খুলনা | মঙ্গলবার | ০৮ জুলাই ২০২৫ | ২৩ আষাঢ় ১৪৩২

যশোরে দুই বছর পর করোনায় আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু, শনাক্তে প্রস্তুত যবিপ্রবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর |
০২:০৯ এ.এম | ১৯ জুন ২০২৫


দুই বছর পর যশোরে আবার শুরু হয়েছে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ। চলতি বছরে যশোর জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন করোনায় আক্রান্ত (কোভিড-১৯) শেখ আমির হোসেন পারুল (৬৮) মারা গেছেন। হাসপাতালের আইসিইউ ৫ নাম্বার বেডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার ভোর ৬টার দিকে তিনি মারা যান। এ বছর করোনা আক্রান্ত হয়ে তিনিই প্রথম মৃত্যুবরণ করলেন। মৃত শেখ আমির হোসেন যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার জহুরপুর গ্রামের শেখ মোকসেদ আলীর ছেলে। তিনি যশোর জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মঙ্গলবার দুপুরে রেপিড এন্টিজেন পরীক্ষায় ওই রোগীর করোনা শনাক্ত হয়।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) বজলুর রশিদ টুলু ও আইসিইউ বিভাগের ইনচার্জ ডাক্তার রবিউল ইসলাম তুহিন তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
জানা যায়, গত ১৬ জুন বিকেল ৬টার দিকে হাসপাতালের মডেল ওয়ার্ড থেকে এই রোগীকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। কিডনিজনিত সমস্যায় সার্জারি বিভাগের রোগী হিসেবে গত ৫ জুন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
সূত্র জানায়, গত ৫ জুন আমির হোসেন যশোর জেনারেল হাসপাতালের মডেল ওয়ার্ডে পেট ব্যথা নিয়ে ভর্তি হন। এতদিন তিনি ওই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন। রোববার তার নুতন করে জ্বরসহ বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। পরে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে ওয়ার্ডে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে আইসিইউতে রেফার করেন। কিন্তু সেখান শয্যা না থাকায় তিনি মডেল ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মঙ্গলবার সকালে আইসিইউতে শয্যা ফাঁকা হলে পরিবারের লোকজন তাকে সেখানে নিয়ে যান। পরে ডাক্তার তাকে করোনা পরীক্ষার পরামর্শ দেন। রোগীর স্বজনরা এদিন দুপুরে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে তার রেপিড এন্টিজেন পরীক্ষা করান। পরীক্ষায় তার শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। বুধবার ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এর আগে ২০২৩ সালে যশোর হাসপাতালে সর্বশেষ করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছিল।
আইসিইউ বিভাগের ইনচার্জ ডাক্তার রবিউল ইসলাম তুহিন বলেন, কিডনিজনিত সমস্যায় সার্জারি বিভাগের রোগী হিসেবে গত ৫ জুন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। আইসিইউতে সন্দেহজনক আরও তিনজন রোগী রয়েছেন। তারা করোনায় আক্রান্ত কিনা সেটা পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠানো হয়েছে। এখানেই মারা গেছেন রোগী আমির হোসেন।
হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, আইসিইউতে সন্দেহজনক আরও তিনজন রোগী রয়েছেন। তারা করোনায় আক্রান্ত কিনা সেজন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালে আরও একজন করোনা রোগী আইসোলেশন ওয়ার্ড চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, করোনা সংক্রমণ শুরু হলেও যশোরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় কিটস হাসপাতালে নেই। যেসব রোগী আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের বাইরের বেসরকারি হাসপাতাল থেকে পরীক্ষা করিয়ে নিশ্চিত হন ডাক্তাররা। ওই রোগীরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তারা অন্য রোগীদের সঙ্গেই চিকিৎসা সেবা নিচ্ছিলেন। সে কারণে আরও অনেকেই এতে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারে। র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন্ট কিটস না থাকায় পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। পর্যাপ্ত কিটস থাকলে আরও পরীক্ষা করা যেত। সেই কারণে এখন হাসপাতালে স্বাস্থ্য ঝুঁকির একটা বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তত্ত¡াবধায়ক ডাঃ হুসাইন শাফায়াত জানান, সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কিটসের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। কিটস পেলে করোনা পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ শুরু হবে। এজন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া আছে।
করোনাভাইরাস শনাক্তে প্রস্তুত যবিপ্রবি : যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুল মজিদ বলেছেন, করোনাভাইরাস পরীক্ষা করতে প্রস্তুত রয়েছে যবিপ্রবি। পূর্বের ন্যায় দেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এবারো আমরা প্রস্তুত আছি করোনাভাইরাস পরীক্ষা করতে।
বুধবার বেলা ১১টায় যবিপ্রবির প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলন কক্ষে ডাঃ এম আর মেডিকেল সেন্টারের উদ্যোগে আয়োজিত করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে ‘মাস্ক পরি’ কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে যবিপ্রবি উপাচার্য এসব কথা বলেন।
করোনার নতুন প্রাদুর্ভাবকে সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে বিলবোর্ড স্থাপন, প্রচারপত্র বিলি, সচেতনতা ও প্রতিরোধ বিষয়ে করণীয়, মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে ফার্স্ট এইড বক্স রাখাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে যবিপ্রবি। 
যবিপ্রবি উপাচার্য বলেন, সারা দেশে করোনাভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ বিষয়ে ইতোমধ্যে সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবাইকে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার আহŸান জানাচ্ছি। যবিপ্রবি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সকল ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকা, নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখা, হাসি-কাশির সময় নাক মুখ ঢেকে রাখাসহ স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলুন, তাহলে আমরা সুস্থ পরিবার, সমাজ তথা দেশ এই জাতিকে উপহার দিতে পারবো।
করোনাভাইরাস পরীক্ষা বিষয়ে যবিপ্রবি উপাচার্য আরও বলেন, যবিপ্রবি করোনাভাইরাস পরীক্ষা করতে প্রস্তুত রয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে যশোর জেলার সিভিল সার্জনকে করোনাভাইরাস পরীক্ষার কিট সরবরাহের বিষয়ে অবগত করেছি। কিট সরবরাহ করলেই আমরা করোনাভাইরাস পরীক্ষা করতে পারবো। দেশের মানুষের প্রতি সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে এবং এই জাতিকে সুন্দর ও সাবলীল রাখতে আমরা সবসময় কাজ করতে প্রস্তুত আছি।

্রিন্ট

আরও সংবদ