খুলনা | শুক্রবার | ০৪ জুলাই ২০২৫ | ২০ আষাঢ় ১৪৩২

“অতিরিক্ত ভাবনা নয়, মনের প্রশান্তি খুঁজুন”

জয়া মাহবুব |
০২:৪৩ এ.এম | ০৪ জুলাই ২০২৫


আজকের দ্রুতগতির, প্রযুক্তিনির্ভর জীবনে আমাদের মন প্রতিনিয়তিই তথ্য, বিকল্প এবং অনিশ্চয়তায় ভরে যাচ্ছে। ফলে অনেকেই এক ধরনের মানসিক ফাঁদে পড়ছেন, অতিরিক্ত ভাবনা-যা আমাদের ক্লান্ত করে তোলে, উদ্বেগ বাড়ায়, এবং সিদ্ধান্তহীনতায় ফেলে দেয়। কিন্তু আমরা কি চাইলে এই চিন্তার জাল থেকে মুক্ত হতে পারি?
নীরব এক যুদ্ধ : অতিরিক্ত ভাবনা মানে শুধু বেশি চিন্তা করা নয়। এটি এমন এক মানসিক প্যাটার্ন, যেখানে আমরা একই চিন্তায় বারবার ফিরে যাই, আশঙ্কা ও সন্দেহে জর্জরিত হই। মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা একে বলেন “ৎঁসরহধঃরড়হ”, অর্থাৎ এমন এক প্রক্রিয়া যা বারবার পুরোনো ঘটনা, কথোপকথন কিংবা ভবিষ্যতের সম্ভাব্য ঝুঁকি ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ভাবায়। অনেকেই আছেন, যারা ভাবেন ‘আমি দায়িত্বশীল বলেই বেশি ভাবছি’, অথচ ভিতরে ভিতরে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন।
কেন আমরা অতিরিক্ত ভাবি? : অতিরিক্ত ভাবনার মূল কারণগুলো হল: নিখুঁত হতে চাওয়ার প্রবণতা, অন্যের বিচারভীতির ভয়, এবং অতীতের অপূর্ণতা। উপরন্তু, সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের মনে অনিশ্চয়তা আরও বাড়িয়ে দেয়, দেখায়, অন্যরা যেন অনেক ভালো করছে, আর আমরাই পিছিয়ে।
“আমি কি ঠিক কথা বলেছি?”, “আরও ভালো কিছু করা যেতো না?”, “যদি সবকিছু খারাপ হয়ে যায়?”এসব প্রশ্ন যখন বারবার মাথায় ঘোরে, তখন তা একরকম মানসিক যন্ত্রণা হয়ে ওঠে।
অতিরিক্ত চিন্তার মূল্য : মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, অতিরিক্ত ভাবনার ফলে দীর্ঘমেয়াদি উদ্বেগ, ঘুমের সমস্যা, সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা, এমনকি বিষণ্নতাও দেখা দিতে পারে। সবচেয়ে খারাপ বিষয় হচ্ছে, এটি অনেক সময় ফলপ্রসূ মনে হয়, অথচ তা আমাদের কাজ থেকে পিছিয়ে দেয়।
অতিরিক্ত চিন্তা থেকে প্রশান্তির পথে : চিন্তা করা বন্ধ করাই লক্ষ্য নয়, বরং চিন্তাকে অর্থবহ করে তোলা, এটাই কৌশল।
এক্ষেত্রে কিছু কার্যকর উপায় অনুসরণ করা যেতে পারে : ১.মাইন্ডফুলনেস চর্চা করুন : প্রতিদিন মাত্র ৫ মিনিট চোখ বন্ধ করে শ্বাস প্রশ্বাসে মনোযোগ দিন। বর্তমানে থাকুন। 
২. সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়সীমা ঠিক করুন : ছোট বা মাঝারি সিদ্ধান্তের জন্য নিজেকে নির্দিষ্ট সময় দিন। সবকিছু নিয়ে দীর্ঘক্ষণ ভাবার দরকার নেই।
৩.লিখে ফেলুন: মনের কথা কাগজে লিখুন। এতে চিন্তা পরিস্কার হয় এবং আপনি নিজের চিন্তাধারা সম্পর্কে পরিস্কার বুঝতে পারেন। 

৪. ভেতরের সমালোচককে চ্যালেঞ্জ করুন। “যদি আমি ব্যর্থ হই?” এর উত্তর দিন “যদি আমি সফল হই?” দিয়ে।
৫.ক্ষুদ্র পদক্ষেপ নিন:  অতিরিক্ত ভাবনা স্থবিরতা তৈরি করে। একটি ছোট পদক্ষেপও আপনার মানসিক জট খুলে দিতে পারে।
৬. মনের জঞ্জাল কমান : সোশ্যাল মিডিয়ায় যেসব কনটেন্ট মন খারাপ করে, সেগুলো থেকে দূরে থাকুন। স্ক্রিন টাইম কমান। নিজের মানসিক শান্তি সুরক্ষিত রাখুন।
ছেড়ে দেওয়া একটি দক্ষতা : এটি একদিনে সম্ভব নয়। কিন্তু প্রতিদিন একটু করে অভ্যাস গড়লে, চিন্তার ভার হালকা হয়। নিজেকে ক্ষমা করুন, নিজেকে ভালোবাসুন, এবং প্রতিটি ছোট অর্জনকে উদযাপন করুন। লেখক মার্ক টোয়েন বলেছিলেন: “আমার জীবনে অনেক দুশ্চিন্তা হয়েছে, যেগুলোর বেশিরভাগই কখনো বাস্তবে ঘটেনি।” আমরাও তেমনই।
মনে রাখবেন: শান্তি আসে শুধু বেশি ভাবলে নয়, বরং ভিন্নভাবে ভাবতে শিখলে।

্রিন্ট

আরও সংবদ

অন্যান্য

প্রায় ১২ দিন আগে