খুলনা | শুক্রবার | ২৭ জুন ২০২৫ | ১৩ আষাঢ় ১৪৩২

‘ইরানের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের মূল্য চড়া হবে’

ইসরায়েলের ধ্বংস ঠেকাতে যুদ্ধে জড়ায় যুক্তরাষ্ট্র : খামেনি

খবর প্রতিবেদন |
০২:১২ এ.এম | ২৭ জুন ২০২৫


ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল­াহ আলী খামেনি দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি যুদ্ধে প্রবেশ করার কারণ তাদের আশঙ্কা ছিল, যদি তারা তা না করে, তাহলে ইসরায়েল ‘সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যাবে’।
বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বার্তায় তিনি এই কথা বলেন। গত ২৪ জুন ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হয়। তবে দুইদিন কেটে গেলেও এর আগে খামেনির কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর তিনি জাতির উদ্দেশ্যে বার্তা দিলেন।
খামেনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধ থেকে কোনো সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। ইরান ‘বিজয়ী’ হয়ে উঠতে পেরেছে এবং ‘আমেরিকার মুখে এক কঠিন থাপ্পড় দিয়েছে’।
তিনি বলেছেন, ‘ইসলামী প্রজাতন্ত্রের আঘাতে জায়নিস্ট শাসন ব্যবস্থা তাদের সব দাবি ও অহংকারের সাথে প্রায় চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গিয়েছে।’
পৃথক ভিডিও বার্তায় খামেনি বলেছেন, “ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে আক্রমণ করে আমেরিকা উলে­খযোগ্য কিছু অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে, যা ঘটেছে তার একটি ‘অস্বাভাবিকভাবে অতিরঞ্জিত’ বর্ণনা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এটা স্পষ্ট ছিল তাকে এটা করতে হয়েছিল, যে কেউ শুনলেই বলতে পারে আমেরিকা সত্যকে বিকৃত করার জন্য জিনিসগুলো অতিরঞ্জিত করেছে।”
তিনি বলেন, আমরা এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটিতে আক্রমণ করেছি এবং এখানে তারা এটাকে ছোট করার চেষ্টা করছে। 
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আরও দাবি করেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের হামলা পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণের ইস্যু নয় বরং ইরানকে আত্মসমর্পণ করাতেই ছিল’। 
এই বার্তা প্রকাশের কয়েক মিনিট আগে আয়াতুল­াহ খামেনি এক এক্স বার্তায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিজয়ের জন্য জনগণকে অভিনন্দন জানান।
এ জন্য তিনি দেশবাসীকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, ‘আপনাদের ঐক্যই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আমাদের বিজয়ী করেছে। দেশের ৯ কোটি জনগণ জায়োনিস্টদের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়ে লড়াই করেছে। আমাদের বীর সেনাদের সহায়তা করেছেন, সাহস যুগিয়েছেন।’
অন্যদিকে দখলদার ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধের পর জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছেন ইরানের সুপ্রিম নেতা আয়াতুল­াহ আলী খামেনি। বৃহস্পতিবার টিভিতে দেওয়া  ভাষণে তিনি বলেন, “ভুয়া ইহুদিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে জয়ের জন্য আপনাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। যেটি পরাজিত হয়েছে এবং ইসলামিক রিপাবলিকের ধাক্কায় চূর্ণ-বিচূর্ণ ও ধ্বংস হয়েছে। ইহুদিবাদীরা অনেক উচ্চবাচ্য করলেও ইরানের ধাক্কায় তারা পতনের দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছিল।”
তিনি আরও বলেছেন, মার্কিন সরকার যুদ্ধে সরাসরি জড়িত হয়েছিল, কারণ তারা বুঝতে পেরেছিল যদি তারা হস্তক্ষেপ না করে তাহলে ইহুদিবাদীদের পতন ঘটবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসন কোনো কিছু অর্জন করেনি। এখানে বিজয়ী হয়েছে ইরান এবং আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে চূড়ান্ত আঘাত করেছি। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জয় পাওয়ায় আমি সবাইকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।
খামেনি বলেন, ইরানি জনগণের অসাধারণ একতাকে আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি। ৯ কোটি জনগণের দেশ ইরান আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর পাশে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ইরানিরা তাদের নিজেদের স্বতন্ত্র চরিত্র প্রদর্শন করেছে এবং প্রমাণ করেছে, যখন প্রয়োজন হবে তারা সবাই এক হবে।
ইরানের বিরুদ্ধে যদি কেউ যদি আবারও আগ্রাসন দেখানোর চেষ্টা করে তাহলে এরজন্য চড়া মূল্য দিতে হবে বলেও হঁশিয়ারি দিয়েছেন ইরানের সুপ্রিম নেতা। তিনি বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের মূল্য চড়া হবে। ইহুদিবাদীরা (ইসরায়েল) কখনো ভাবেনি তারা ইরানের কাছ থেকে এমন ধাক্কা খাবে। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী শত্র“দের বিভিন্ন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে তাদের প্রাণকেন্দ্রগুলোতে আঘাত হেনেছে।
ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়েও কথা বলেছেন আয়াতুল­াহ খামেনি। তিনি জানিয়েছেন, ট্রাম্প তাদের পারমাণবিক কেন্দ্র ধ্বংস করে দেওয়ার যে দাবি করেছেন সেটি সত্য নয়। 
খামেনি বলেন, আমাদের পারমাণবিক অবকাঠামোর বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কিছু অর্জন করতে পারেনি। ইরানিরা একত্রিত। সবাই একত্রিত ছিল। কাতারের আল উদেইদ মার্কিন ঘাঁটিতে যে হামলা হয়েছে সেটিকে তারা উড়িয়ে দিয়েছে, সত্যকে আড়াল করার জন্য। সময়ই শত্র“দের ক্ষয়ক্ষতি প্রকাশ করবে। ইরানিরা কখনো আত্মসমর্পণ করবে না, ট্রাম্প যেমনটা বলেন। ইরান আমেরিকানদের মুখে চপেটাঘাত করেছে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য ছিল ইরানকে বশীভূত করা। ইরানিদের মার্কিনীরা যেসব অপমান করেছে সেগুলো কখনো সফল হবে না। আমাদের জনগণ অসাধারণ, আমাদের দেশ শক্তিশালী এবং আমাদের সভ্যতা ইতিহাসের অংশ। আমাদের জনগণ বিজয়ী এবং সম্মানিত এবং তারা এমনটা থাকবে। আল­াহকে তার শক্তির জন্য ধন্যবাদ।

্রিন্ট

আরও সংবদ