খুলনা | শুক্রবার | ১১ জুলাই ২০২৫ | ২৭ আষাঢ় ১৪৩২

রপ্তানি খাতের জন্য অশনিসংকেত

|
১২:১১ এ.এম | ১১ জুলাই ২০২৫


বাংলাদেশের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫ শতাংশ বাড়তি শুল্ক আরোপে বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়বে দেশের রপ্তানি খাত। বিশেষ করে দেশের প্রধান রপ্তানি খাত পোশাকশিল্পের জন্য এটি একটি অশনিসংকেত। এ শুল্কহার কার্যকর হলে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়বে এই শিল্প। যেখানে ভিয়েতনামের ওপর ২০ শতাংশ এবং ভারতের ওপর ২৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন, সেখানে বাংলাদেশের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় স্বভাবতই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা অনেকটা কমে যাবে। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কাজেই যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপ বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু রপ্তানিকারকদের ওপর নয়, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির ওপরই এর অভিঘাত হবে মারাত্মক। সামাজিক ক্ষেত্রেও এর সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব উপেক্ষণীয় নয়। কারণ পোশাকশিল্প দেশের নারীদের জন্য ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এ শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলে তথা বহু কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে এই নারীদের অনেকেই কর্মসংস্থান হারাবেন। কাজেই শুল্কহার বৃদ্ধির বিষয়টিকে হালকাভাবে নেওয়ার ন্যূনতম সুযোগ নেই। এ সংকট সমাধানে অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে হবে।  
উলে­খ্য. গত ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ৩৭ শতাংশ পালটা শুল্ক আরোপ করে। এর আগে দেশটিতে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক ছিল। ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর বাংলাদেশ এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেয়। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তিন মাস আলোচনার পর মাত্র ২ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে বাংলাদেশের জন্য এখন ৩৫ শতাংশ বাড়তি শুল্ক নির্ধারণ করায় মোট শুল্ক দাঁড়াবে ৫০ শতাংশ, যা ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। অর্থাৎ সময় আছে আর মাত্র ২১ দিন। সংশ্লিষ্টদের মতে, এ সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের সঙ্গে ভালোভাবে দরকষাকষি করতে পারলে শুল্কহার কমতে পারে। কাজেই এখনো সময় চলে যায়নি। ট্রাম্প প্রশাসন আলোচনার দরজা খোলা রেখেছে। যত দ্রুত সম্ভব আলোচনা শুরু করা দরকার। 
দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা বলছেন, শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ককে হালকাভাবে নিয়েছিল সরকার। দরকষাকষিতেও হয়তো দুর্বলতা ছিল। সেসব দুর্বলতা এখন কাটিয়ে উঠতে হবে। প্রয়োজনে লবিস্ট নিয়োগ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার আগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকারের আলাপ-আলোচনা করে নেওয়া উচিত। কারণ ব্যবসায়ীরা অর্থনীতি ও রপ্তানি খাতের প্রকৃত অবস্থা তাদের বোঝাতে পারবেন। কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দরকষাকষির মাধ্যমে শুল্ক কমাতে হলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেওয়া উচিত, যাতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি উলে­খযোগ্য পরিমাণে কমে আসে। কিছু সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিয়ে এই বাণিজ্য ঘাটতি কমানো সম্ভব। মোদ্দাকথা, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা ও দরকষাকষিতে সাফল্য পাওয়ার জন্য সব ধরনের কার্যকর পদক্ষেপই গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, যুক্তরাষ্ট্র হলো বাংলাদেশের পোশাক খাতের সবচেয়ে বড় বাজার। অনেক পোশাক কারখানা কেবল যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের ওপর নির্ভর করে ব্যবসা করছে। কাজেই এ সংকট সমাধানে যথাযথ গুরুত্ব আরোপের বিকল্প নেই।

্রিন্ট

আরও সংবদ