খুলনা | বৃহস্পতিবার | ১৯ জুন ২০২৫ | ৫ আষাঢ় ১৪৩২

ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে শিল্প খাত পরিকল্পিত উদ্যোগ প্রয়োজন

|
১২:০৮ এ.এম | ১৮ জুন ২০২৫


নানামুখী প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দেশের শিল্প খাত আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। ব্যাংক খাতে অস্থিরতা, খেলাপি ঋণ, বিনিয়োগে স্থবিরতা, মূল্যস্ফীতি ও জ্বালানি সংকটে দেশের আর্থিক ভিত্তিই আজ অত্যন্ত নাজুক অবস্থায়। দেশের অর্থনীতি রীতিমতো এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। অর্থনীতির নানা সূচকের পতন ঘটছে। ক্রমেই নেমে আসছে উদ্বেগের ছায়া। সংগত কারণেই সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠছে। সুস্থ ও সবল ব্যাংকিং খাত একটি দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত যেন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে।
গণমাধ্যমের প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর মোট ১৪টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর চরম তারল্য সংকটে পড়েছে ব্যাংকগুলো। এসব দুর্বলতার মধ্যে পাঁচটি ব্যাংককে একীভূত করতে কাজ চলছে প্রথম ধাপে। কঠোর মুদ্রানীতির কবলে পড়ে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। ঋণের সুদহার ১৫ থেকে ১৬ শতাংশে পৌঁছেছে। এতে পুরনো ব্যবসার স¤প্রসারণ যেমন থমকে গেছে, তেমনি নতুন বিনিয়োগ ঠেকেছে তলানিতে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, গত এপ্রিলে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭.৫০ শতাংশ, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২.৪০ শতাংশ কম। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ব্যাংকগুলোর বেসরকারি ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ১৭ লাখ ২১ হাজার ৮২২ কোটি, যা মার্চ মাসে ছিল ১৭ লাখ ১৯ হাজার ৫১২ কোটি টাকা। আগের মাস ফেব্র“য়ারিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৬.৮২ শতাংশ। তার আগের মাস জানুয়ারিতে এই খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭.১৫ শতাংশ।
সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে, বিনিয়োগ হচ্ছে না। বিনিয়োগ না হলে কর্মসংস্থান কমে যাবে। দারিদ্র্য বিমোচনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’ এই অর্থনীতিবিদ আরো বলেন, ‘সা¤প্রতিককালে দেশের বেসরকারি খাতের অবস্থা ভালো যাচ্ছে না। ব্যাংক ঋণই ব্যবসায়ীদের প্রধান ভরসা। কিন্তু সেখানে সুদহার বেশি। বিকল্প অর্থায়নের উৎস হিসেবে পুঁজিবাজারের অবস্থাও ভালো না।’ ডলার সংকট, বিদ্যুৎ-জ্বালানির সংকট, রাজনৈতিক অস্থিরতা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্যোক্তাদের আস্থাহীনতার পাশাপাশি ঋণের উচ্চ সুদহারের কারণে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে শিল্পোৎপাদনও। চলমান অস্থিরতায় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের বিক্রিতেও ধস নেমেছে। চাকরি হারাচ্ছেন কর্মীরা, বাড়ছে বেকারত্ব। শিল্পোদ্যোক্তারা বলছেন, বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত না হওয়ায় নতুন বিনিয়োগে আস্থা পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা।
খেলাপি ঋণের দিক থেকে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত আবারও নতুন এক বিপজ্জনক রেকর্ডে পৌঁছেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে চার লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। মাত্র তিন মাসেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৪ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। এই ঋণের হার এখন দাঁড়িয়েছে মোট বিতরণ করা ঋণের ২৪.১৩ শতাংশে, যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের তুলনায় বিপজ্জনকভাবে বেশি। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এত দিন লুকিয়ে রাখা খেলাপি ঋণ এখন বেরিয়ে আসছে।
ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কর্মসংস্থানের চাহিদা মেটাতে যেখানে দ্রুত শিল্পায়ন প্রয়োজন, সেখানে ঘটছে উল্টোটা। অর্থনীতির এই পতন ঠেকাতে জরুরি ও কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন। আর এ জন্য শিল্প সুরক্ষায় গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি শিল্প-কারখানার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

্রিন্ট

আরও সংবদ