খুলনা | সোমবার | ১৪ জুলাই ২০২৫ | ৩০ আষাঢ় ১৪৩২

শ্রীলঙ্কাকে ৯৪ রানে গুঁড়িয়ে সমতায় ফিরল বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক |
১০:৪৮ পি.এম | ১৩ জুলাই ২০২৫

১৭৭ করেও চিন্তামুক্ত হওয়ার উপায় ছিল না। পাতুম নিশাঙ্কা আর কুশল মেন্ডিসের ব্যাটে ঝড় উঠলে তো শ্রীলঙ্কার জন্য এই রানও কিছু নয়! তার ওপর রনগিরি ডাম্বুলা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের উইকেট পালে­কেলের মতোই ব্যাটিং-বান্ধব। জেতা-হারা তখনো তাই নির্ভর করছিল ভালো বোলিং-ফিল্ডিংয়ের ওপর।
গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়ে কিছু ভুল ছিল, ক্যাচও পড়েছে একটা। বোলাররা তবু হাল ছাড়েননি। পাওয়ারপ্লেতেই ৩৭ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে শ্রীলঙ্কার ব্যাটিংটাও ঢুকে গিয়েছিল খোলসের মধ্যে। সেখান থেকে আর ম্যাচ জেতার মতো অবস্থায় আসতে পারল না স্বাগতিকেরা। সিরিজজুড়েই দুর্দান্ত ব্যাটিং করা ওপেনার পাতুম নিশাঙ্কার করা সর্বোচ্চ ৩২ রান ২৯ বলে। আরেক মারদাঙ্গা ওপেনার কুশল মেন্ডিস তো দুই বাউন্ডারিতে ৮ রান করে প্রথম ওভারেই রান আউট। ১৫.২ ওভারে ৯৪ রানে অলআউট শ্রীলঙ্কাকে আসলে পথ দেখাতে পারেননি কেউই। বাংলাদেশের সব বোলারের মধ্যেই ভাগ করে দিতে হবে কৃতিত্বটা। তার মধ্যেও আলাদা করে বলতে হবে বাঁহাতি পেসার শরীফুল ইসলাম ও লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনের কথা। রিশাদের উইকেট ১৮ রানে ৩টি, শরীফুল পেয়েছেন ১২ রানে ২ উইকেট।
বাংলাদেশের ৮৩ রানের জয়ে ১-১ সমতায় ফেরা টি-টোয়েন্টি সিরিজ এখন ১৬ জুলাইয়ের অলিখিত ফাইনালের অপেক্ষায়। কলম্বোর রানাসিংহে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের সে ম্যাচে যারা জিতবে, সিরিজ জিতবে তারাই। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০টি টি-টোয়েন্টি খেলে বাংলাদেশের এটি সপ্তম জয়, শ্রীলঙ্কার মাটিতে ৮ ম্যাচ খেলে চতুর্থ।
কালও কম্পিত ব্যাটিংয়েই শুরু হয়েছিল টসে হারা বাংলাদেশের। প্রথম দুই ওভারে মাত্র ৭ রানে দুই ওপেনার তানজিদ হাসান আর পারভেজ হোসেনের বিদায়। পাওয়ারপ্লের ৬ ওভার শেষে ২ উইকেটে ৩৯। তবে রনগিরি ডাম্বুলা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে সব শঙ্কা পরে উড়ে গেছে লিটন দাস আর শামীম হোসেনের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে। ডাম্বুলায় টি-টোয়েন্টির উৎসবমুখর রাতটা তাতেই অনেকটা হয়ে গেল বাংলাদেশের।
ডাম্বুলার ব্যাটিং উইকেটে আগে ব্যাট করলে ১৭০-১৮০ রানেরই লক্ষ্য ছিল। ৭ উইকেটে ১৭৭ রানে ইনিংস শেষ করে সেটা শেষ পর্যন্ত হলেও শুরুর ধাক্কা বাংলাদেশকে কিছুটা কাঁপিয়েই দিয়েছিল। সে বিপর্যয়ে বাঁধ দেয় তৃতীয় উইকেটে অধিনায়ক লিটন দাস আর তাওহিদ হৃদয়ের ৫৫ বলে ৬৯ রানের জুটি। বিনুরা ফার্নান্দোর করা ১২তম ওভারে আবারও ধাক্কা। দলের ৭৬ ও ৭৮ রানে ফিরে যান তাওহিদ হৃদয় আর মেহেদী হাসান মিরাজ। বাংলাদেশ ১১.৪ ওভারে ৭৮/৪। প্রথম ১০ ওভারে ২ উইকেটে ৬৯ রান করা ইনিংসটা একশ’ ছুঁয়েছে ১৪তম ওভারে।
