খুলনা | শুক্রবার | ২০ জুন ২০২৫ | ৬ আষাঢ় ১৪৩২

উত্তপ্ত হচ্ছে ইরান-ইসরায়েল নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পাকিস্তান

খবর প্রতিবেদন |
০১:৫৭ এ.এম | ১৯ জুন ২০২৫


দিন যত গড়াচ্ছে ততই উত্তপ্ত হচ্ছে ইরান-ইসরায়েল পরিস্থিতি। দিনকে দিন তীব্র হচ্ছে হামলার মাত্রা। চলমান এই পরিস্থিতিতে দেশে বিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা হুমকি তৈরি হতে পারে বলে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে পাকিস্তান। কাতারি সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য।
মঙ্গলবার, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা দিয়েছেন, ইরানের আকাশ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ইসরায়েল। ইরানের সঙ্গে ৯০৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে পাকিস্তানের। বিশ্লেষকদের মতে, এমন পরিস্থিতিতে ইরানের আকাশের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি ইসরায়েলের হাতে চলে গেলে পাকিস্তানও নিজেকে অনিরাপদ মনে করবে। কারণ, পাকিস্তান ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। তেল আবিবকে যে ইসলামাবাদ শত্র“ মনে করে-সেটিও গোপন নয়।
বার্মিংহাম স্কলার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক করিম আল-জাজিরাকে বলেন, ‘ইসরায়েল ইরানের আকাশ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিলে পাকিস্তানের পশ্চিম সীমান্তে নিরাপত্তা ভারসাম্য পুরোপুরি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। তাই পাকিস্তান কখনোই চাইবে না ইসরায়েল ইরানের আকাশসীমায় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ অর্জন করুক।’
এদিকে, ইরানের সঙ্গেও পাকিস্তানের সম্পর্ক বেশ জটিল। বহু বছর ধরেই একে অপরের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ করে আসছে। দুই দেশের সম্পর্কের সবচেয়ে অবনতি হয় গত বছর। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতেই পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। তাদের ভাষ্য ছিল-বালুচ বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ‘জইশ আল-আদল’-এর ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে তারা। হামলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তানও একই দাবিতে ইরানি ভূখণ্ডে হামলা চালায়। জানায়-ইরানি ভূখণ্ডে বালুচ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে তারা। পরে অবশ্য দু’পক্ষ সংযত হয়।
গত শুক্রবার ইরানে ইসরায়েলের হামলার পরপরই নেতানিয়াহু প্রশাসনের এই পদক্ষেপের নিন্দাও জানিয়েছে পাকিস্তান। যুদ্ধে বন্ধে মধ্যস্থতায়ও আগ্রহী বলে জানিয়েছে ইসলামাবাদ।
তবে, পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় মাথা ব্যথা বালুচ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। বেলুচিস্তানে সম্ভাব্য অস্থিরতাই পাকিস্তানকে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন করছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা। খনিজসম্পদে সমৃদ্ধ এ অঞ্চলটি রাজনৈতিকভাবে বেশ উত্তপ্ত। প্রদেশটি আয়তনে দেশের সবচেয়ে বড়, কিন্তু জনসংখ্যা সবচেয়ে কম। প্রায় দেড় কোটি মানুষের বসবাস সেখানে। ১৯৪৭ সালের পর থেকে অন্তত পাঁচবার বেলুচিস্তানে বিদ্রোহ হয়েছে। কখনো অধিকতর সম্পদ-বণ্টন আবার কখনো স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলন করে আসছে বিদ্রোহীরা। এর জেরে অঞ্চলটিতে দীর্ঘদিন ধরে চলছে সামরিক দমনপীড়ন।
সিঙ্গাপুর ভিত্তিক গবেষক আবদুল বাসিত আল-জাজিরাকে বলেন, ‘যুদ্ধ পরিস্থিতির সুযোগে ইরানে থাকা বিচ্ছিন্নতাবাদীরা পাকিস্তানে প্রবেশের চেষ্টা করতে পারে। যদিও সীমান্ত বন্ধ রেখেছে পাকিস্তান। কিন্তু এই পদক্ষেপ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রবেশ কতটা ঠেকাতে পারবে তা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল।’
ইসলামাবাদ ভিত্তিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইহসানুল­াহ টিপু মেহসুদ মনে করিয়ে দেন, অতীতে পাকিস্তান আঞ্চলিক যুদ্ধে প্রায়ই যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, যেমন আফগানিস্তান যুদ্ধে। তবে এবার পরিস্থিতি আলাদা। সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নি হলেও পাকিস্তানে প্রায় ২৫ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ১৫ শতাংশ শিয়া। তাঁর মতে, ‘পাকিস্তান আগে থেকেই সা¤প্রদায়িক উত্তেজনার শিকার। শিয়া-অধ্যুষিত ইরানের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সামরিক অবস্থান নিলে তা দেশীয় ভাবে বিপজ্জনক প্রতিক্রিয়া ডেকে আনতে পারে।’

্রিন্ট

আরও সংবদ