খুলনা | শনিবার | ২১ জুন ২০২৫ | ৭ আষাঢ় ১৪৩২

সড়কে ঝরছে তাজা প্রাণ : মোটরসাইকেল চলাচল নিয়ন্ত্রণ করুন

|
১২:০৬ এ.এম | ২০ জুন ২০২৫


সা¤প্রতিক বছরগুলোতে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াতের ক্ষেত্রে মোটরসাইকেলের ব্যবহার অনেক বেড়েছে। গত ১০ বছরে বাইকের সংখ্যা অন্তত চার গুণ বেড়েছে, যা দেশের মোট মোটরযানের প্রায় ৭১ শতাংশ। জ্যাম-যানজটের রাস্তায় যোগাযোগব্যবস্থায় এর ইতিবাচক প্রভাব থাকলেও, এর মাশুল হিসেবে সড়ক দুর্ঘটনার ভয়াবহ চিত্র দেখা যাচ্ছে। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের গত সাড়ে পাঁচ মাসে বাইক দুর্ঘটনায় এক হাজার ৩৭৪ জন প্রাণ হারিয়েছে, যা মোট সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রায় ৪১ শতাংশ। এই পরিসংখ্যান সত্যি উদ্বেগজনক।
বেপরোয়া গতি, পাশ কাটানোর চেষ্টা, বারবার লেন পরিবর্তন, ট্রাফিক আইন অমান্য করা এবং চলন্ত অবস্থায় মোবাইলে কথা বলা-এগুলো বাইক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হেলমেট ব্যবহার না করা বা নিম্নমানের হেলমেটের ব্যবহার, যা দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মানসম্মত হেলমেট ব্যবহার করলে দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার ঝুঁকি ৫০ শতাংশ এবং আহত হওয়ার ঝুঁকি ৭০ শতাংশ কমানো সম্ভব। অথচ আমাদের দেশে হেলমেটের গুণগত মান নিয়ে এখনো প্রশ্ন রয়ে গেছে।
দুর্ঘটনার আরেকটি বড় কারণ হলো দেশের দুর্বল সড়ক অবকাঠামো। বাইকের জন্য আলাদা লেনের অভাব এবং চালকদের নিরাপত্তা সরঞ্জাম (সেফটি গার্ড) পরিধানে অনীহা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মোঃ হাদিউজ্জামান বলেছেন, ‘আমাদের দেশে অনেকে প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ ছাড়াই মোটরসাইকেল চালানো শিখছেন।ফলে তাঁরা সড়ক পরিবহন আইন ও ট্রাফিক নিয়ম-নীতি সম্পর্কে অজ্ঞ থাকছেন, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।’ অন্যদিকে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান উলে­খ করেছেন, কিশোরদের হাতে বাইক চলে যাওয়া এবং তাদের বেপরোয়াভাবে বাইক চালানোও দুর্ঘটনার হার বৃদ্ধির একটি বড় কারণ। বাস, ট্রাক, লরি ও পিকআপের বেপরোয়া গতি এবং বাইকের প্রতিযোগিতাও দুর্ঘটনা বাড়াচ্ছে। এর সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, যা সত্যি সড়ক নিরাপত্তার প্রশ্নে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
প্রথমত, লাইসেন্সবিহীন ও ত্র“টিপূর্ণ বাইক চলাচল কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের প্রক্রিয়াটি আরো যথাযথ ও প্রশিক্ষণভিত্তিক করতে হবে। দ্বিতীয়ত, ট্রাফিক পুলিশকে আরো তৎপর হতে হবে, যাতে বাইকচালকরা ট্রাফিক আইন মেনে চলেন। তৃতীয়ত, বাইকচালক ও আরোহী উভয়কেই অবশ্যই মানসম্মত হেলমেট পরতে হবে এবং বিএসটিআইকে হেলমেটের গুণগত মান নিশ্চিত করতে সক্ষমতা বাড়াতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য উন্নত দেশগুলোর মতো গণপরিবহন ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার দিয়ে ছোট যানবাহনের চলাচলকে নিরুৎসাহ করতে হবে। পাশাপাশি সড়ক থেকে মোটরসাইকেলের সংখ্যা কমাতে জাপানসহ অন্যান্য দেশের সফল অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে পারি। ব্যক্তিগত সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সরকারি পর্যায়ে কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমেই সড়কে বাইক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

্রিন্ট

আরও সংবদ