খুলনা | শনিবার | ১৪ জুন ২০২৫ | ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ভাগ্যাহত চিকিৎসক দম্পতি ও তিন শিশু সন্তানের হাস্যোজ্জ্বল সেলফি, অতঃপর...

খবর প্রতিবেদন |
০১:০৪ এ.এম | ১৩ জুন ২০২৫


ভারতের পশ্চিম উপকূলীয় গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার পর যে ধ্বংসস্তূপ পড়ে রয়েছে, তারই কোথাও মাটির নিচে চাপা পড়ে আছে রাজস্থানের এক পরিবারের মোবাইল ফোন। সেই ফোন হয়তো আর কখনও খুঁজে পাওয়া যাবে না। হয়তো আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কিন্তু ওই ফোনে তোলা একটি সেলফি চিরদিন থেকে যাবে ২৪২ জন যাত্রীসহ বিমানে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনার এক নিঃশব্দ স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে।
ছবিটি ছিল নতুন এক জীবনের পথে যাত্রা শুরুর প্রতীক। উদয়পুরের একটি হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক কোমি ভ্যাশ চাকুরি ছেড়ে স্বামী ডাঃ প্রতীক জোশির সঙ্গে লন্ডনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিল তাদের তিন সন্তান। ছবিতে তাদের মুখে যে আনন্দ-উল­াস দেখা যায়, তা বলে দেয় কতটা উচ্ছ¡সিত ছিল এই পরিবার।
ভাগ্যাহত বিমানে তোলা সেলফিতে দেখা যায়-ডাঃ জোশি নিজে ছবি তুলেছেন, পাশে বসে আছেন তার স্ত্রী কোমি। দু’জনেই হাসিমুখে। সামনের সারিতে বসে আছে তাদের যমজ দুই ছেলে এবং বড় মেয়ে। ছেলেরা ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করছে, আর মেয়েটি হাসছে প্রাণ খুলে।
এই দম্পতির ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, ডাঃ কোমি ভ্যাশ এবং ডা. প্রতীক জোশি দুজনেই আগে উদয়পুরের প্যাসিফিক হাসপাতালে কাজ করতেন। প্রতীক কিছুদিন আগে লন্ডনে চলে যান এবং স¤প্রতি স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজস্থানের বানসওয়ারা ফিরে আসেন। যমজ দুই ছেলের  নাম নকুল ও প্রদ্যুৎ। তাদের বয়স পাঁচ বছর। মেয়ের নাম মিরায়া (৮)।
প্যাসিফিক হাসপাতালের এক মুখপাত্র বলেন, লন্ডনে স্বামীর কাছে যাওয়ার জন্য স¤প্রতি চাকুরি ছেড়েছিলেন কোমি। প্রতিবেশীরা বলেছেন, প্রতীকের বাবা শহরের একজন খ্যাতনামা রেডিওলজিস্ট। আর কোমির বাবা ছিলেন রাজ্য সরকারের গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তা।
প্রতীকের চাচাতো ভাই নয়ন, প্রতীক ও কোমি আহমেদাবাদে গিয়েছিল লন্ডনের ফ্লাইট ধরতে। প্রতীক মাত্র দুই দিন আগে এসে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে যাচ্ছিল। পরিবারের আরও অনেকেই তাদের বিদায় জানাতে বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন।
ডাঃ কোমি ভ্যাশের ভাই প্রবুদ্ধ বলেন, কোমি ও প্রতীক প্রায় ১০ বছর আগে বিয়ে করেন। প্রতীকের এক বোনও আছেন। পেশায় প্রকৌশলী তিনি।
দেশটির সংবাদমাধ্যম বলেছে, ‘‘আহমেদাবাদের সরদার বল­ভভাই প্যাটেল বিমাবন্দর থেকে যুক্তরাজ্যের লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় বিমানটি। স্থানীয় সময় বেলা ১টা ৩৮ মিনিটে আকাশে উড্ডয়নের ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই প্রচণ্ড আওয়াজ হয়। এর পরপরই বিমানটি মাটিতে আছড়ে পড়ে। সব কিছু খুব কম সময়ের মধ্যেই ঘটে যায়।’’
আহমেদাবাদে বিমান দুর্ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী বিবিসিকে বলেছেন, তার মনে হয়েছিল যেন ভূমিকম্প হলো। ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) তিনি বলেন, ‘‘আমি ঘরেই বসে ছিলাম। হঠাৎ প্রচণ্ড একটা শব্দ হলো। মনে হলো যেন ভূমিকম্প হচ্ছে। আমি তখনও জানতাম না বিমান ভেঙে পড়েছে। পরে এখানে এসে জানতে পারি।’’ ‘‘দুর্ঘটনাস্থলে এসে দেখি বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে। আর সেখানে অনেকের মরদেহ পড়ে আছে।’’
দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বিধায়ক দর্শনা বাঘেলা এএনআইকে বলেছেন, বিমান বিধ্বস্তের সময় তিনি ঘটনাস্থলের কাছেই নিজের দপ্তরে ছিলেন। ‘‘আমি এখানে আমার অফিসে বসেছিলাম। সেখানে বিস্ফোরণ ঘটে। সেখানে গিয়ে দেখি বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে। প্রচুর ধোঁয়া বের হচ্ছে। মেডিকেল কলেজের হোস্টেলের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় শ্রমিকদের সহায়তায় আমরা অনেককে উদ্ধার করতে পেরেছি।’’

্রিন্ট

আরও সংবদ