খুলনা | রবিবার | ১৩ জুলাই ২০২৫ | ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

মুহসিন মহিলা কলেজ উপাধ্যক্ষসহ সাতটি পদ

প্রার্থীদের আপত্তির মধ্যেও তড়িঘড়ি করে নিয়োগ স্বজনপ্রীতি ও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ!

এন আই রকি |
০১:৩১ এ.এম | ১৩ জুলাই ২০২৫


খুলনার মুহসিন মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষসহ সাতটি পদে গভীর রাত পর্যন্ত সভা করে নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়েছে। পরীক্ষার্থীদের আপত্তি, আদালতে অভিযোগসহ নানা বিষয় উপেক্ষা করে এই নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। এমনকি পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্রে উদ্দেশ্যমূলক ভাবে কলেজের সভাপতির নাম উলে­খ করে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানানো হয়। 
কলেজের শিক্ষক মাধব কৃষ্ণ মন্ডল কলেজ কমিটির সভাপতি ও বিএনপি’র এক শীর্ষ নেতার নাম ভাঙিয়ে চাকরি দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন প্রার্থীর কাছে টাকা দাবি করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে নিবন্ধন নিয়ে সমালোচিত ব্যক্তি, আ’লীগের আত্মীয় এবং কলেজের শিক্ষকের আত্মীয় রয়েছেন।  
জানা যায়, গত ১০ এপ্রিল কলেজটিতে আটটি পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। পরবর্তীতে ১৩ জুন একটি পদ ছাড়া সকল পদে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা শেষ হওয়ার দু’দিন পর, ১৫ জুন, চারজন পরীক্ষার্থী নিয়োগে অনিয়ম এবং আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এই ঘটনার পর সরকারি পাইওনিয়ার মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ শামীম হোসেনকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। একই সঙ্গে দু’জন পরীক্ষার্থী বাদী হয়ে খুলনার সহকারী জজ দৌলতপুর আদালতে মামলা করেন। আদালত বিবাদী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক, কলেজের সভাপতি, কলেজের অধ্যক্ষসহ মোট নয়জনকে আগামী ২ সেপ্টেম্বর সমন জারি করেছে।
এদিকে, গত মঙ্গলবার  তদন্ত কমিটি অভিযোগকারীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে। এ সময় অভিযোগকারীরা লিখিত ভাবে মাধব কৃষ্ণ মন্ডলের টাকা চাওয়ার বিষয়, পরীক্ষা দেরিতে শুরু হওয়া, পরীক্ষার দিন কলেজের ভেতরের লোকজনের সহযোগিতা, টাকার বিনিময়ে চাকরি নেওয়ার প্রবণতা এবং সম্ভাব্য নিয়োগপ্রাপ্তদের একটি তালিকা তদন্ত কমিটিকে জানান। মঙ্গলবার বিকেলের পর কলেজের জিবি কমিটির মিটিং শুরু হলে রাত ১২টা পর্যন্ত তড়িঘড়ি করে অভিযোগকারীদের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী সাতজনের নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। গতকাল বুধবার সকাল থেকে পোস্টের মাধ্যমে সকল নিয়োগপ্রাপ্তদের নিয়োগপত্র পাঠানো হয়।
আরও জানা যায়, উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কলেজের শিক্ষক মোঃ মাহফুজার রহমানকে, যার কলেজ নিবন্ধন নিয়ে বিতর্ক ছিল এবং দীর্ঘদিন বেতনও বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে আদালতের মাধ্যমে তিনি বিষয়টি সমাধান করেন। কলেজের শিক্ষক দীপক কুমার মলি­কের ভাগ্নে সম্রাট সরকার ল্যাব সহকারী (পদার্থবিজ্ঞান) পদে চাকরি পেয়েছেন। সাবেক প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের আস্থাভাজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী দাউদ হায়দারের সুপারিশে সিদ্দিকী পূর্ণতা ল্যাব সহকারী (জীববিজ্ঞান) পদে চাকুরি পেয়েছেন। তবে এ বিষয়ে দাউদ হায়দার বলেছেন, ‘আমি পূর্ণতাকে চিনি, তবে চাকুরির বিষয়ে আমি কোনো সুপারিশ করিনি।’ সরকারি দৌলতপুর মহসিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সাবেক প্রতিমন্ত্রীর আস্থাভাজন শহিদুল ইসলাম জোয়ারদারের শ্যালক শেখ আমিনুর রহমান অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ পেয়েছেন। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক জানান, ‘আমার শ্বশুর বাড়ির লোক তো বিএনপি রাজনীতিতে জড়িত।’
এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুল লতিফ  বলেন, ‘আদালতের সমন জারির নোটিশ আমি পেয়েছি। নিয়োগ কমিটির সুপারিশে সাতজনের নিয়োগপত্র প্রদান করা হয়েছে। এর থেকে বেশি বলতে পারব না, আপনি সভাপতির সাথে কথা বলেন।’  
কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি শেখ কামরুজ্জামান  জানান, ‘আ’লীগের কারও চাকরি হয়েছে কিনা, সেটা আমি জানি না। পরীক্ষায় প্রথম স্থান যে হয়েছে, তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। স্বচ্ছতার সাথে সকল নিয়োগ প্রক্রিয়া করা হয়েছে।’

্রিন্ট

আরও সংবদ