ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি ও নাশকতায় জড়িত থাকার অভিযোগে ইরানে ১২ দিনের সংঘাতে ৭০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংস্থা ফারস নিউজ এজেন্সি। বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ফারস জানায়, “এই ভাড়াটেরা মূলত গুপ্তচর ও নাশকতামূলক নেটওয়ার্কের অংশ হিসেবে কাজ করছিল। জনগণের অভিযোগ ও গোয়েন্দা অভিযানের ভিত্তিতে তাদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হয়েছে।”
ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ স্বীকার করেছে, তারা ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’-এর অংশ হিসেবে ইরানে গুপ্তচর ও গোপন অভিযান পরিচালনা করেছে। ১৩ জুন এই অভিযানের সূচনা হয় ইরানে ইসরায়েলের নজিরবিহীন হামলার মাধ্যমে। মোসাদ তাদের এজেন্টদের গোপন তৎপরতার ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে দেখা যায় তারা ইরানের ভেতরে ঘাঁটি তৈরি করে ড্রোন হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এই ঘটনায় ইরানের নিরাপত্তা মহলে চরম উদ্বেগ তৈরি হয়। সরকার বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইসরায়েলের পক্ষে মতামত প্রকাশ করেছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে “সমাজের মনস্তাত্তি¡ক নিরাপত্তা বিঘিœত করার” অভিযোগ আনা হয়।
ফারস জানিয়েছে, ইরানের কেরমানশাহ, ইসফাহান, খুজেস্তান, ফারস এবং লোরেস্তান প্রদেশে এসব গ্রেফতার কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। তবে রাজধানী তেহরানে কতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সে বিষয়ে এখনও বিস্তারিত জানায়নি কর্তৃপক্ষ।
ইরানের অন্যান্য সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সংঘাত শুরুর পর থেকে বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজন ইসরায়েলি এজেন্টকে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছে।
গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ইরানে তিনজনের ফাঁসি : ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ইরান তিন ব্যক্তিকে ফাঁসি দিয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির বিচার বিভাগের সংবাদ সংস্থা মিজান। বুধবার ইরানের বিচার বিভাগ এ তথ্য জানিয়েছে। মিজানের বরাতে সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, অভিযুক্তরা ইরানে হত্যাকান্ড চালানোর উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সরঞ্জাম পাচারের চেষ্টাও করেছিলেন। ফাঁসি দেওয়া তিনজনের নাম প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। তারা হলেন ইদ্রিস আলী, আজাদ শোজাই ও রাসুল আহমদ রাসুল। তাদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের পক্ষে সহযোগিতামূলক কর্মকান্ড পরিচালনার অভিযোগ আনা হয়েছিল এবং সেই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয় তারা।
ইরানের বিচার বিভাগের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইদ্রিস আলী, আজাদ শোজাই ও রাসুল আহমদ রাসুল নামের তিন ব্যক্তি হত্যাকান্ড চালানোর উদ্দেশ্যে দেশটির ভেতরে সরঞ্জাম ঢোকানোর চেষ্টা চালিয়েছিলেন। জায়নবাদী শাসককে (ইসরায়েল) সহযোগিতা করার অভিযোগে তাদের গ্রেফতার করে বিচার করা হয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আজ সকালে রায় কার্যকর করা হয়েছে এবং তাদের ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে।
এদিকে, রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্পর্কিত নূর নিউজ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সা¤প্রতিক ১২ দিনের সংঘাত চলাকালে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে আরও ৭০০ জনকে গ্রেফতার করেছে ইরান।
তেহরান দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছে, তাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিঘিœত করতে ইসরায়েল নানা ধরনের গোপন তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের মামলাকে তারা জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার অংশ হিসেবে বিবেচনা করে।