খুলনা | শনিবার | ১৪ জুন ২০২৫ | ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সংবাদ সম্মেলনে খুলনা নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ

নিউজপ্রিন্ট মিলস্সহ শিল্প-কারখানার সম্পদ পাচার লুটপাট ও অবৈধ টেন্ডার প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে

খবর বিজ্ঞপ্তি |
০২:১৬ এ.এম | ১৩ জুন ২০২৫


নিউজপ্রিন্ট মিলস্সহ সকল শিল্প-কারখানার সম্পদ পাচার, লুটপাট, দুর্নীতি ও অবৈধ টেন্ডার প্রক্রিয়া বন্ধ, বন্ধ সকল শিল্প-কারখানা চালু, শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ এবং শ্রমিক হয়রানি বন্ধের দাবিতে খুলনা নাগরিক সমাজের সংবাদ সম্মেলন বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় সংগঠনের অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। 
এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব এড. মোঃ বাবুল হাওলাদার। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো লোকসানের অজুহাতে করোনার মতো স্মরণকালের ইতিহাসের দুনিয়াব্যাপী সর্ববৃহৎ দুর্যোগের মধ্যে ২০২০ সালের ২ জুলাই রাতের অন্ধকারে তৎকালীন সরকার রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্যে, গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাদের পেটোয়াবাহিনী দ্বারা একটি ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে ২৬টি পাটকল বন্ধ করে দেয়। যার মধ্যে খুলনাঞ্চলের ৯টি পাটকল রয়েছে। ফলশ্র“তিতে, চাকুরি হারান ২৬ হাজার স্থায়ী-অস্থায়ী শ্রমিক। বেকার হয়ে যান এবং নিদারুণ অর্থ সংকটে পড়েন এর সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট কয়েকগুণ মানুষ। রাষ্ট্র হারায় প্রাচীন, ঐতিহ্যবাহী একটি শিল্প তথা বুনিয়াদি উৎপাদন খাত। 
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয় তৎকালীন সরকার শ্রমিকদের সকল বকেয়া পাওনা পরিশোধ করে লীজের মাধ্যমে এ খাতটি আধুনিকায়ন করে পরবর্তীতে ৩ মাসের মধ্যে পুনরায় চালুর ঘোষণা দেয়। মূলত এটি ছিলো শ্রমিক অসন্তোষ এবং কারখানা চালুর দাবিতে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন বন্ধের একটি অপকৌশলমাত্র। যা তৎপরবর্তী অদ্যাবধি কার্যক্রম দ্বারা স্পষ্ট প্রতীয়মান। তারও পূর্বে লোকসানের অজুহাতে ২০০২ সালের ৩০ নভেম্বর খুলনা নিউজ প্রিন্ট মিলটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। একই অজুহাতে ২০১৩ সালের ২৬ নভেম্বর খুলনা হার্ডবোর্ড মিলটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। একই ভাবে সরকারের ভুলনীতির কারণে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বন্ধ হয়ে যায় ব্যক্তিমালিকানাধীন সোনালী জুট মিল, ২০১৩ সালে এ্যাজাক্স জুট মিল, ২০১৮ সালের ১৪ ফেব্র“য়ারি আফিল জুট মিল, ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই মহসেন জুট মিল, ২০১৬ সালে জুট স্পীনার্স বন্ধ করে দেয়া হয়। এছাড়াও ১৯৯৩ সালের ১৯ জুন খুলনা টেক্সটাইলস মিলস্, ২০১০ সালের ১৮ আগস্ট বন্ধ করে দেয়া হয় দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরী। এর পূর্বে বিএমসি, বাংলাদেশ অক্সিজেন কোম্পানি, কোরাইশী স্টীল মিল বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়াও এ অঞ্চলের চিংড়ি রপ্তানিকারক কারখানা ও লবণ শিল্পের দশা করুণ। 
তিনি বলেন, পতিত হয়ে আছে বিপুল পরিমাণ জমি, ভৌত অবকাঠামো। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বিপুল পরিমাণ যন্ত্রপাতি। এহেন ভঙ্গুর পরিস্থিতিতে জাতীয় সম্পদের উপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে কায়েমী স্বার্থবাদী একশ্রেণির লুটেরা গোষ্ঠীর। শুরু হয় রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সর্বনি¤œ লুটেরা পর্যন্ত সর্বমহলে লুটতরাজের এক হরিলুটের খেলা। কখনও লীজের নামে কখনও টেন্ডারের নামে এভাবে বিভিন্ন নামে-বেনামে শুরু হয় এখানকার মূল্যবান সম্পদ পাচার-লুটপাট। মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে পূর্বেকার চলমান দুর্নীতি আরো ক্ষিপ্রগতিতে। যার অপদৃষ্টির শিকার বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রায় সকল কারখানাগুলো। 
