খুলনা | শুক্রবার | ২৭ জুন ২০২৫ | ১৩ আষাঢ় ১৪৩২

দলটির সভাপতি স্বামী, সম্পাদক স্ত্রী, বাসা কেন্দ্রীয় কার্যালয়

খবর প্রতিবেদন |
০২:০০ এ.এম | ২৫ জুন ২০২৫


নির্বাচন কমিশনে (ইসি) রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে ‘বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক পার্টি’। আবেদনে দলটির কার্যালয়ের ঠিকানা দেওয়া আছে ৬৩৯/বি, পেয়ারাবাগ, মগবাজার, ঢাকা। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে তিনটায় ওই ঠিকানায় গিয়ে দেখা যায়, পলেস্তারা খসে যাওয়া দেয়াল ও ওপরে টিনের ছাউনি দেওয়া এক কক্ষের একটি ঘর। ঘরে কেউ আছেন কি না বলে কিছুক্ষণ ডাকাডাকি করেও সাড়া মিললো না। পরে দল নিবন্ধনের আবেদনে নির্বাচন কমিশনে দেওয়া দলটির সভাপতি মোঃ জাহাঙ্গীর হাওলাদারের মুঠোফোন নম্বরে কল করলে তাঁর স্ত্রী মাহমুদা সুলতানা ধরেন। জাহাঙ্গীর হাওলাদার বাসায় আছেন বলে জানান তিনি। এরপর গায়ে গামছা জড়িয়ে বাসা থেকে বের হয়ে আসেন বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি।
নির্বাচন কমিশনে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের আবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর হাওলাদার সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘নিবন্ধনের জন্য আবেদন সাবমিট (জমা) করছি আরকি। ২০১১ সালে পার্টিটা গঠন করেছি। আমি যখন তিতুমীর কলেজে পড়ালেহা করি, তখন করি আরকি। এখানে অফিস নেব, চিন্তা করছি আরকি। আগে দলটল ঠিক অইলে এর পরে নেব আরকি।’
দলের কোনো কমিটি আছে কি না জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর হাওলাদার বলেন, ’৭৫ সদস্যের কমিটি আছে। এ কমিটিতে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের লোকজন আছে। দলের সাধারণ সম্পাদক কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁর স্ত্রী মাহমুদা সুলতানা বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক পার্টির সেক্রেটারি।
দলের কার্যালয়ের বিষয়ে জাহাঙ্গীর হাওলাদার বলেন, ‘পর্যায়ক্রমে সবকিছু হবে, কোনো কিছু বাদ থাকবে না। নিবন্ধন অইলে একটা একটা করে হতে থাকবে। মানে কোনো কিছু বাদ থাকবে না, আল­াহর রহমতে যদি হয় নিবন্ধন। আপনারা একটু পাশে থাইকেন।’
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত ১০ মার্চ আগ্রহী নতুন দলের কাছ থেকে নিবন্ধনের আবেদন আহŸান করে নির্বাচন কমিশন। ২০ এপ্রিল পর্যন্ত ৬৫টি দল আবেদন করে। পরে এনসিপিসহ কিছু দলের অনুরোধে নিবন্ধনের আবেদনের সময়সীমা দুই মাস বাড়ানো হয়। এই সময়সীমা গত রোববার শেষ হয়।
শেষ দুই মাসে আবেদন জমা পড়ে ৮২টি। এর মধ্যে রোববার শেষ দিনেই আবেদন জমা পড়ে ৪২টি। নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন জমা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) ১৪৭টি দল। দুই দফায় নিবন্ধনের জন্য আবেদনপত্র জমা দেওয়া দলগুলোর নামের তালিকা গতকাল সোমবার প্রকাশ করেছে কমিশন।
নির্বাচন কমিশনে (ইসি) রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা আরেকটি দল হচ্ছে ‘মুসলিম সেইভ ইউনিয়ন’। দলটির কার্যালয়ের ঠিকানা দেওয়া আছে রমজান ট্রেডিং ৮৩ (৩য় ও ৪র্থ তলা), লেন নং-২, শান্তিনগর বাজার, ঢাকা। তবে ওই ঠিকানায় গিয়ে কোনো রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
‘মুক্ত রাজনৈতিক আন্দোলন’-এর কার্যালয় হিসেবে এই আবাসিক ভবনের ঠিকানা দেওয়া হলেও বাসিন্দারা দলটির নাম কখনো শোনেননি বলে জানান
‘মুক্ত রাজনৈতিক আন্দোলন’-এর কার্যালয় হিসেবে এই আবাসিক ভবনের ঠিকানা দেওয়া হলেও বাসিন্দারা দলটির নাম কখনো শোনেননি বলে জানান। 
মুঠোফোনে কল করলে দলটির সভাপতি আবদুল মান্নান মিয়া জানান, এখন তাঁর কার্যালয় এই ঠিকানায় নেই। কোথায় আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মালিবাগের প্রশান্তি হাসপাতালের পাশে একটি ভবনে আছে। তবে এখন সেটি বন্ধ আছে, কোনো নেতা-কর্মী এখন অফিসে নেই বলে জানান। ওই কার্যালয়ের ঠিকানা চাইলে তিনি স্পষ্ট ঠিকানা দিতে রাজি হননি। আবদুল মান্নান বলেন, ‘পরে এসে আপনি আমার সাথে দেখা করেন।’
নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে ‘বাংলাদেশ জাগ্রত পার্টি’। দলটির কার্যালয়ের ঠিকানা দেওয়া আছে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এ্যাভিনিউ, নর্দান ইউনিভার্সিটি বিল্ডিং (লিফট-১২)। আজ বিকেলে সেখানে গিয়ে কোনো কার্যালয় খুঁজে পাওয়া যায়নি। ভবনের ১২ তলায় ‘টেকবন্ড আইটি লি.’, ‘বর্তমান বাংলাদেশ’ ও ‘বায়জিদ স্টিল’ নামের কয়েকটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় দেখা যায়। ওই তলায় একটি প্রতিষ্ঠানের অভ্যর্থনা ডেস্কে বসা ছিলেন মোঃ সাব্বির নামের একজন। সেখানে ‘বাংলাদেশ জাগ্রত পার্টি’ নামে কোনো রাজনৈতিক দলের কার্যালয় আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁর জানামতে এমন কোনো দলের কার্যালয় সেখানে নেই।
নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা আরেকটি দল ‘মুক্ত রাজনৈতিক আন্দোলন’। আবেদনে দলটির কার্যালয়ের ঠিকানা দেওয়া আছে ৩৯০ ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, হাতিরপুল, বাংলামোটর, ঢাকা। দীর্ঘ সময় খোঁজাখুঁজির পর এই ঠিকানায় একটি পুরনো আবাসিক ভবন পাওয়া যায়। সেখানে নেই কোনো দলীয় কার্যালয়। আবাসিক ভবনটিতে ভাড়া থাকা একজন নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, এমন কোনো দলের নামই শোনেননি তাঁরা।
এ ছাড়া নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করা ‘বাংলাদেশ মাতৃভূমি দল’, ‘জনতার কথা বলে’ ও ‘ডেমোক্রেটিক লীগ’ নামের কয়েকটি দলের কার্যালয়ের খোঁজ নিতে গিয়ে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ের ভেতরে কক্ষের সামনে সাইনবোর্ড সাঁটানো পাওয়া যায়। তবে কক্ষগুলো ছিল বন্ধ। 
সূত্র : প্রথম আলো অনলাইন।

্রিন্ট

আরও সংবদ