খুলনা | রবিবার | ০৬ জুলাই ২০২৫ | ২২ আষাঢ় ১৪৩২

‘সঞ্চয়পত্রের মুনাফা বাড়ালে কেউ ব্যাংকে টাকা রাখবে না’

ডিসেম্বরের আগেই ব্যাংক খাত সংস্কার করা হবে : অর্থ উপদেষ্টা

খবর প্রতিবেদন |
০১:১৩ এ.এম | ০৬ জুলাই ২০২৫


ডিসেম্বরের আগেই ব্যাংক খাত সংস্কার করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। অন্তর্র্বর্তী অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, খারাপ ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে। ইসলামী ব্যাংক এর একটি উদাহরণ। এ ব্যাংকে মানুষের আস্থা ফিরছে। অন্য ব্যাংকগুলোর জন্য ‘ব্যাংক রেজুলেশন এ্যাক্ট’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এর প্রথম শর্ত হলো, যারা ব্যাংকে টাকা জমা দিয়েছে, তাদের অর্থ ফেরত দেওয়ার জন্য সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। কারও টাকা নষ্ট হবে না। কিছুটা সময় লাগতে পারে, কারণ অনেকেই টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। পৃথিবীর কোনো দেশে এমন ঘটনা ঘটে না। শনিবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ঠিক আছে, যদি তা আরও বাড়ানো হয়, তবে ব্যাংক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সঞ্চয়পত্রের হার বাড়িয়ে দিলে সবাই সঞ্চয়পত্র কিনবে, কেউ ব্যাংকে টাকা রাখবে না।
তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোতে লিকুইডিটির একটা ব্যাপার আছে। আমাদের তো ব্যালেন্স করে দেখতে হবে। সবাই সঞ্চয়পত্র কিনলে ব্যাংক কোত্থেকে টাকা পাবে? 
ব্যাংকিং খাতকে সংকটমুক্ত করা যাবে কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশের টাকা পয়সা নিয়ে বিদেশে চলে গেছে অনেকে। এ রকম ঘটনা পৃথিবীর কোনো দেশে ঘটে নাই। ব্যাংকিং খাতে সংস্কার সময় সাপেক্ষ, এটা আমরা করতে পারব না। এটা নির্বাচিত সরকার এসে করবে। কিছুদিন আগে আর্থিকভাবে দুর্বল ১২টি ব্যাংককে ৫২ হাজার কোটি টাকা সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে ২২ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি, তবে এটা কোনো স্থায়ী সমাধান নয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক দুর্বল ব্যাংকগুলোকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে জানিয়ে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এ ক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংক বড় একটা উদাহরণ। প্রাইভেট সেক্টরের বড় এই ব্যাংকে কিন্তু এখন আস্থা ফিরে এসেছে। অন্যান্য ব্যাংকের ক্ষেত্রে একটা আইন হয়েছে, ব্যাংক রেজ্যুলেশন অ্যাক্ট। এই আইনের প্রথম শর্তটা হলো-যারা টাকা-পয়সা জমা দিয়েছে ব্যাংকে তাদের টাকা ফেরত দিতে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। কারও টাকা মার যাবে না, হয়তো সময় লাগতে পারে। কোনো কোনো ব্যাংকের হয়তো ব্যবসা নাই, সেগুলো হয়তো সময় লাগবে। এগুলোর হিসাব করা হচ্ছে এবং আমরা কারিগরি সহায়তা নিচ্ছি, কীভাবে মূল্যায়ন করতে হয়। তিনি আরও বলেন, নবীনগর টু বাঞ্ছারামপুর ও আড়াইহাজার সড়কের কাজ একনেকে অনুমোদন হয়েছে, দ্রুতই কাজ শুরু হবে। নবীবগর টু আশুগঞ্জ সড়ক নির্মাণ ও নবীনগর টু কোম্পানিগঞ্জ সড়কের সংস্কার কাজ প্রক্রিয়াধীন।  
উপদেষ্টা আরও বলেন, নবীনগরসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার প্রতিটি উপজেলায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের পরিকল্পনা রয়েছে, সেই লক্ষ্যে আমাদের কাজ চলছে।
সঞ্চয়পত্রের মুনাফা হার কমানো নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সঞ্চয়পত্রের মুনাফা হার বাড়িয়ে দিলে সবাই সঞ্চয়পত্র কিনবে, তখন কেউ ব্যাংকে টাকা রাখবে না। অথচ ব্যাংকেরও তারল্য বজায় রাখা জরুরি। বিষয়টি ব্যালেন্স করে দেখতে হবে। সবাই যদি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে, তাহলে ব্যাংক টাকা পাবে কোথা থেকে?
এনবিআরে চলমান অস্থিরতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সমস্যা সমাধানে তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আলোচনার মাধ্যমে যা যা প্রয়োজন, আমরা তা করব। ইতোমধ্যে পাঁচ সদস্যের একটি শক্তিশালী কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে আমরা নিশ্চিত করছি যেন ব্যবসার জন্য ১০-১২টি দপ্তরে না যেতে হয়। যত ধরনের ছাড়পত্র লাগে, সেগুলো আমরা কেন্দ্রীভূত করার চেষ্টা করছি।
এ সময় উপদেষ্টার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম, নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজীব চৌধুরী, নবীনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পিয়াস বসাক প্রমুখ।

্রিন্ট

আরও সংবদ