খুলনা | শনিবার | ২৮ জুন ২০২৫ | ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

বালু ব্যবসায়ী বাবুল দত্তকে গলা কেটে হত্যা : আইনশৃঙ্খলার অবনতিতে উদ্বেগ

খুলনায় প্রতিপক্ষে গুলিতে দু’জন নিহত, গুলিবিদ্ধ ১

নিজস্ব প্রতিবেদক ও রূপসা প্রতিনিধি |
০১:৫২ এ.এম | ২৮ জুন ২০২৫


খুলনার রূপসা উপজেলায় একটি বাড়িতে গোলাগুলিতে দু’জন নিহত ও একজন আহত হয়েছেন। পুলিশের দাবি, বাড়ির মালিক ও হতাহতরা সবাই মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত এবং একাধিক মামলার আসামি। একই রাতে শহরতলীর হরিণটানা থানাধীন রাজবাঁধে বাবুল দত্ত (৫০) নামের এক বালু ব্যবসায়ীকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে জেলার বাসিন্দাদের মধ্যে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, রাত ৯টার দিকে সোহাগের বাড়িতে ব্যাপক গোলাগুলি হয়। দুর্বৃত্তের গুলিতে ঘটনাস্থলেই সাব্বিরের মৃত্যু হয় এবং সাদ্দামের মাথার পেছনে একটি গুলিবিদ্ধ হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় সাদ্দামকে চিকিৎসার জন্য স্থানীয়রা প্রথমে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে অবস্থা খারাপ দেখে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।  ঘটনার পর ওই বাড়ির মধ্যে একজনের লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয় স্থানীয়রা। তখন পুলিশ গিয়ে সাব্বিরের লাশ উদ্ধার করে। 
তবে গুলিবিদ্ধ সাদ্দামকে ঢাকায় নেওয়ার পথে মারা গেছেন এমনটি শোনা গেলেও শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় রূপসা থানার ওসি বলেন, ‘সাদ্দামের মারা যাওয়ার খবর আমার কাছে নেই।’ 
ঘটনাস্থলে নিহত সাব্বির শেখ (২৭) খুলনা নগরের শেখপাড়া এলাকার ফজলুল হকের ছেলে এবং মো. সাদ্দাম হোসেন (২৯) নগরের সোনাডাঙ্গা থানার সোনার বাংলা গলির নূর ইসলামের ছেলে। এছাড়া গুলিবিদ্ধ হন মিরাজ ওরফে কাউয়া মিরাজ।
একটি সূত্র জানায়, গুলিবিদ্ধ কাউয়া মিরাজকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করার পর সেখান থেকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে সে পালিয়ে গিয়ে আত্মগোপন করে। আহতের নাম মিরাজ ওরফে ‘কাউয়া মিরাজ’ বললেও তার বিস্তারিত পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। ।
জানতে চাইলে রাজাপুর ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই আশরাফুল আলম বলেন, হতাহত তিন জনই খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেনেড বাবুর সদস্য। সাব্বির এবং সাদ্দামসহ আরও অনেক যুবক ওই বাড়িতে অবস্থান করছিল। রাত ৯টার দিকে ৫-৭ জন দুর্বৃত্ত সশস্ত্র অবস্থায় তাদের ওপর আক্রমণ করে। দু’গ্র“পের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের সময় একটি গুলি সাব্বিরের মাথার পেছন থেকে ভেদ করে সামনের একটি চোখ দিয়ে বের হয়ে যায়। একটি গুলি সাদ্দামের মাথার পেছনে বিদ্ধ হয়। ঘটনাস্থল থেকে দুই রাউন্ড তাজা গুলি এবং দু’টি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে।
রূপসা থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে চারটি গুলি, ছয়টি গুলির খোসা, কিছু ইয়াবা, মাদক সেবনের সরঞ্জাম ও গ্রেনেড সদৃশ একটি বস্তু উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের হলেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খুলনা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মোঃ আনিসুজ্জামান বলেন, গত মাসে রূপসায় কালা রনি নামের এক যুবককে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন ছিলেন সাব্বির। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলেও জানান পুলিশের এ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
একই রাতে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের হরিণটানা থানাধীন রাজবাঁধ দক্ষিণপাড়া এলাকায় বাবলু দত্ত (৫০) নামের এক বালু ব্যবসায়ীকে গলা কেটে হত্যা করেছে অস্ত্রধারীরা। তার পিতার নাম অমূল্য দত্ত এবং তিনি রাজবাঁধ দক্ষিণ পাড়ার বাসিন্দা। তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় বলে হরিণটানা থানার ওসি খায়রুল বাসার জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, নিহত বাবলু দত্ত বালু এবং জমির ব্যবসা করতেন। তিনি কাজ শেষে মোটরসাইকেলযোগে বাড়ি ফেরার সময় কয়েকজন দুর্বৃত্ত তাঁর গতিরোধ করে তাকে পাশের একটি ফাঁকা জমিতে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে।
এদিকে খুলনার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আমজনতার দল খুলনা জেলা। সা¤প্রতিক সময়ে খুলনার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। মানুষ আজ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। নাগরিকদের জানমালের কোনো নিরাপত্তা নেই। খুলনায় মাদকের বিস্তার, কিশোর গ্যাংয়ের উত্থানের কারণে চুরি, ছিনতাই বেড়ে গেছে। প্রায় প্রতিদিনই নগরীতে খুনের মতো ঘটনা ঘটছে। ৫ আগস্টের পর এখনো খুলনার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কাঙ্খিত উন্নতি হয়নি বরং দিন দিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে, যা দুঃখজনক। খুলনার ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ আতঙ্কে রয়েছে। কাদের সহযোগিতায় অপরাধীরা প্রকাশ্যে, জনারণ্যে এসব ফৌজদারি অপরাধ করছে তা খতিয়ে দেখা দরকার বলে আমজনতার দল মনে করে। 

্রিন্ট

আরও সংবদ