খুলনা | মঙ্গলবার | ০১ জুলাই ২০২৫ | ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

৭২ ঘন্টায়ও শুরু হয়নি উদ্ধার তৎপরতা

মোংলার পশুর চ্যানেলে কার্গো জাহাজ ডুবির ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন, মালিক পক্ষকে জরুরী তলব

মোংলা প্রতিনিধি |
০৫:১৬ পি.এম | ৩০ জুন ২০২৫


মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের ত্রি-মোহনায় শুক্রবার (২৭ জুন) সকালে ডুবে যাওয়া ফ্লাইএ্যাস (সিমেন্টের কাচাঁমাল) বোঝাই কার্গো জাহাজ এমভি মিজান-১ আজ সোমবার (৩০ জুন) ৭২ ঘন্টা পার হলেও এখনও উদ্ধার কাজ শুরু করতে পারেনি। এ ঘটনায় সহকারী হারবার মাস্টারকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ।

এছাড়া পন্য বোঝাই কার্গোটি দ্রæত উত্তোলনের জন্য মালিক পক্ষকে বন্দরের পক্ষ থেকে জরুরী চিঠি দিয়ে তলব করা হয়েছে। এদিকে, ফ্লাইএ্যাস ও জাহাজের মধ্যে পলি পড়ে ধীরে ধীরে পানির নীচে তলিয়ে যাচ্ছে পন্য বোঝাই এ কার্গো জাহাজটি। বানিজ্যিক জাহাজ ও ছোট বড় নৌযান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে শুধুমাত্র একটি ভাসমান মার্কিন বয়া দিয়ে দূর্ঘটনাকবলিত স্থান চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে। তবে এটি দ্রæত উত্তালন করা না হলে জাহাজটি সরিয়ে গিয়ে বন্দরের মুল চ্যানেল ঝুকিতে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর ঘটনাস্থল দেখভাল ও নজরদারি করছে বন্দর, জাহাজের নাবিক ও পন্য আমদানীকারকদের লোকজন।

মোংলার পরিবেশ যোদ্ধা মোঃ নুর আলম শেখ জানান, মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলে ডুবে যাওয়া কার্গো জাহাজের ভেতরে থাকায় প্রায় ৯১৪ মেট্রিক টন ফ্লাইএ্যাস নদীর পানিতে মিশে যাচ্ছে। ফ্লাইএ্যাসের পানি নদীতে ভেসে গিয়ে এতে সুন্দরবনের জলজ, বনজ ও প্রাণীজ সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশংকা বিশেষজ্ঞদের।

জাহাজের নাবিকরা বলেন, শনিবার রাতে পন্য ও জাহাজসহ প্রায় কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি দেখিয়ে কার্গো জাহাজটির মাষ্টার মোঃ বেল্লাল হোসেন দাকোপ থানায় সাধারন ডায়রী করেছে। থানায় ডায়রী করার পর পরই বিপরীত দিক থেকে এসে আঘাত করা লাইটার জাহাজ “এমভি কে আলম গুলশান-২” কে পুলিশের হেফাজতে নেয়া হয়েছে। যত দিন এর ফয়সালা না হবে ততদিন পুলিশ প্রহরায় থাকবে এ লাইটার জাহাজটি।  

মোংলা লাইটার ও লঞ্চ লেবার শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বলেন, ডুবন্ত কার্গো জাহাজটি উত্তোলন করা যাবে কিনা এ ব্যাপারে খোঁজ নিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন মালিক পক্ষ, লাইটার শ্রমিক ইউনিয়ন ও বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রতিনিধিরা। মালিক পক্ষের দাবি জোয়ারের পানি আর নদীর স্রোত কমলে আগামী দু’এক দিনের মধ্যে ফ্লাইএ্যাস উত্তোলনের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।

তারা আরো বলেন, অন্য একটি কার্গো জাহাজ ওই ডুবন্ত কার্গোটি পাশে রেখে মেশিনের মাধ্যমে প্রথমে পলি ও ফ্লাইএ্যাস সরানো হবে এবং পরে উদ্ধারকারী নৌযান নিয়ে জাহাজটি ক্রেনের সাহায্যে টেনে তোলা হবে বলে জানায় জাহাজ মাষ্টার মোঃ বেল্লাল হোসেন। ফ্লাইএ্যাস অপসারন করতে প্রায় ৮ থেকে ১০ দিন সময় লাগতে পারে বলেও জানায় তিনি। তবে বন্দরের মুল চ্যানেলের বাহিরে কার্গোটি পশুর নদী ও ঘষিয়ালালী ত্রি-মোহনায় ডুবেছে, জাহাজ চলাচলের মুল চ্যানেল নিরাপদ রয়েছে।

এদিকে, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক মোঃ মাকরুজ্জামান জানায়, কি কারণে পন্য বোঝাই কার্গো জাহাজটি ডুবে গেলো সে বিষয় অনুসন্ধান করতে বন্দরের সহকারী হারবার মাষ্টার পাইলট মোঃ বেল্লাল হোসেনকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তার তদন্ত কাজের সহায়ত করবে বন্দরের নির্বাহী প্রকোওশলী (নৌ) মাহমুদুল হাসান সাগর। আগামী ৭ কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশনা দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহিন রহমান।

এছাড়া ফ্লাইএ্যাস বোঝাই কার্গো জাহাজ এমভি মিজান-১ দ্রæত উত্তোলন করার জন্য বন্দরের হারবার বিভাগ থেকে জরুরী চিঠি দেয়া হয়েছে। ১৫ দিনের সময় বেধে দিয়ে চিঠি দেয়া হয়। এসময়ের মধ্যে ডুবন্ত কার্গোটি উদ্ধার কাজ সম্পুর্ন করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। এছাড়া জাহাজটি ডুবন্ত স্থানে মার্কিন বয়া দিয়ে চিহ্নিত রেখেছে বন্দরের হারবার বিভাগ।

উল্লেখ্য, গত (২৭ জুন) সকালে ভারত থেকে ৯১৪ মেট্রিক টন ফ্লাইএ্যাস বোঝাই করে ঢাকার মেঘনা ব্রিজের পাশে সিমেন্টস ফ্যাক্টোরিতে যাওয়ার সময় পশুন নদীতে বিরতি করে। শুক্রবার সকালে বিপরীত দিক থেকে আসা অন্য একটি লাইটার জাহাজ “এমভি কে আলম গুলশান-২” কার্গোটিতে আঘাত করে এবং উপরে উঠিয়ে দেয়। ফলে তলা ফেটে মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেল ও ঘষিয়াখালী ত্রি-মোহনায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।  

্রিন্ট

আরও সংবদ