খুলনা | বুধবার | ০২ জুলাই ২০২৫ | ১৮ আষাঢ় ১৪৩২

রূপসা সেতুর টোল প্লাজা ‘ব্লকেট’, দীর্ঘ যানজটে দুর্ভোগ

কেএমপি কমিশনার রোববারের মধ্যে অপসারণ না হলে রেল-সড়ক ও নৌপথ অবরোধের হুঁশিয়ারি

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:১৫ এ.এম | ০২ জুলাই ২০২৫


খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দারকে অপসারণের দাবিতে রূপসা সেতুর (খানজাহান আলী সেতু) টোল প্লাজা ‘ব্লকেট’ কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৩টার পর তারা সেতুর টোল প্লাজার সামনে টায়ারে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময়ে দীর্ঘ যানজটের কারণে ব্যাপক জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। নাগরিক দুর্ভোগ ও বৈরী আবহাওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বিকেল ৫টায় প্রেসব্রিফিংয়ের মাধ্যমে ফের ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনা মুখ্য সংগঠক সাজ্জাদুল ইসলাম আজাদ। 
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বৃহস্পতিবার খুলনা শহরের প্রতিটি কলেজের সামনের সড়কে বিক্ষোভ প্রদর্শন। এ সময়ের মধ্যেও কেএমপি কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দারকে অপসারণ করা না হলে রোববার থেকে খুলনা থেকে রেল, সড়ক ও নৌপথ অবরোধের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
এদিকে, সেতুর টোল প্লাজা অবরোধের ফলে দুই পাশে বাস, ট্রাক, প্রাইভেটকারসহ শত শত যানবাহন আটকা পড়ে আছে। বৃষ্টির মধ্যে দুই ঘণ্টা ধরে আটকে থাকায় সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন যানবাহনের যাত্রীরা। রূপসা সেতুর আশপাশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাউকে দেখা যায়নি। তবে অবরোধের মধ্যেও রোগীবাহী এ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি পরিবহন চলাচল স্বাভাবিক ছিল ।
কেএমপি কমিশনারের অপসারণের দাবিতে গত ২৫ জুন থেকে খানজাহান আলী সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা-কর্মীরা। সোমবার রাতে তারা রূপসা সেতু ব্লকেট ঘোষণা দেয়।
পদ্মাসেতু হয়ে রাজধানী ঢাকার সাথে বিভাগীয় সদর খুলনাসহ পাশ্ববর্তী সাতক্ষীরা জেলা ও যশোরের আংশিক অঞ্চলের বিপুল জনগোষ্ঠী যাতায়াতের ও পন্য পরিবহনের প্রবেশ রূপসা সেতু। এখানে ব্লকেট কর্মসূচির কারণে বিকেল থেকেই বিশাল যানজট ও জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দারকে অপসারণের এক দফা দাবিতে পাঁচদিন বিক্ষোভ করছে ছাত্র জনতা। বিগত সরকারের দোসরদের পুনর্বাসন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, গণ-অভ্যুত্থানে হামলাকারী চারটি মামলার আসামি এস আই সুকান্তকে ছেড়ে দেয়াসহ নানা অভিযোগে কেএমপি কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দারের বিরুদ্ধে। বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, এনসিপি, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা অংশগ্রহণ করে।
এ সময় তারা বলেন, বর্তমান পুলিশ কমিশনার খুলনার  আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোন উন্নয়ন ঘটাতে পারেনি। এছাড়াও আওয়ামী দোসরদের পুনর্বাসনে কাজ করছেন তিনি। তাই এমন পুলিশ কমিশনার চায় না খুলনাবাসী।
প্রেসব্রিফিংয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনার মুখ্য সংগঠক সাজ্জাদুল ইসলাম আজাদ বলেন, আমাদের দাবির বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইজিপি কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় অবরোধ করতে বাধ্য হয়েছি। খুলনাবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থেই আমাদের এ কর্মসূচি। তৃতীয়বারের মতো ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিচ্ছি, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত খুলনার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে জমায়েত ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে; বিশেষ করে প্রতিটি কলেজের সামনের সড়কে। এর মধ্যেও যদি কেএমপি’র অর্থব কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দারকে অপসারণ করা না হয়; তাহলে রবিবার থেকে খুলনার সাথে সারাদেশের সড়ক, রেল ও নৌপথ বন্ধ করে দেয়া হবে। কেএমপি কমিশনার জুলফিকার আলী কি শেখ হাসিনার চেয়েও বড় স্বৈরাচার; যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা তাকে অপসারণ করতে পারবে না? 
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনা জেলা শাখার সদস্য সচিব সাজিদুল ইসলাম বাপ্পী বলেন, কেএমপি কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দারের কাছে খুলনাবাসী নিরাপদ নই। তাই প্রধান উপদেষ্টার উচিত খুলনাবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে অবিলম্বে তাকে অপসারণ করে জুলাই চেতনায় বিশ্বাসী কাউকে কেএমপিতে পদায়ন করানো। কেএমপি কমিশনারের চেয়ারে যতদিন জুলফিকার আলী বসবেন, ততোদিন খুলনাবাসীর সুস্থ জীবন-যাপনের স্বার্থে আমাদের আন্দোলন চলছে, চলবে।
গত ২৪ জুন গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার উপর সীমাহীন নির্যাতনকারী চারটি মামলার আসামি এস আই সুকান্ত দাশকে মারধর করে খানজাহান আলী থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। রাতের আঁধারে সুকান্তের বিরুদ্ধে মামলা থাকা সত্তে¡ও তাঁকে থানা থেকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। এর প্রতিবাদে গত ২৫ জুন আন্দোলন শুরু করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আন্দোলনকারীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ এবং কেএমপি সদর দপ্তরে তালা ঝুলিয়ে দেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সুকান্তকে গ্রেফতার করা হয়। তবে কেএমপি কমিশনারকে স্বৈরাচারের দোসর অভিযোগ করে তার পদত্যাগের দাবি জানান বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।

্রিন্ট

আরও সংবদ