খুলনা | মঙ্গলবার | ০১ জুলাই ২০২৫ | ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

রূপসা সেতু ‘বøকেড’ ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি আজ

পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগ দাবিতে ফের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:২৭ এ.এম | ০১ জুলাই ২০২৫


খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ফের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা। গতকাল সোমবার বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত কেএমপি সদর দপ্তরের সামনে খানজাহান আলী সড়কের মাঝে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। সাধারণ ছাত্র-জনতার ব্যানারে এই কর্মসূচিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে একত্মতা প্রকাশ করে স্থানীয়রা, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে প্রেসব্রিফিংয়ে আজ মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় খানজাহান আলী সেতুর (রূপসা ব্রিজের) টোলপ্লাজা ‘ব্লকেড’ কর্মসূচি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বরাবর কেএমপি কমিশনারের অপসারণ দাবিতে স্মারকলিপি পেশ করার কর্মসূচি ঘোষণা করেন নেতৃবৃন্দ।
গত ২৪ জুন চারটি মামলার আসামি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতাকে নির্যাতনকারী এস আই সুকান্ত দাশকে মারপিট করে খানজাহান আলী থানায় সোপর্দ করে ছাত্র-জনতা। রাতে তাকে থানা থেকে ছেড়ে দেয়ার পর গত ২৫ জুন থেকে কেএমপি সদর দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বৃহস্পতিবার সকালে এস আই সুকান্তকে চুয়াডাঙ্গা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তবুও ফ্যাসিস্ট সরকারের পেটোয়া পুলিশ বাহিনীর অভিযুক্ত ও মামলার আসামি কর্মকর্তাদের সহায়তা, খুলনার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধারাবাহিকভাবে অবনতির অভিযোগে কেএমপি কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে আন্দোলন তীব্রতর করেন বিক্ষুব্ধরা। বিবৃতিতে বিএনপি এবং আন্দোলন স্থলে যেয়ে ইসলামী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ ছাত্র-জনতার এই আন্দোলনের সাথে একত্বা প্রকাশ করে কেএমপি কমিশনারের অপসারণ দাবি করেন।
সোমবার তারা কেএমপি কমিশনার ও দুই উপ-কমিশনারের অফিস ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করে। বিকেল ৪টা থেকে কেএমপি সদর দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ শুরু হয়। অন্য দু’টি অফিসের সামনে কোনো বিক্ষোভ হয়নি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনার মুখ্য সংগঠক সাজ্জাদুল ইসলাম আজাদ বলেন, পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
খুলনা আলিয়া কামিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী আব্দুল কাদের বলেন, এখনো পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের কোনো আশ্বাস দেয়নি। যতক্ষণ না আমরা সফল হচ্ছি ততক্ষণ আন্দোলন চলমান থাকবে।
খুলনা মহানগর এনসিপি সংগঠক রাফসান রাফিক বলেন, আমরা গত বুধবার থেকে লাগাতর আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি, সেই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে আজকে আমাদের কর্মসূচি অনুযায়ী কমিশনারের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছি। কেএমপি কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দারের কাছে খুলনার মানুষ নিরাপদ নয়। তাই তার অপসারণ না করার পর্যন্ত আন্দোলন চলছে, চলবে।
অন্যদিকে, সোমবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কয়েকজন জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেয়া সমমনা বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা বলেছেন, গুটি কয়েক সহযোদ্ধাকে ব্যবহার করে একটি বিশেষ মহল আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করাচ্ছে। কেএমপি কমিশনার পদত্যাগের আন্দোলন বিশেষ মহলের প্ররোচনায় বলে মন্তব্য করেন তারা।
বিক্ষোভকারীরা শ্লোগান দেন, ‘পুলিশ কমিশনারের চামড়া, তুলে নেব আমরা’, ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত’, ‘জ্বালো জ্বালো, আগুন জ্বালো’, ‘পুলিশ কমিশনার জুলফিকার, আস্ত একটা স্বৈরাচার’, ‘জুলফিকারের চামড়া তুলে নেব আমরা’, ‘পুলিশ কমিশনার জুলফিকার, এই মুহূর্তে খুলনা ছাড়’, ‘পুলিশ লীগের আস্তানা ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’ ইত্যাদি।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, কেএমপি কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দারসহ কয়েকজন কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপেই সুকান্তকে ছেড়ে দেয়া হয়। তাঁরা খুলনার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভীষণ নাজুক হওয়ার পেছনে দায় এবং অপরাধীদের আশ্রয় দেয়ায় অভিযোগ তুলছেন পুলিশ কমিশনারের বিরুদ্ধে।
গত বুধবার শুরু হয়ে টানা দুই দিনের বিক্ষোভ শেষে বৃহস্পতিবার রাতে ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দেন আন্দোলনকারীরা। আল্টিমেটামের সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পর শনিবার থেকেই আন্দোলনকারীরা আবার কেএমপি সদর দপ্তরের সামনে অবস্থান নেন। তাঁরা রাস্তায় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে ব্যারিকেড দেন। ওই দিন সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের খুলনা প্রেসক্লাবে আসার খবর পেয়ে কেএমপির সদর দপ্তরের সামনে কর্মসূচিতে থাকা আন্দোলনকারীরা প্রেসক্লাবের প্রধান ফটক আটকে অবস্থান নেন। পরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন প্রেস সচিব। এরপর রাতে পুলিশ কমিশনারকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ না করা হলে আটটি থানা, উত্তর-দক্ষিণের উপ-কমিশনারের কার্যালয় ও সদর দপ্তর ঘেরাও করে খুলনা অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন আন্দোলনের নেতারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা শাখার সদস্য সচিব সাজিদুল ইসলাম বাপ্পী বলেন, ‘পাঁচ দিন ধরে আমরা রাজপথে আন্দোলন করে যাচ্ছি। এটা কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাদের আন্দোলন নয়। এই আন্দোলন খুলনার আপামর জনতার আন্দোলন। খুলনার মানুষ নিরাপত্তাহীনতা থেকে এই আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে। এখানে কোনো ব্যক্তির ডাকে আন্দোলন হয়নি।’

্রিন্ট

আরও সংবদ