খুলনা | বুধবার | ১৮ জুন ২০২৫ | ৪ আষাঢ় ১৪৩২

নারীদের জন্য ১০০ আসনে রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যমত

এমপিরা কেবলমাত্র অর্থবিল এবং আস্থাভোটে নিজ দলের প্রতি অনুগত থাকবেন

খবর প্রতিবেদন |
০১:২২ এ.এম | ১৮ জুন ২০২৫


সংবিধানের ৭০নং অনুচ্ছেদের বিদ্যমান বিধান পরিবর্তন করে জাতীয় সংসদের সদস্যগণ কেবলমাত্র অর্থবিল এবং আস্থাভোট প্রদানের ক্ষেত্রে নিজ দলের প্রতি অনুগত থাকবেন। কিন্তু, অন্য যেকোনো বিষয়ে তারা স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবেন। এ বিষয়ে সকল রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে।
মঙ্গলবার ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার দ্বিতীয় দিন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফকালে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ এসব কথা বলেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি মোঃ এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. মোঃ আইয়ুব মিয়া, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
৪টি স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদ বিরোধী দলের মধ্য থেকে নির্বাচনের সিদ্ধান্তে ঐকমত্য হয়েছে উলে­খ করে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে পাবলিক একাউন্টস কমিটি, প্রিভিলেজ কমিটি, এস্টিমেশন কমিটি এবং পাবলিক আন্ডারটেকিংস কমিটিসহ জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংক্রান্ত জাতীয় সংসদের স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদে আসনের সংখ্যানুপাতে বিরোধীদলের মধ্য থেকে নির্বাচন করার ব্যাপারে সকলে একমত হয়েছেন। এ ছাড়া সংসদে নারীদের জন্য ১০০ আসনের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্য পোষণ করেছে। তবে, তাদের নির্বাচন পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা অব্যাহত থাকবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, আজকের (গতকাল মঙ্গলবার) আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের সংবিধানে বিদ্যমান ব্যবস্থা পরিবর্তনের ব্যাপারে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ বিষয়ে দু’টি রাজনৈতিক দল ছাড়া বাকী রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে। আগামীতে পুনর্বার আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো যাবে।
এর আগে মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার শুরুতে আগামী জুলাই মাসের মধ্যে ‘জুলাই সনদ’ চূড়ান্তের লক্ষ্যে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ। 
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ‘জুলাই সনদ’ চূড়ান্ত করা হবে জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ‘হয়তো সব বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল একমত হবে না। কিন্তু সবাইকেই ছাড় দেওয়ার মনোভাব নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।’
আলোচনার শুরুতেই আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য যেটা আমরা বারবার বলেছি, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সংকল্পবদ্ধ যে, আমরা জুলাই মাসের মধ্যেই জাতীয় সনদ তৈরি করতে পারব। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো যে সহযোগিতা করছেন সেজন্য দলগুলোর প্রতি এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের প্রতি আমাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।’
আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা আশা করছি প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে, আমাদের পক্ষে অভিষ্ট লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব। আমরা চেষ্টা করছি সমস্ত বিষয়গুলোতে যাতে আমরা সকলে একমত না হলেও সামগ্রিকভাবে বিভিন্ন বিষয়ে মতে আসতে পারি।’
ঐকমত্য কমিশনের প্রধান জানান, এখন থেকে টানা তিন দিন আলোচনা চলবে। এরপরেও আলোচনা অব্যাহত থাকবে। রাজনৈতিক দলগুলো রাজি থাকলে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবারেও আলোচনা করতে রাজি কমিশন।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে গতকালকের আলোচনায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জাতীয় নাগরিক পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ ২৯টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে।
আজ বেলা ১১টায় আবারও রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনায় বসবে কমিশন। এতে আজকের অসমাপ্ত আলোচনাসহ জাতীয় সংবিধান কাউন্সিল (এনসিসি), রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি ও জেলা সমন্বয় কাউন্সিল বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
গতকালকের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি’র সালাহউদ্দিন আহমদ, ইসমাইল জবিহউল­াহ, জাতীয় গণফ্রন্টের টিপু বিশ্বাস, খেলাফত মজলিসের আহমেদ আবদুল কাদের, গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল, এবি পার্টির আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, এনসিপির তাসনিম জারা, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, বিএলডিপির সাহাদাত হোসেন সেলিম, জেএসডির শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, বাংলাদেশ জাসদের মোস্তাক হোসেনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের নেতারা। তবে বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর কোনো প্রতিনিধিকে উপস্থিত ছিলেন না।
ঈদুল আযহার আগে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরু হয়। মঙ্গলবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মূল আলোচনা শুরু করে কমিশন। এই আলোচনায় সংবিধানের ৭০নং অনুচ্ছেদ, সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব, স্থায়ী কমিটির সভাপতি মনোনয়ন, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ এবং প্রধান বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়া এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
এর আগে গত অক্টোবরে গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিনের প্রতিবেদন জমা পড়ে ফেব্র“য়ারি মাসে। এসব প্রতিবেদনের সুপারিশের বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৫ ফেব্র“য়ারি যাত্রা করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তারা সংবিধান সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন এবং জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১৬৬টি সুপারিশের বিষয়ে ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের মতামত জানতে চায়-যাদের মধ্যে ৩৩টি মতামত জানায়। এরপর ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত তাদের সঙ্গে ৪৫টি অধিবেশনের মাধ্যমে প্রথম পর্বের সংলাপ সম্পন্ন করে ঐকমত্য কমিশন।

্রিন্ট

আরও সংবদ