খুলনা | রবিবার | ১৩ জুলাই ২০২৫ | ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

ডেঙ্গু ছড়িয়েছে দেশের ৬০ জেলায়

খবর প্রতিবেদন |
০১:৩৩ এ.এম | ১৩ জুলাই ২০২৫


দেশের ৬০ জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। শুধুমাত্র চারটি জেলায় এই বছর এখন পর্যন্ত কোনও ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায়নি। জেলাগুলো হলো-গোপালগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, জয়পুরহাট এবং সুনামগঞ্জ। তবে সংক্রমণের হার অর্থাৎ রোগী বেশি পাওয়া গেছে দেশের ১০ জেলায়। তার মধ্যে পাঁচটি উপকূলীয় জেলা। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সর্বশেষ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব জ্যামিতিক হারে বেড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, ঢাকাসহ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুমিল­া, গাজীপুর ও চাঁদপুর এবং উপকূলের পাঁচ জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, বরগুনা, বরিশাল, পটুয়াখালীতে রোগীর সংখ্যা বেশি। ডেঙ্গু আক্রান্তের ৭৯ শতাংশ ও মৃত্যুর ৮৭ শতাংশ হয়েছে এসব জেলায়। উপকূলের পাঁচ জেলায় আক্রান্ত ৪৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ ও মৃত্যু ৪১ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ঢাকায় আক্রান্ত ৪ হাজার ৬৫৯ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২৯ জনের। এর মধ্যে ৩ হাজার ১১৩ জন রোগী ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায়। বাকিরা সিটি কর্পোরেশন এলাকার বাইরের। এছাড়া অন্যান্য জেলার মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আক্রান্ত ৫৩৮, তবে মৃত্যু শূন্য। কুমিল­ায় আক্রান্ত ৪৮১ জন, মৃত্যু হয়েছে দুইজনের। গাজীপুরে আক্রান্ত ৩৩৮ জন, মৃত্যু শূন্য, চাঁদপুরে আক্রান্ত ২৮৪, কারও মৃত্যু হয়নি। কক্সবাজারে আক্রান্ত ৩৫৪, মৃত্যু শূন্য। চট্টগ্রামে আক্রান্ত ৫৫৩, মৃত্যু হয়েছে দুইজনের। বরগুনায় আক্রান্ত ৩ হাজার ৬৫৩ জন, মৃত্যু ৬ জনের। বরিশালে আক্রান্ত ১ হাজার ২২৮, মৃত্যু ৮ জনের। পটুয়াখালীতে আক্রান্ত ৭৮৩, মৃত্যু হয়েছে একজনের।
কীটতত্ত¡বিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ‘আমাদের গবেষণা ফোরকাস্টিং মডেল অনুযায়ী, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে বরগুনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম, কুমিল­া, কক্সবাজার, গাজীপুর, পিরোজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, চাঁদপুর ও মাদারীপুরে ডেঙ্গু ব্যাপক হারে বিস্তার লাভ করতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘গড়ে প্রতিদিন প্রায় ২০০ জন নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। বাস্তব চিত্র আরও ভয়াবহ, কারণ অনেকেই বাসায় বা অনিবন্ধিত ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন, যাদের তথ্য সরকারিভাবে নথিভুক্ত হয় না। এই পরিসংখ্যানগুলো এক গভীর সংকটের দিকেই ইঙ্গিত করছে, পরিস্থিতি যদি এখনই সমাধানে না আনা যায়, তাহলে আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।’
চলতি বছরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৪ হাজার ৪৬০ জন। ২০২৪ সালের একই সময়ে রোগী ছিল ৪ হাজার ৩১১ জন। অর্থাৎ ২০২৪ সালের তুলনা এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ প্রায় সাড়ে তিন গুণ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, এই বছরের জানুয়ারিতে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ১ হাজার ১৬১ জন, মৃত্যু হয় ১০ জনের, ফেব্র“য়ারিতে আক্রান্ত ৩৭৪, মৃত্যু হয় ৩ জনের, মার্চে আক্রান্ত ৩৩৬ জন, এই মাসে কোনও মৃত্যু হয়নি। এপ্রিলে আক্রান্ত ৭০১ ও মৃত্যু ৭, মে মাসে আক্রান্ত ১ হাজার ৭৭৩ জন ও মৃত্যু ৩ জনের। জুন মাসে আক্রান্ত ৫ হাজার ৯৫১ ও মৃত্যু ১৯ জনের। আর জুলাইয়ের ১২ দিনে আক্রান্ত ৪ হাজার ১৬৪ জন, মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, চলতি বছরে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৫৪ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ২৮ জন, ঢাকার বাইরে বরিশাল বিভাগে ১৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫ জন, খুলনা বিভাগে ৪ জন, রাজশাহী বিভাগে দুইজন, এছাড়া ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগে একজন করে মারা গেছেন। সিলেট ও রংপুর বিভাগে ডেঙ্গুতে কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
স্বাস্থ্য অধিদফতর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর তথ্য রাখে ২০০০ সাল থেকে। এর মধ্যে ২০২৩ সালে এ রোগ নিয়ে সবচেয়ে বেশি ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যুও হয় ওই বছর।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আবু জাফর বলেন, ‘ডেঙ্গু এখন আর আগের মতো সহজভাবে মোকাবিলা করার অবস্থায় নেই। ডেঙ্গুর ধরণ বদলেছে। এখন রোগীদের মধ্যে জটিল উপসর্গ বেশি দেখা যাচ্ছে। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই রোগীকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘বরগুনায় কিছুদিন আগে ডেঙ্গুর একটি আউটব্রেক দেখা দিলেও বর্তমানে তা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে সারা দেশে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ডেঙ্গু মোকাবিলায় সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। জ্বর হলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সময় মতো চিকিৎসা নিলে জটিলতা এড়ানো সম্ভব।’ 
সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন।

্রিন্ট

আরও সংবদ