খুলনা | রবিবার | ১৩ জুলাই ২০২৫ | ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

এসএসসি পরীক্ষার ফল মানসম্মত পাঠদানে গুরুত্ব দিতে হবে

|
১২:৪০ এ.এম | ১৩ জুলাই ২০২৫


এবারের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় সব বোর্ডেই পরীক্ষার্থীরা গণিত ও ইংরেজিতে খারাপ করায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সার্বিক পাসের হারে। বৃহস্পতিবার ফল প্রকাশের পর দেখা গেছে, বিগত ১৫ বছরের মধ্যে পাসের হার সর্বনিম্ন। এ বছর ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত এসএসসি, মাদ্রাসা বোর্ডের দাখিল এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের এসএসসি ও দাখিলসহ (ভোকেশনাল) ১১ বোর্ডের পরীক্ষার ফলাফলে গড় পাসের হার ৬৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমেছে। তবে এবারও ছাত্রীরা তুলনামূলক ভালো ফল করেছে। এ বিষয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেছেন, বিগত সরকারের আমলে নিজেদের সাফল্য দেখানোর জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের নম্বর বাড়িয়ে দিয়ে জিপিএ-৫-এর সংখ্যা বৃদ্ধি করে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে ফল প্রকাশ করা হতো। এভাবে ফল প্রকাশের কারণে অতীতে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রকৃত মূল্যায়ন না হওয়ায় তাদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার তাই এ ধারা থেকে সরে এসে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার খাতার প্রকৃত মূল্যায়নের জন্য শিক্ষা বোর্ডগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে। সেভাবেই এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে শিক্ষার্থীদের মেধার প্রকৃত মূল্যায়ন করা হয়েছে।
আমরা মনে করি, এসব তথ্য এবং আনুষঙ্গিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে পরীক্ষা পদ্ধতির সংস্কারে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে শিক্ষার মান বৃদ্ধি পায়। আমাদের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার গুণগত মান না বাড়লে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিযোগিতায় তারা পিছিয়ে পড়বে। উদ্বেগের বিষয় হলো, দেশে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও মানসম্পন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সার্বিক মান উন্নয়নে তাই দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য চাহিদা অনুযায়ী মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলারও পদক্ষেপ নিতে হবে।
দেশে পাঠদান পদ্ধতির ক্ষেত্রে বড় এক সমস্যা বহু শিক্ষকের অদক্ষতা। মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আগ্রহী না হলে শিক্ষার গুণগতমান কাক্সিক্ষত মাত্রায় বাড়বে কিনা সন্দেহ। এ সমস্যার সমাধানে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ বৃদ্ধির পাশাপাশি জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। শিক্ষার্থীদের গাইডবই ও কোচিং সেন্টারের বৃত্ত থেকে বের করার উপায় খুঁজে বের করতে হবে। কেবল ভালো ফল নয়, অধ্যয়নের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নির্মল চরিত্র গঠনও হওয়া উচিত শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য। মানসম্মত পাঠদান ভালো ফলাফলে বিশেষ ভূমিকা রাখে। কাজেই আমাদের পাঠদান ও পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে যেসব প্রশ্ন রয়েছে, সেদিকেও নজর দিতে হবে।
বিভিন্ন বয়সী মানুষের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসক্তি বর্তমানে মহামারির মতো ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ মাদকের মতোই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নেশাগ্রস্ত করছে, যা থেকে বের হওয়া জরুরি। লক্ষ করা গেছে, এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ভালো ফল অর্জন করা সত্তে¡ও বহু শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ভর্তি পরীক্ষায় কাক্সিক্ষত ফল অর্জন করতে পারে না। এবারের এসএসসি পরীক্ষার ফল থেকে শিক্ষা নিয়ে শিক্ষার গুণগত মান বাড়াতে যা যা করণীয়, তার সবই করতে সরকার সচেষ্ট হবে, এটাই প্রত্যাশা।

্রিন্ট

আরও সংবদ