বিমানটি উড্ডয়ন করার সঙ্গে সঙ্গে সম্ভবত এটিতে কয়েকটি পাখি আঘাত হেনেছিল। এতে করে পূর্ণ উড্ডয়নের জন্য যে পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন ছিল বিমানটি সেটি হারিয়ে ফেলেছিল। ফলে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও বিমানটি আর উপরের দিতে নিতে পারেননি পাইলট।
সাবেক ক্যাপ্টেন সৌরভ ভাটনাগর নামের এ বিশেষজ্ঞ বলেছেন, “প্রথমত মনে হচ্ছে, একাধিক পাখির ধাক্কায় দুটি ইঞ্জিনই বিকল হয়ে যায়। উড্ডয়নটি নিখুঁত ছিল। কিন্তু ল্যান্ডিং গিয়ারটি উপরে তোলার আগেই বিমানটি নিচে নামা শুরু করে। এমনটি সাধারণত হয় যখন ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায় অথবা বিমান আকাশে থাকার সামর্থ হারিয়ে ফেলে। তদন্তে আসল কারণ বেরিয়ে আসবে।”
তিনি আরও বলেন, “ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে উড্ডয়নটি বেশ সুন্দরভাবে হয়েছিল। এছাড়া বিমানটিও নিয়ন্ত্রিতভাবে নিচে নেমে আসে। পাইলট মে ডে কল করেছিলেন। যার অর্থ ওই সময় জরুরি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল।” 
সূত্র: নিউজ-১৮, এনডিটিভি, রয়টার্স।

্রিন্ট

আরও সংবদ