খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২৬ জুন ২০২৫ | ১২ আষাঢ় ১৪৩২

১০ মাস ধরে বিএল কলেজে ছাত্রাবাস বন্ধ বিপাকে শিক্ষার্থীরা, সংস্কারে গাফিলতি

এন আই রকি |
০২:১১ এ.এম | ২৪ জুন ২০২৫


দক্ষিণ বঙ্গের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ সরকারি ব্রজলাল (বিএল) কলেজ। ১৯০২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজটিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরসহ ২২টি বিভাগে নিয়মিত ও অনিয়মিত মিলিয়ে প্রায় ৩৮ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। গেল ৫ আগস্টের পর কলেজটির শিক্ষার পরিবেশ থেকে শুরু করে নানান বিষয়ে উলে­খযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। ছাত্রদল, ছাত্রশিবিরসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন কলেজটিতে তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরাসহ নানান পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে কলেজটির বড় সমস্যা এখন বন্ধ থাকা ছাত্রাবাসগুলো নিয়ে।
প্রায় ১০ মাস ধরে কলেজের পাঁচটি ছাত্রাবাস বন্ধ রয়েছে। যার ফলে দূর-দূরান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীরা চরম বিপাকে পড়েছে। কোনো রকমে চলছে কলেজটির তিনটি ছাত্রীনিবাস। কর্তৃপক্ষের দাবি, রাজনৈতিক চাপ এবং ছাত্রাবাস সংস্কারে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও প্রকৌশলীর গাফিলতির কারণে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, বিগত সরকারের আমলে সরকারি বিএল কলেজে ছাত্রলীগের একক আধিপত্য ছিল। ছাত্রাবাস থেকে শুরু করে কলেজ প্রশাসন সবই তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ছাত্রাবাসগুলোতে আসন বরাদ্দের ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক সুপারিশের বাইরে কোনো কাজ হতো না। ছাত্রাবাসে আসন নিতে গেলে ছাত্রলীগের রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক ছিল। এছাড়া ছাত্রাবাসগুলোতে মাদক, জুয়া ও অবৈধ অস্ত্রের যোগান ছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে। গেল ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন থেকে কলেজের পাঁচটি ছাত্রাবাসের সকল ছাত্র যে যার মতো করে চলে যায়। যাওয়ার সময় ব্যাপক লুটপাট ও ভাঙচুর হয় অনেক ছাত্রাবাসে। পরবর্তীতে গেল রমজানে ড. জোহা ছাত্রাবাসে একটি সংগঠনের কয়েকজন ছাত্র অবস্থান নিলেও কলেজ প্রশাসন পরবর্তীতে তাদের সরে যেতে বলে।
সরেজমিনে কলেজে দেখা যায়, শহিদ তিতুমীর ছাত্রাবাসের অবস্থা খুবই নাজুক। এটি পুরোপুরি বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এছাড়া কবি নজরুল ও সুবোধ চন্দ্র ছাত্রাবাসেরও করুণ অবস্থা। দরজা, জানালা ভেঙে গেছে, পলেস্তারা খসে পড়ছে। ছাত্রাবাসগুলোর ভেতর জঙ্গলের সৃষ্টি হয়েছে। এগুলোর দ্রুত সংস্কার প্রয়োজন। কলেজের পূর্ব পাশে অবস্থিত হাজী মহসিন এবং ড. জোহা ছাত্রাবাস দু’টি স¤প্রতি রঙ করা হয়েছে। পাঁচটি ছাত্রাবাসের মধ্যে এই দু’টি ছাত্রাবাস এখন বসবাসের উপযোগী রয়েছে। এছাড়া বেগম খালেদা জিয়া, বেগম মন্নুজান এবং বেগম ফজিলাতুন্নেসা ছাত্রীনিবাসগুলো কোনো রকমে চলছে। ৫ আগস্টের পর ছাত্রীনিবাসে কেউ না থাকলেও পরবর্তীতে আস্তে আস্তে ছাত্রীরা আসতে শুরু করেছে।
আরো জানা যায়, কলেজটিতে স¤প্রতি ছাত্রদল ও ছাত্র শিবিরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হয়েছে। যার ফলে এই ছাত্র সংগঠন দু’টি খুবই সক্রিয়। ছাত্রাবাসগুলোতে আসন বরাদ্দের প্রতিযোগিতা রয়েছে এই দুই ছাত্র সংগঠনের। স¤প্রতি ড. জোহা ও হাজী মহসিন ছাত্রাবাসের আসন বরাদ্দের জন্য আবেদন চাওয়া হয়েছে। আবেদনকারীদের বেশির ভাগই ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির সমর্থক। বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর জেলাসহ খুলনা বিভাগের বিভিন্ন স্থান থেকে এই কলেজে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করতে আসেন। ছাত্রাবাস বন্ধ থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি, পাঁচটি ছাত্রাবাস পূর্ণাঙ্গ রূপে চালু করাসহ কলেজের শিক্ষার্থীদের অনুপাত হিসাব করে আরও ছাত্রাবাস নির্মাণ করা হোক।
বিএল কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম জানান, ছাত্রাবাস বন্ধ থাকায় পরীক্ষা দিতে এবং ক্লাসে নিয়মিত উপস্থিত হতে শিক্ষার্থীদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। তিনি প্রত্যাশা করেন, মেধার পাশাপাশি দূরত্ব ও দারিদ্র্য বিবেচনা করে ছাত্রাবাসগুলোতে ভবিষ্যতে আসন বরাদ্দ দেওয়া হবে।
বিএল কলেজ ছাত্রশিবিরের সভাপতি হজরত আলী বলেন, ৬০ শতাংশের কম উপস্থিতি থাকলে এখন পরীক্ষা দিতে দেওয়া হয় না। দূর-দূরান্ত থেকে যেসব শিক্ষার্থী এই কলেজে আসে তাদের কলেজের বাইরে থেকে পড়াশোনা করাটা খুব ব্যয়বহুল। তিনি মেধার ভিত্তিতে পর্যাপ্ত আবাসিক হলের সুব্যবস্থা করার পাশাপাশি সকল ছাত্রাবাস খুব দ্রুত খুলে দেওয়ার দাবি জানান।
বিএল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ আব্দুল মান্নান  জানান, ৫ আগস্টের পর তারা সকল ছাত্রাবাস পরিদর্শন করেন। শহিদ তিতুমীর ছাত্রাবাসটি খুব দ্রুতই পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হবে। কবি নজরুল ও সুবোধ চন্দ্র ছাত্রাবাস দুটি সংস্কার না করে আসন বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব নয়।
বিএল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর শেখ মোঃ হুমায়ুন কবীর  জানান, গত বছর হলগুলোতেও ভাঙচুর হয়েছিল। ঠিকাদার ও প্রকৌশলীরা মিলে সেগুলো ঠিকমতো সংস্কার করতে পারেননি। তাছাড়া হলগুলোতে কোন ভিত্তিতে আসন দেওয়া হবে তা নিয়েও ঝামেলা আছে।

্রিন্ট

আরও সংবদ