খুলনা | বৃহস্পতিবার | ১০ জুলাই ২০২৫ | ২৫ আষাঢ় ১৪৩২

নির্বাচনের আগে রদবদল হচ্ছে ডিসি, এসপি, ইউএনও, ওসি : নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিয়োজিত থাকবে ৮ লাখ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নেয়া হচ্ছে ১৭ হাজার নতুন সদস্য

নির্বাচন ফেব্রুয়ারি অথবা এপ্রিলে, ডিসেম্বরের মধ্যে ভোটের সব প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

খবর প্রতিবেদন |
১১:১২ পি.এম | ০৯ জুলাই ২০২৫

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সব প্রস্তুতি নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার রাত ৮টায় রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে নির্বাচনের অগ্রগতি জানাতে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানান। এ সময় নির্বাচন সংক্রান্ত আরও কিছু প্রস্তুতির কথা জানান উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। সংবাদ সম্মেলনে সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ উপস্থিত ছিলেন। এর অগে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।  
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘নির্বাচন ফেব্র“য়ারি অথবা এপ্রিলে হবে, এর অর্থ হচ্ছে নির্বাচনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরি করতে যা কিছুর প্রয়োজন, তা এখন থেকেই শুরু করতে হবে। নির্বাচনের জন্য পর্যাপ্ত লোকবল আছে কিনা, খুব দ্রুত এটি জানতে হবে। যদি নিয়োগ করতে হয় তাহলে প্রক্রিয়া এখনই শুরু করে দিন। তাদের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করুন, প্রতিদিন প্রশিক্ষণ হবে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রেসসচিব শফিকুল আলম বলেন, নির্বাচন ঘিরে সব প্রস্তুতি ডিসেম্বরের মধ্যে নিতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ করতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। সংস্কারসহ সব প্রস্তুতি শেষ হলে রোজার আগে নির্বাচন হতে পারে। তিনি আরও জানান, নির্বাচনের সময় ১৮-৩২ বছর বয়সী ভোটারদের আলাদা বুথ রাখা যায় কিনা-সে বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
শফিকুল আলম বলেন, ভোটের আগে যে কোনো ধরনের ভায়োলেন্সকে যেন প্রতিহত করা যায় এবং ভোটের পরেও আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি যাতে ঠিক থাকে সেটা নিয়েও যথেষ্ট আলোচনা হয়েছে। নির্বাচনের আগে ডিসি, এসপি, ওসি, ইউএনওদের রদবদল করার কথা বলা হয়েছে। রিশাপলটা কীভাবে করা হবে, এটা একটা র‌্যান্ডম ওয়েতে করবে।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ৮ লাখ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত থাকবে জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, প্রস্তুতির মধ্যে অনেকগুলো বিষয় আছে। যেমন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে (পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড) ১৭ হাজার নতুন সদস্য নেওয়া হচ্ছে। তাদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ যেন এ সময়ের মধ্যে শেষ হয়, সে বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কীভাবে ডেপ্লয়েড হবে এটা একটা ইস্যু, কোথায় কোথায় ডেপ্লয়েড হবে, আপনারা জানেন যে বর্ডার এরিয়াতে কীভাবে ডেপ্লয়মেন্ট হবে, সারা দেশের বিভিন্ন রকম ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে কীভাবে ডেপ্লয়মেন্ট হবে, কতজন আনসার থাকবেন, কতজন পুলিশ সদস্য থাকবেন, বিজিবি বা সেনাবাহিনী কীভাবে থাকবেন, স্ট্রাইক ফোর্স হিসেবে কীভাবে থাকবেন, সেগুলো নিয়ে আজকের এই মিটিংয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। 
প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে অনেক পাঁয়তারা হয়, যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়। প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যাতে নির্বাচন সামনে রেখে আগামী মাসগুলোয় কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করে।
প্রধান উপদেষ্টার বরাত দিয়ে প্রেস সচিব বলেন, ‘আগে যেসব নির্বাচন হয়েছে, সেগুলো হয়েছে লোক দেখানো। সেজন্য একটা প্রকৃত নির্বাচন কী করে আয়োজন করতে হয়, সেটার প্রশিক্ষণ নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের দিতে হবে। কার কী ভূমিকা তা পরিষ্কার থাকতে হবে। দরকার হলে রিহার্সাল নির্বাচন করতে হবে যাতে অনুশীলন হয়।’
