খুলনা | শনিবার | ১২ জুলাই ২০২৫ | ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

খুলনায় আইন-শৃঙ্খলার অবনতি : শঙ্কায় নগরবাসী

|
১২:১১ এ.এম | ১২ জুলাই ২০২৫


মহানগরী খুলনায় আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়েছে। দিনে-রাতে এখন কেউ নিরাপদ নেই। পুলিশ বরাবারের মতো গতানুগতিক মাদক ব্যবসা, আধিপত্য বিরোধ এবং অপরাধ জগতের প্রতিপক্ষের হাতে হত্যাকাণ্ড হচ্ছে বলে, প্রাথমিকভাবে ধারণার ওপর বক্তব্য দিলেও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে তেমন কোনো পরিকল্পিত উদ্যোগ নেই প্রশাসনে। গত ১০ মাসে ২৭টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। সর্বশেষ নিজ বাড়ির সামনে শুক্রবার জুমআ’র নামাজের আগে সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মমভাবে খুন হলেন খানজাহান আলী থানা যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমান মোল­া। এ ঘটনার পর তাৎক্ষণিক পুলিশ গতানুগতিক মাদক ব্যবসা সংক্রান্ত বিরোধকে ইঙ্গিত করেছে। এভাবে একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটছে। কিছু কিছু হত্যাকাণ্ডের আসামি গ্রেফতার হচ্ছে এবং রহস্য উন্মোচন হয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও জনমনে শঙ্কা কাটছে না। একটি সন্ত্রাস কবলিত জনপদ হিসেবে খুলনার নামটি এখন গণমাধ্যমে উচ্চারিত হচ্ছে। এ থেকে বের হওয়ার কার্যকর কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান হচ্ছে না। এ হত্যাকান্ডে মাত্র চারদিন আগে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোঃ জুলফিকার আলী হায়দার প্রেসব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন। এসময় তিনি গত ১০ মাসে নগরীতে ২৬ হত্যাকাণ্ডের ঘটনার কথা স্বীকার এবং সর্বশেষ অবস্থার আলোকপাত করেন। ওই পদত্যাগের দাবিতে চলা আন্দোলন বিষয়ে কেএমপি কমিশনার মোঃ জুলফিকার আলী হায়দার বলেছেন, পুলিশকে দূরে ঠেলে দিবেন না। মনোবল ভেঙে গেলে পুলিশ আর কাজ করতে পারবে না। 
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে ঘুরে ফিরে তার পদত্যাগ দাবির প্রসঙ্গ উঠে আসে। তিনি বলেন, চাকরিতে পদত্যাগের সুযোগ নেই। কর্তৃপক্ষ চাইলে আমাকে বদলী করতে পারে। সেজন্য আমি প্রস্তুত আছি। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং পরিস্থিতি উন্নতির জন্য পুলিশকে সহযোগিতা করতে হবে। চাপ দেওয়া বা দাবি আদায়ের নামে পুলিশের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করা সমীচিন হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কমিশনার জানান, বিগত ১০ মাসে মেট্রোপলিটন এলাকায় ২৬টি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে দু’টি লাশ নদীতে ভেসে আসায় ঐ দু’টি হত্যাকান্ডের মামলা নৌপুলিশ তদন্ত করছে। বাকি ২৪ টির মধ্যে ২২টি হত্যার পেছনের ঘটনা মেট্রোপলিটন পুলিশ তদন্তের মাধ্যমে উদঘাটন করতে সক্ষম হওয়ার পাশাপাশি আসামিদের আটক করা হয়েছে। বাকি দুইটি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে, তবে তদন্তকাজে অগ্রগতি আছে।
তিনি জানান, মাদকের কারণে আমাদের তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নষ্ট হচ্ছে। মাদকের বিক্রেতা, বাহক ও যারা খুলনার বাইরে থেকে মাদক নিয়ে আসে তাদের ওপর পুলিশের নজরদারি অব্যাহত আছে। এছাড়াও নিয়মিত অভিযানে মাদকদ্রব্য উদ্ধার হচ্ছে। স্কুল-কলেজ পড়–য়া আমাদের সন্তানদের সন্ধ্যায় পড়ার টেবিলে ফিরিয়ে আনতে হবে। তারা যেন সন্ধ্যার পরে ঘরের বাইরে অযথা আড্ডা না দেয়, সেদিকে অভিভাবকসহ সকলকে নজর দিতে হবে। কিন্তু পুলিশ কমিশনারের এ কথায় আর হালে টিকছে না। কেননা খুলনার মানুষ চায় নিরাপত্তা। নিরাপদে জীবন-যাপন করাই হলো নগরবাসীর চাওয়া। কে কখন, কোথায় হামলার শিকার হয় এমন শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে সাধারণ মানুষের কাছে। বিষয়টি অতিদ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। যা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পূর্ব শর্ত আইন-শৃঙ্খলার কাক্সিক্ষত উন্নয়ন নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের কারণ হিসেবে দেখা দিবে। তাই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এটি নিয়ন্ত্রণ এবং কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়াই হবে আমাদের প্রত্যাশা।

 

্রিন্ট

আরও সংবদ