খুলনা | রবিবার | ২৯ জুন ২০২৫ | ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

পিতামাতার গণতান্ত্রিক মনোভাব ও শিশুর বিকাশ

প্রকাশ চন্দ্র অধিকারী, মনোবিজ্ঞানী ও সাইকোথেরাপিস্ট |
০১:৩০ এ.এম | ২৯ জুন ২০২৫


আজকের শিশু আগামি দিনের আলোর পথের স্বপ্নদ্রষ্টা। শিশুদের হাত ধরে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের পথা চলা শুরু হয়। একটি সুস্থ প্রজন্মকে গড়ে তুলতে শিশুর শৈশবে পরিমার্জিত পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশ একান্ত আবশ্যক। গবেষণায় দেখা গেছে, যে সব শিশুর শৈশব জীবন পারিবারিক ও সামাজিক বিচ্ছিন্ন’র মাঝে অতিবাহিত হয়েছে, পরবর্তীতে তাদের জীবন ধারায় নেতিবাচক  রুপরেখা প্রবাহমান হয়েছে। সুতরাং শিশুর সুন্দরন ভবিষ্যৎ গঠনের জন্য সঠিক প্যারেন্টিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্যারেন্টিং বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে। আজকের আলোচনার ধারাবাহিকতায় গণতান্ত্রিক প্যারেন্টিং আলোচনা করা হলো-
গণতান্ত্রিক প্যারেন্টিং : প্রতিটি প্যারেন্টিং এর নিজস্ব কিছু ধরণ বিদ্যমান। আর প্যারেন্টিং এর ধরণের উপর ভিত্তি করে শিশুর ভবিষ্যৎ জীবনবোধ গড়ে উঠে। 
নিম্নে গণতান্ত্রিক প্যারেন্টিং এর কতিপয় লক্ষণ উলে­খ করা হলো : (১) পিতা মাতার উচ্চ দায়িত্ববোধ থেকে সন্তানের প্রতি উচ্চ আশা-আকাক্সক্ষা প্রতীয়মান। (২) পিতা-মাতা সন্তানদের জন্য সুনির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন নির্দিষ্ট করে দেন কিন্তু সেই সব নিয়ম-কানুন প্রতিপালনে উদার ও সমঝোতামূলক মনোভাব পোষণ করেন। (৩) ভিন্ন বিষয়ের প্রয়োজনে বার বার সন্তানদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেন। (৪) পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যমে সন্তাদের চাহিদা মতামত ও প্রত্যাশাকে গুরুত্ব দিয়ে পিতা-মাতা তাদের সন্তাদের চিন্তা, অনুভূতি, আচরণকে বোঝার চেষ্টা করে থাকেন। (৫) সন্তানের ফলাফলের উপর গুরুত্ব না দিয়ে পিতা-মাতা প্রকৃতিগত প্রাপ্তির উপর জোর প্রয়োগ করেন। অতিমাত্রায় উপদেশ বা নির্দেশনা প্রয়োগ না করে; সন্তানের কৃতকর্মকে তার জীবন প্রবাহে প্রয়োগ করে তার থেকে শিক্ষা নিতে সন্তানকে উৎসাহ প্রদান করে থাকেন। (৬) গণতান্ত্রিক পিতা-মাতা সন্তানদের প্রতিপালনে উৎসাহব্যাঞ্জক, সেবাধর্মী মানসবৃত্তি এবং সর্বদা সন্তানদের সুষম চাহিদার প্রতি সমব্যথী হয়ে থকেন। (৭) গণতান্ত্রিক পিতা-মাতা সন্তানদের প্রতিপালনে খোলামেলা হয়ে থাকেন কিন্তু সৎ আলোচনা কৌশল ব্যবহার করেন- যা সন্তানদের মূল্যবোধ গঠনে চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে।
গণতান্ত্রিক প্যারেন্টিং এর ফলাফল: প্যারেন্টিং ও সন্তানদের ভবিষ্যৎ জীবন প্রবাহ একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে। প্যারেন্টিং এ গণতান্ত্রিক ধারা সর্বজনবিদীত যা শিশুকে মনবলসম্মন্ন ও দায়িত্ববান নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে থাকে। নিম্নে গণতান্ত্রিক প্যারেন্টিং এর ফলাফল সংক্ষিপ্ত পরিসরে উলে­খ করা হলো। (১) সন্তানেরা ক্রমে সন্তোষমূলক জীবন ধারায় আবর্তিত হয়। (২) শিশুক্রমে আত্মনির্ভরশীল জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠে। (৩) সন্তানেরা ভবিষ্যৎ কর্মজীবনে তুলনামূলক  সুঅভিযোজনশীল হয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং পারস্পরিক বোঝা-পোড়ার জীবন ধারায় অভ্যস্ত হয়ে উঠে। (৩) সন্তানের প্রাতিষ্ঠানিক কর্মদক্ষতা (Academic Performance) বৃদ্ধি পায়। (৪) সন্তানের আত্মমর্যাদা ও আত্মসম্মানবোধ সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয় যা তার ভবিষ্যৎ পথ নির্মাণে সহায়তা করে। (৫) সন্তানদের মাঝে ধ্বংসাত্মক মনোভাবাপন্ন মানসবৃত্তি চর্চাবোধ হ্রাস পায় বরং তাদের স্ব-নিরাপত্তাবোধ চেতনা, অন্যের অধিকারের প্রতি দায়িত্ববোধ ক্রমে স্ব-মহিমার ভাবধারায় আবর্তিত হয়। (৬) এরূপ সন্তানদের মানসিক স্বাস্থ্য সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয় যা তাদের-বিষণœতা, উদ্বিগ্নতা,আত্মহত্যা প্রবণতা, ড্রাগ নির্ভরতা ইত্যাদি প্রার্দুভাব থেকে দূরে রাখতে সহায়তা করে। (৭) ভবিষ্যতে সন্তান বনাম পিতা-মাতার মধ্যকার সম্পর্ক চমৎকার ভাবধারায় আবর্তিত হয়। 
সুন্দর (Good Parenting) প্যারেন্টিং-এর কতিপয় কৌশল : (১) আপনার শিশুকে ভবিষ্যতে যেভাবে আপনি দেখতে চান, সেরূপ ভাবধারায় নিজেকে গড়ে তুলুন। শিশুর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুন। বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে তাদের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব ও আচারণ প্রদর্শন করুন। সন্তানের আবেগ, চাহিদার প্রতি সমব্যথী হয়ে তাহা নিজের মত করে বোঝার চেষ্টা করুন। (২) তাদের ভালোবাসুন, তাদের প্রতি শর্তহীন ভালোবাসা প্রদর্শন করুন: শিশুকে ভালোবাসার বিকল্প কিছু নাই। শিশুর প্রতি ভালোবাসা কখনো তাকে নষ্ট করে না। বরং শুধু কৌশল নির্বাচন বড় বিষয়। মনে রাখবেন-যা সন্তানকে দেবার চেষ্টা করছেন ; শুধু ভালোবাসার নামে দেন। গবেষণায় দেখা গেছে- শিশুর প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে বস্তুগত নির্ভরতা, অতিরিক্ত সুরক্ষা প্রদান শিশুর সক্ষমতার ধারণা ও চাহিদার কৌশলকে বিপর্যস্ত করে তোলে। বস্তু নয় বরং প্রকৃত ভালোবাসা শিশুর ভবিষ্যৎ জীবন গঠনে উত্তমভাবে সহায়তা করে। 
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, ফ্রি পরামর্শ : ০১৭১৪৬১৬০০১।

্রিন্ট

আরও সংবদ