খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২৬ জুন ২০২৫ | ১২ আষাঢ় ১৪৩২

অন্তর্বর্তী সরকারের বাজেট : কালো টাকা সাদা না করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত

|
১২:২০ এ.এম | ২৬ জুন ২০২৫


অন্তর্বর্তী সরকার যে জনমতকে সম্মান জানায়, তার প্রমাণ পাওয়া গেল ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের চূড়ান্ত অনুমোদনে। ২ জুন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট প্রস্তাবকালে ফ্ল্যাট ও ভবন নির্মাণে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কালোটাকা সাদা করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। বাজেট চূড়ান্ত অনুমোদনের সময় তা বাদ দেওয়া হয়।
অতীতে এমন সুযোগ বারবার দেওয়া হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রগুলো বলছে, এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে অপ্রদর্শিত প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকা ঘোষণায় এসেছে; অর্থাৎ সাদা হয়েছে। সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশ থেকে পাচার করা টাকা ফেরত আনার সুযোগ দেওয়া হলেও কেউ এ সুযোগ নেননি।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ও অর্থনীতিবিদেরা বাজেটে কালোটাকা সাদা করার প্রতিবাদ করেছিলেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, এর মাধ্যমে সরকার নিয়মমাফিক করদাতাদের প্রতি অবিচার করেছে। এ রকম কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হলে সৎ করদাতারা নিরুৎসাহিত হন।
রোববার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বাজেট চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রহিতসহ ২ জুন ঘোষিত বাজেটে আয়কর, শুল্ক, ভ্যাটসংক্রান্ত কিছু পরিবর্তন আনা হয়। রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাজেট কার্যকর করা হবে।
চূড়ান্ত অনুমোদনে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে ৯১ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রস্তাব করা হয়েছিল ৮১ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা। এর অর্থ ১০ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। যদিও ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার ব্যয়ের বাজেট অপরিবর্তিতই থাকছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় শুল্ক-করহারেও কিছু পরিবর্তন করেছে। পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানি, যাদের পরিশোধিত মূলধনের অনূন্যতম ১০ শতাংশ শেয়ার আইপিও বা সরাসরি তালিকাভুক্তির মাধ্যমে হস্তান্তর হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে আয়ের সাড়ে ২২ শতাংশ করারোপ করা হয়েছে। তবে ব্যাংক লেনদেনের শর্তে এ হার হবে ২০ শতাংশ।
এছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ, বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বা কেবল তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষাদানে নিয়োজিত বেসরকারি কলেজের করহার ১৫ শতাংশের স্থলে ১০ শতাংশ করার কথা বলা হয়েছে। সম্পত্তি হস্তান্তর থেকে কর সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কর কর্তনের হার ৮ শতাংশ, ৬ শতাংশ ও ৪ শতাংশের স্থলে কমিয়ে যথাক্রমে ৫ শতাংশ, ৩ শতাংশ ও ২ শতাংশ করা হয়েছে।
সব মিলিয়ে বাজেটটিকে মন্দের ভালো বলা যায়। বাজেট পেশের পর দেওয়া সংবাদ সম্মেলনে অর্থ উপদেষ্টাও বাজেট কিছুটা গতানুগতিক হয়েছে বলে স্বীকার করেছিলেন। এবারের বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, আর আয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪৪ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা দেশীয় ও বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নিতে হবে। দেশীয় উৎস থেকে বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ কমে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। আর বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নিলে তার সুদ গুণতে হবে জনগণকেই।
এবারের ইতিবাচক দিক হলো বাজেট ঘোষণার পর নিত্যপণ্যের দাম খুব একটা বাড়েনি। আর উদ্বেগের বিষয় হলো বাজেট শেষ না হতেই সরকার পরিবর্তন হতে পারে। প্রধান উপদেষ্টা আগামী বছর ফেব্র“য়ারিতে নির্বাচনের পূর্বাভাস দিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে অর্থবছরের শেষ চার মাস বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকছে না। নতুন সরকার আসবে। তাদের অর্থনৈতিক নীতি ও জনগণের কাছে কী প্রতিশ্র“তি থাকে, তার ওপরও বাজেটের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে।
অন্তর্বর্তী বা নির্বাচিত যে-ই সরকারই থাকুক, বাজেট বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। অন্যথায় বাজেট যত ভালো হোক না কেন, তার সুফল বৃহত্তর জনগণ পাবেন না।

্রিন্ট

আরও সংবদ