খুলনা | শুক্রবার | ০৪ জুলাই ২০২৫ | ২০ আষাঢ় ১৪৩২

মধ্যবিত্ত ও নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর স্বার্থে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার পুনর্বিবেচনা করা দরকার

|
১২:০৫ এ.এম | ০৪ জুলাই ২০২৫


সরকার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমিয়ে নতুন অর্থবছরের শুরুতেই মধ্যবিত্ত শ্রেণির কাঁধে বাড়তি বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে এসেছে, যখন দেশের মানুষ উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ট। কোভিড-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার না ঘটতেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের লাগামছাড়া দামে সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। ঠিক সেই সময় সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কমিয়ে সংসার খরচ চালানোর নির্ভরযোগ্য উৎস বড়সড় কোপ বসাল সরকার।
প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সব ধরনের সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার কমানোর সিদ্ধান্ত এরই মধ্যে কার্যকর হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে এক নতুন অর্থনৈতিক সংকটের মুখে ঠেলে দেবে। সঞ্চয়পত্র সাধারণত মধ্যবিত্ত, অবসরপ্রাপ্ত ও সীমিত আয়ের নাগরিকদের নিরাপদ সঞ্চয়মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত। সঞ্চয়পত্রের মুনাফা হ্রাস মূলত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত বাস্তবায়নের একটি অংশ।
কিন্তু এই সিদ্ধান্ত মধ্যবিত্তদের জন্য এক নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। পরিবার সঞ্চয়পত্রের মতো জনপ্রিয় স্কিমগুলোতে মুনাফার হার কমে যাওয়ায় অনেক পরিবার, যারা তাদের দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহে এই মুনাফার ওপর নির্ভরশীল, তারা এখন আরো বেশি চাপে পড়বে। পরিবার সঞ্চয়পত্র বা পেনশনার স্কিমের মতো প্রকল্পগুলো থেকে পাওয়া মুনাফাই অনেকের চিকিৎসা, সন্তানদের শিক্ষা ও দৈনন্দিন ব্যয়ের মূল অবলম্বন। উদাহরণস্বরূপ, পরিবার সঞ্চয়পত্রে সাড়ে সাত লাখ টাকার কম বিনিয়োগে মুনাফার হার ১২.৫০ থেকে কমে ১১.৯৩ শতাংশ হয়েছে, যা প্রত্যক্ষভাবে অনেক পরিবারের আয়কে প্রভাবিত করবে।
মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো, যারা সীমিত আয়ে জীবনযাপন করে এবং ভবিষ্যৎ সুরক্ষার জন্য সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভর করে, তাদের জন্য এই সিদ্ধান্তটি অত্যন্ত হতাশার। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে দৈনন্দিন ব্যয় ক্রমাগত বাড়ছে, কিন্তু আয়ের উৎসগুলো সংকুচিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মুনাফার হার হ্রাস করার ফলে সরকার এই খাত থেকে ঋণ কম পাবে। কারণ সুবিধাভোগীরা সঞ্চয়পত্রে টাকা না রেখে ব্যাংকমুখী হতে পারে। ব্যাংকগুলোতে আমানতের সুদহার আকর্ষণীয় না হলে বিনিয়োগকারীরা হতাশ হবেন। এটি দেশের সামগ্রিক সঞ্চয়প্রবণতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
এই পদক্ষেপটি দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে। সরকারের উচিত ছিল এই হার কমানোর আগে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, আয়বৃদ্ধিমূলক পদক্ষেপ এবং সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী জোরদার করা। অন্যথায় জনগণের আস্থা হারানোর ঝুঁকি তৈরি হবে, যা অর্থনীতির জন্য দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিকর। জনগণের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য আরো কার্যকর এবং জনবান্ধব নীতি গ্রহণ করা জরুরি। অন্যথায় দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। আমরা মনে করি, মধ্যবিত্ত ও নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর স্বার্থে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার পুনর্বিবেচনা করা দরকার।

্রিন্ট

আরও সংবদ