প্রেস সচিব জানান, নির্বাচনের সময় ভোটারদের জন্য নিয়মাবলী সম্বলিত ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করতে বলেছেন যাতে ভোটাররা প্রশিক্ষিত হতে পারে। টেলিভিশন সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ভিডিওগুলো প্রচার করতে হবে, জরুরি নম্বরগুলো সবার কাছে পৌঁছাতে হবে, যাতে কোনও ভোটারের অসুবিধা হলে সঙ্গে সঙ্গে ফোন দিতে পারে। কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যেন ভোটার সরাসরি যুক্ত থাকতে পারে।
নারীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতে বিশেষভাবে জোর দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা উলে­খ করে প্রেস সচিব বলেন, অর্ধেক ভোটার নারী, কেউ যাতে তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত না করতে পারে এজন্য পর্যাপ্ত নারী সদস্য এবং কর্মকর্তা মোতায়েন থাকতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা নতুন ভোটারদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখার কথা উলে­খ করে বলেছেন, ১৬ বছর মানুষ ভোট দেখেনি। ভোটারদের স্মৃতিতে আছে ভোটকেন্দ্রে মারামারি, ভোট চুরি, আগামী নির্বাচনে যেন ভোটারদের একটা ভালো অভিজ্ঞতা হয়, একটা সুন্দর স্মৃতি থাকে, প্রথম ভোট যারা দিবে এটা তাদের জন্য গৌরবের, সে যেন ভালো অনুভব করে।
উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, আগে ভোটের দিন ইন্টারনেট বন্ধ করে রাখা হতো। আবার যাতে ইন্টারনেট ব্যবস্থা সচল রাখা যায়, সেজন্য বলা হয়েছে। অতীতে আমরা দেখেছি, মিডিয়ার দলীয় কর্মীদের নির্বাচন কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়, এবার প্রকৃত মিডিয়াকর্মী দায়িত্ব পালন করতে পারে এর জন্য আগে থেকে কাজ করার কথা বলা হয়েছে। মিডিয়ার জন্য আচরণবিধি যাতে আগে থেকে প্রস্তুত করা যায়, যাতে আগে থেকে জানতে পারে মিডিয়ার দায়িত্ব কতটুকু এবং যারা নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন, তারাও জানতে পারবেন মিডিয়ার এক্সেস কতটুকু। এছাড়া পর্যবেক্ষকের নামে কেউ যাতে দলীয় কর্মীকে পাঠাতে না পারে এই বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
উপ-প্রেস সচিব জানান, আওয়ামী লীগের আমলে বিতর্কিত ৩টি নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা পোলিং অফিসার এবং প্রিজাইডিং অফিসারদের বাদ দিয়ে এবার যাতে নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া যায় কিনা, তা খতিয়ে দেখতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। এক্ষেত্রে সব সম্ভব না হলেও যত বেশি সম্ভব তাদের বাদ দিয়ে যাতে নিয়োগ দেওয়া হয় সেই বিষয়টি দেখতে বলেছেন। এছাড়া নির্বাচনের সময় বিভাগীয়, জেলা, উপজেলা এবং কেন্দ্রীয় ভাবে মনিটরিং সেল গঠন করা হবে, যেখান থেকে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া মনিটর করা হবে। সেখানে কোনও অনিয়ম দেখা গেলে যাতে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
আজাদ মজুমদার জানান, বৈঠকে আলোচনা হয়েছে, এক থানার পুলিশকে আরেক থানা এলাকায় দায়িত্ব দিতে, যাতে কেউ প্রভাব বিস্তার না করতে পারে। আজকের (বুধবার) সভায় কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি, মূলত প্রধান উপদেষ্টা এই নির্দেশনাগুলো দিয়েছেন। নির্দেশনার প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয় অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর থেকেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতদ্রুত সম্ভব আয়োজনের তাগিদ দিয়ে আসছে বিএনপিসহ অনেক রাজনৈতিক দল।
এমন দাবির প্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বরাবরই বলে আসছেন, ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এরই মধ্যে গত ১৩ জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক হয়। সেই বৈঠকের পর ২০২৬ সালের ফেব্র“য়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে-এমন বক্তব্য আসে। তার পর থেকেই দেশের রাজনীতির মাঠে কিছুটা নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে।

্রিন্ট

আরও সংবদ