খুলনা | বৃহস্পতিবার | ১০ জুলাই ২০২৫ | ২৬ আষাঢ় ১৪৩২

নেতিবাচক কনটেন্ট: ডিজিটাল যুগের অদৃশ্য বিষাক্ততা

জয়া মাহবুব |
১১:৫৭ পি.এম | ০৯ জুলাই ২০২৫


বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তি আমাদের জীবনযাত্রা সহজ, দ্রুত ও সংযুক্ত করেছে। কিন্তু এই সুবিধার আড়ালে এক বিপজ্জনক ছায়াও প্রতিনিয়ত প্রসারিত হচ্ছে-তা হলো নেতিবাচক কনটেন্ট। সোশ্যাল মিডিয়া, নিউজ পোর্টাল, ইউটিউব, এমনকি মেসেজিং অ্যাপগুলোতে প্রতিনিয়ত ছড়িয়ে পড়ছে হিংসা, বিদ্বেষ, গুজব, মানসিক অবক্ষয় সৃষ্টিকারী বক্তব্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য। এগুলো আমাদের চিন্তাভাবনা, মন-মেজাজ এবং মানসিক স্বাস্থ্যকে অজান্তেই বিষাক্ত করে তুলছে।
নেতিবাচক কনটেন্ট কীভাবে আমাদের প্রভাবিত করে? নেতিবাচক কনটেন্ট মানেই শুধু সহিংসতা বা অশ্লীলতা নয়, বরং এটি হতে পারে : ১.অবমূল্যায়নমূলক মন্তব্য; ২. দুঃসংবাদে ভরপুর নিউজফিড; ৩. আত্মবিশ্বাস ভেঙে দেওয়া ‘পারফেক্ট লাইফ’ প্রদর্শনী; ৪. কিংবা ক্রমাগত তুলনা, কটাক্ষ, বিদ্বেষপূর্ণ পোস্ট। 
এইসব বিষয় মানুষের মধ্যে হীনমন্যতা, মানসিক চাপ, উদ্বেগ, একাকীত্ব এবং এমনকি আত্মহত্যার প্রবণতাও বাড়িয়ে দেয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, দিনের পর দিন নেতিবাচক কনটেন্ট দেখলে মস্তিষ্কে কর্টিসল (স্ট্রেস হরমোন) বেড়ে যায়, যা দীর্ঘমেয়াদে মানসিক স্বাস্থ্য হ্রাস করে।
কেন মানুষ নেতিবাচক কনটেন্টে আকৃষ্ট হয়? বিচিত্র হলেও সত্য, মানুষ নেতিবাচক কনটেন্টে সহজেই আকৃষ্ট হয়। কারণ এটি আবেগে নাড়া দেয়, কৌতূহল জাগায় এবং দ্রুত ‘ভাইরাল’ হয়। সোশ্যাল মিডিয়া অ্যালগরিদমগুলোও সে অনুযায়ী কাজ করে-যা মানুষ বেশি দেখে, সেটাই বেশি দেখায়। ফলাফল? নেতিবাচকতাই হয়ে ওঠে সবচেয়ে দৃশ্যমান।
সমাধান কী হতে পারে? ১. ডিজিটাল সচেতনতা গড়ে তোলা: আমাদের কী দেখছি, কী শেয়ার করছি-সে বিষয়ে সচেতন হতে হবে। তথ্য যাচাই না করে কিছুই বিশ্বাস বা প্রচার নয়। ২. পজিটিভ কনটেন্টের চর্চা: সমাজ, সংস্কৃতি, মানবিকতা, মনোবিজ্ঞান, উন্নয়নমূলক গল্প-এসব বিষয় নিয়ে বেশি কনটেন্ট তৈরি ও প্রচার করতে হবে। ৩. সময় নিয়ন্ত্রণ: সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ার সময় ব্যয় করা পরিবর্তে বই পড়া, প্রকৃতির সাথে সময় কাটানো বা নির্মল বিনোদনের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ৪. মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলা: নেতিবাচক কনটেন্ট আমাদের মানসিক স্থিতি নষ্ট করছে, এটা স্বীকার করে সবার সাথে কথা বলার, শেয়ার করার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।
ডিজিটাল যুগ আমাদের অনেক কিছু দিয়েছে, কিন্তু সেটিকে আমরা কীভাবে ব্যবহার করব, সেটাই ভবিষ্যতের জন্য নির্ধারক। নেতিবাচক কনটেন্ট যেন আমাদের ভালোবাসা, সহানুভূতি ও মনুষ্যত্বকে গ্রাস না করে-সেজন্য চাই ব্যক্তিগত ও সামাজিক পর্যায়ে সচেতনতা। মনে রাখতে হবে, আমরা যা দেখছি, সেটাই আমরা হয়ে উঠছি। তাই সময় এসেছে-সচেতন ডিজিটাল নাগরিক হয়ে ওঠার।

্রিন্ট

আরও সংবদ

অন্যান্য

প্রায় ১৮ দিন আগে