খুলনা | বুধবার | ১৬ জুলাই ২০২৫ | ১ শ্রাবণ ১৪৩২

কেসিসির সাবেক মেয়র খালেক ও তার স্ত্রীর ১৭ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ, দু’টি মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০৪:৪৭ পি.এম | ০৯ জুলাই ২০২৫


সোয়া ১৭ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক এবং তার স্ত্রী ও  বন ও পরিবেশ বিষয়ক সাবেক উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহারের বিরুদ্ধে পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করেন দুদকের খুলনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়। সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা মোঃ আক্তারুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তালুকদার আবদুল খালেকের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বাদী খুলনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রকিবুল ইসলাম।  
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, সাবেক মেয়র আব্দুল খালেক খুলনা সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব পালনকালে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ১৫ কোটি ৫৭ লাখ ১৪ হাজার ৯০২ টাকার অবৈধ সম্পদের প্রমাণ মিলেছে। দুদকের অনুসন্ধানে তার নামে মোট ১৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। যার মধ্যে ১৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকার সম্পদের উৎস দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন।  যা অবৈধ সম্পদ হিসাবে দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে।
মামলার বাদী খুলনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রকিবুল ইসলাম বলেন, তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা অনুযায়ী মামলা দুইটি রুজু করা হয়েছে।
অন্যদিকে হাবিবুন নাহারের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বাদী দুদকের জেলা কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক মোঃ আশিকুর রহমান।
দ্বিতীয় মামলায় তার স্ত্রী ও সাবেক উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে অসাধু উপায়ে ১ কোটি ৬৬ লাখ ৭ হাজার ৫৩৭ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। দুদকের অনুসন্ধানে তার নামে মোট ৫ কোটি ৬১ লাখ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। যার মধ্যে জ্ঞাত আয়ের বাইরে অর্জিত সম্পদের পরিমাণ ১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।
তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে মামলা দুইটি রুজু করা হয়েছে।
দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা : কেসিসির সাবেক সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক ও তার স্ত্রী বাগেরহাট-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বেগম হাবিবুন নাহারের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
এর আগে গত ২০ মে বিকেলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) খুলনার সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধানী কর্মকর্তা রকিবুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দুদক কর্মকর্তা রকিবুল ইসলাম জানান, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের অপসারিত মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণে আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের তদন্ত চলমান। এমতবস্থায় তিনি ও তার স্ত্রী বিদেশে পলায়ন করতে পারেন বলে দুদকের কাছে তথ্য আসে। এ কারণে গত ১৩ মে খুলনার মহানগর স্পেশাল জজ আদালতে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আবেদন করা হয়। গত ১৫ মে আদালত আবেদন গ্রহণ করে তাদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন। পরে আদালতের আদেশের কপি ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের পরিচালক এবং বিশেষ পুলিশ সুপার ইমিগ্রেশনের কাছে পাঠানো হয়।
এর আগে ২৪ মার্চ তালুকদার আবদুল খালেক ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব জব্দ করে দুদক। খালেক ও তার স্ত্রী হাবিবুন নাহার এখনো দেশেই আছেন বলে মনে করছেন দুদক কর্মকর্তারা।
উলে­খ্য, গত ৪ আগস্ট থেকে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক এবং তার স্ত্রী বাগেরহাট-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বেগম হাবিবুন নাহার পলাতক রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে বাধা, গুলি চালানো ও হত্যা মামলা হয়েছে।  
এ ছাড়া বেশ কয়েকটি নাশকতার মামলাও হয়েছে। ফেব্র“য়ারি থেকে তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের তদন্ত চলছে। অভিযোগ রয়েছে রাজস্ব ফাঁকি, দুর্নীতি এবং স্বজনপ্রীতি করে তারা গড়ে তুলেন সম্পদের পাহাড়। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে লাগামহীন দুর্নীতি এবং অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করা ছিল তালুকদার আব্দুল খালেকের প্রধান কাজ।

্রিন্ট

আরও সংবদ