নাগরিক নেতা আরও বলেন ২০২৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর খুলনা নিউজ প্রিন্ট মিলের যন্ত্রপাতি স্ক্র্যাপ দেখিয়ে তৎকালীন রাজনৈতিক অপশক্তির প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে নাটকীয় ও ষড়যন্ত্রমূলক টেন্ডারের মাধ্যমে ন্যূনতম ৫০০কোটি টাকার সম্পদ ৬৮,৭৩,০০,০০০ টাকায় বিক্রী করে দেয়া হয়, যা অপসারণ বা পাচারের কাজ চলমান। টেন্ডার প্রাপ্ত ঠিকাদার বিগত সরকারের আমলে সব যন্ত্রপাতি পাচার করতে না পারায় ক্ষমতার পট পরিবর্তনে পরোক্ষ ভাবে ক্ষমতায়িতদের ম্যানেজ করে অব্যাহত রেখেছেন এই পাচার কর্মকাণ্ড। এছাড়াও যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রিজ (জেজেআই), খালিশপুর-ক্রিসেন্ট জুট মিলের সম্পদও পাচার প্রক্রিয়া চলমান। যার প্রতিবাদ করতে যেয়ে ইতোপূর্বে অতীতের ন্যায় যশোরের বর্তমান প্রশাসন দ্বারা মারাত্মক হয়রানির শিকার হয়েছেন স্থানীয় শ্রমিক নেতৃবৃন্দ। 
দাবি সমূহ : (১) নিউজ প্রিন্ট মিলের অবৈধ টেন্ডার বাতিল, লুটপাটকারী, নাটকীয়, ষড়যন্ত্রমূলক এ টেন্ডারের সাথে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় আনা এবং টেন্ডারের নামে ইতোপূর্বে পাচার হয়ে যাওয়া সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে ফেরত প্রদান; (২) বন্ধ সকল কারখানা আধুনিকায়ন করে চালু এবং স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ; (৩) শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ;(৪) লুটপাটের প্রতিবাদকারী শ্রমিকদের হয়রানি বন্ধ; এবং (৫) পাটকল রক্ষা আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের ব্যাপারে সরকারের স্পষ্ট বক্তব্য ও রূপরেখা প্রদান। পরবর্তী ১০ দিনে মধ্যে নিউজ প্রিন্ট মিলসহ অন্যান্য মিলের লুটপাট চূড়ান্ত ভাবে বন্ধ না হলে তথা উপরোলি­খিত ৫ দফা দাবি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা না পেলে আমরা রাজপথে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
সংগঠনের আহŸায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা এড. আ ফ ম মহসীনের সভাপতিত্বে এবং সংগঠনের সদস্য গণসংহতি আন্দোলনের জেলা আহŸায়ক মুনীর চৌধুরী সোহেলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও নিউজপ্রিন্ট মিল এমপ্লয়ীজ ইউনিয়নের সভাপতি নিজামউর রহমান লালু, সিপিবি নেতা মিজানুর রহমান বাবু, আইন ও অধিকার বাস্তবায়ন ফোরামের খুলনা বিভাগীয় সভাপতি এস এম দেলোয়ার হোসেন, আমরা বৃহত্তর খুলনাবাসীর সাধারণ সম্পাদক সরদার আবু তাহের, খুলনা ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (কেডিএস)-এর চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম শিমুল, নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)’র মহানগর সভাপতি শেখ মোঃ নাসির উদ্দিন, খুলনা উন্নয়ন ফোরামের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ডাঃ সৈয়দ মোসাদ্দেক হোসেন বাবলু, নতুনতারা সমাজ কল্যাণ ও সাহিত্য সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সাইফুর মিনা, খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলের শ্রমিক নেতা এস এম রফিকুল ইসলাম, অ্যাড. মেহেদী হাসান, কবি ও সাংবাদিক মোঃ রহমত আলী, আমরা বৃহত্তর খুলনাবাসীর সহ-সভাপতি শেখ ওমর ফারুক কচি, এস এম মিজানুর রহমান, দৈনিক শিরোনাম-এর সম্পাদক ও প্রকাশক, বিশিষ্ট উপস্থাপক ইফফাত সানিয়া ন্যান্সি, খুলনাঞ্চল পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ কমিটির আহŸায়ক মোঃ মোসলেহ উদ্দিন তুহিন, দৈনিক চৌকস-এর বিভাগীয় সম্পাদক মোঃ শাহীন হাওলাদার, খুলনা হার্ডবোর্ড মিলস বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব মোঃ জহুরুল ইসলাম (জব্বার), স¤প্রীতি সমাজ কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাঈদা পারভীন, মানবাধিকার উন্নয়ন প্রকল্প (এইচআরডিপি)-এর সাধারণ সম্পাদক মোঃ জামাল মোড়ল, শিরোমনি যুব উন্নয়ন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক প্রমি আক্তার লিজা, খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য মোস্তফা সাব্বির হাসান বাপ্পী প্রমুখ।  

্রিন্ট

আরও সংবদ