খুলনা | রবিবার | ২২ জুন ২০২৫ | ৯ আষাঢ় ১৪৩২

ইরানে হামলার জল্পনা

প্রশান্ত মহাসাগরের দিকে যাচ্ছে মার্কিন বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমান

খবর প্রতিবেদন |
১১:৪০ পি.এম | ২১ জুন ২০২৫

 

প্রশান্ত মহাসাগরের গুয়াম ঘাঁটির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে শক্তিশালী ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা বহনে সক্ষম যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমান। শনিবার গুয়ামের দিকে মার্কিন এই বিমানের অগ্রসর হওয়ার তথ্য দেশটির সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ভূগর্ভস্থ ফোরদো পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলার প্রস্তুতি হিসেবে এই যুদ্ধবিমান গুয়ামে সরিয়ে নিচ্ছে কি না, তা নিয়েও জল্পনা তৈরি হয়েছে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজ বলছে, মিসৌরির জনসন কাউন্টিতে অবস্থিত হোয়াইটম্যান বিমান ঘাঁটি থেকে দেশটির বিমান বাহিনীর অন্তত ২ থেকে ৪টি বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমান ও ৬টি রিফুয়েলিং বিমান গুয়ামের নৌ ঘাঁটির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে।

তবে এসব বিমান ভারত মহাসাগরের দিয়েগো গার্সিয়া দ্বীপের দিকে অগ্রসর হবে কি না, সেটি এখনও পরিষ্কার নয়। ব্রিটিশ মালিকানাধীন এই দ্বীপটি যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের যৌথ সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করা হয়; যা ইরান থেকে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক অভিযানের জন্য আদর্শ অবস্থান হিসেবে বিবেচনা করা হয় ভারত মহাসাগরীয় দিয়েগো গার্সিয়া দ্বীপকে। গত মার্চে যুক্তরাষ্ট্র সেখানে ছয়টি বি-২ বোমারু মোতায়েন করেছিল। ইয়েমেনে এক মাসব্যাপী বিমান হামলা চালানোর কাজে ব্যবহৃত হয় এসব বিমান। সম্প্রতি সেখানে বি-২ এর জায়গায় অপেক্ষাকৃত পুরোনো বি-৫২ বিমান মোতায়েন করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর বহরে থাকা বি-২ স্টিলথ যুদ্ধবিমান বিশ্বে একমাত্র বিমান; যা ভারী বাঙ্কার বাস্টার বোমা বহন ও ইরানের ফোরদোর মতো গভীর পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংসে হামলা চালাতে পারে। ইরানের ফোরদো শহর কোম নগরী থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার উত্তরে একটি পাহাড়ের নিচে অবস্থিত।

নিউইয়র্ক টাইমস বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি দিয়েগো গার্সিয়া থেকে হামলা চালাতে চায়, তাহলে ব্রিটেনের অনুমতির প্রয়োজন হবে। তবে গুয়াম ঘাঁটি থেকে বিমান ছাড়লে অনুমতির দরকার পড়বে না। কারণ এই ঘাঁটি যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ড এবং ফোরদো থেকে প্রায় ১২ হাজার ৮০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

এর আগে, গত বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, ইরানে যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালাবে কি না; সেই বিষয়ে তিনি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রশাসন ইরানে ইসরায়েলি যুদ্ধ যোগ দেওয়া নিয়ে মিশ্র বার্তা দিচ্ছে। একদিকে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে অবস্থানের কথা জানালেও ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে হত্যার হুমকিও দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

বুধবার ট্রাম্প বলেছিলেন, আমি ইরানের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেব, তা কেউ জানে না। তিনি বলেন, ইরানের সঙ্গে আগামী দিনগুলোতে আলোচনা হতে পারে বা নাও হতে পারে—এই বিবেচনায় আমি দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেব, সেখানে যাব কি না।

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা কিছু সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ওয়াশিংটনের সিদ্ধান্তে দেরি হলে তারা মার্কিন সহায়তা ছাড়াই ফোরদোতে গোপন অভিযান চালাতে পারে। ঠিক কেমন ধরনের অভিযান হবে, তা স্পষ্ট নয়।

যুদ্ধ কত দিন চলবে তা নিয়েও ইসরায়েলের অবস্থান স্পষ্ট নয়। কেউ ২-৩ সপ্তাহ বললেও ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান এয়াল জামির শুক্রবার বলেছিলেন, অভিযানের সময়কাল ‌‌দীর্ঘায়িত হতে পারে। আর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ইসরায়েলি সম্প্রচারমাধ্যম কান-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, অভিযান নির্ধারিত সময়ের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ইরানের সব পারমাণবিক স্থাপনা এমনকি ফোরদোতেও আঘাত হানতে পারে ইসরায়েলি বাহিনী। তবে এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী সহায়তা করবে কি না সেই বিষয়ে কিছু জানাননি তিনি।

নেতানিয়াহু বলেন, ‌‌আমরা আমাদের সব লক্ষ্য অর্জন করব এবং তাদের সব পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাত হানব। আমাদের সেই সক্ষমতা রয়েছে। তবে ট্রাম্প এই হামলায় যুক্ত হবেন কি না, সেটি সম্পূর্ণ তার নিজের সিদ্ধান্ত।

সমালোচকরা বলছেন, হোয়াইট হাউসে ফেরার পর গত পাঁচ মাসে ট্রাম্প অনেকবার বিভিন্ন ইস্যুতে (রাশিয়া-ইউক্রেন, বাণিজ্য ইত্যাদি) সময়সীমা বেঁধে দিলেও পরে সেগুলো স্থগিত করেছেন কিংবা ছাড় দিয়েছেন।

্রিন্ট

আরও সংবদ