পঞ্চম উইকেটে লিটনের সঙ্গে শামীমের জুটিতে বদলে যেতে থাকে পরিস্থিতি। দুইবার জীবন পাওয়া লিটন টি- টোয়েন্টিতে ১৩ ইনিংস পর ফিফটির দেখা পান ছক্কা মেরে, ৩৯ বল খেলে। বাংলাদেশের ইনিংসে তখন পর্যন্ত হওয়া চার ছক্কার তিনটিই আসে তাঁর ব্যাট থেকে, আরেকটি ২৫ বলে ৩১ করে যাওয়া হৃদয়ের। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে ওপেনার তানজিদ বিনুরার বলে ক্যাচ দেন শর্ট থার্ডম্যানে, কুশল পেরেরাকে একই ভাবে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন হৃদয়, দুই বল পর মিরাজও। বিনুরাকে স্কুপ শট মারতে গিয়ে তিনি ক্যাচ শর্ট ফাইন লেগে।
একই ওভারে হৃদয় আর মিরাজের ফিরে যাওয়া শুরুর শঙ্কা আবারও নিয়ে আসে বাংলাদেশ ইনিংসে। কিন্তু নতুন সঙ্গী শামীমকে নিয়ে লিটন উল্টো চড়াও হলেন শ্রীলঙ্কান বোলারদের ওপর। আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে কোচ ফিল সিমন্স আশা দেখিয়েছিলেন, আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভুগলেও লিটন হয়তো ফিরে পাবেন নিজেকে। কোচের কথা সত্যি করে চাপের মধ্যেও অধিনায়ক খেললেন ৫০ বলে ৭৬ রানের ইনিংস। বাংলাদেশের ইনিংসে হওয়া ৮ ছক্কার পাঁচটিই লিটনের। দু’টি মেরেছেন শামীম ও একটি হৃদয়। হৃদয়ের ব্যাটিংটা কালও টি-টোয়েন্টিসুলভ ছিল না। তবে শানাকাকে লং অন দিয়ে মারা তাঁর ছক্কার বাড়তি গুরুত্ব ইনিংসের চতুর্থ ওভারে ওটিই ছিল বাংলাদেশের প্রথম বাউন্ডারি।
ক্যান্ডির প্রথম টি-টোয়েন্টিতে দলের ব্যাটিং-ব্যর্থতার মধ্যেও শেষ দিকে নেমে শামীমের ৫ বলে অপরাজিত ১৪ রান দৃষ্টি কেড়েছিল। শামীম তাঁর টি-টোয়েন্টি সামর্থ্য দেখালেন কালও। শেষ ওভারে রান আউট হওয়ার আগে ২৭ বলে ৪৮ রান, পঞ্চম উইকেটে লিটনের সঙ্গে ৬.৩ ওভারে তাঁর ৭৭ রানের জুটিতেই পরের দিকে দলের রানটা দ্রুত বেড়েছে। শামীমের দুই ছক্কার প্রথমটিই ছিল বেশি দেখার মতো। তুষারার ১৭তম ওভারে এক্সট্রা কাভার দিয়ে চার, পরের বলে লং অফের ওপর দিয়ে মারা দুর্দান্ত ছক্কাটি মাঠ পেরোনোর আগপর্যন্ত ছক্কা মারার শ্যাডো করেই উইকেটে দাঁড়িয়ে ছিলেন শামীম।
ক্যান্ডির মতো ডাম্বুলায়ও টি-টোয়েন্টি মানেই উৎসব। টিকিট নিয়ে হাহাকার। এখানে গত দুই দিনের অভিজ্ঞতা সে রকমই। কাল ম্যাচ শুরু হয়েছে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায়, অথচ দুপুর থেকেই স্টেডিয়ামের বাইরে দর্শকদের ভিড়। সবাই টিকিট পাবেন না স্বাভাবিক। কিন্তু তাতে কি! বিকল্প উপায় ঠিকই বের করে নিলেন টিকিট না পাওয়া দর্শকেরা। খেলা শুরু হয়ে যাওয়ার পর আশপাশের চোরা পথ দিয়ে স্টেডিয়াম এলাকায় ঢুকে পড়েন অনেক মানুষ। মূল স্টেডিয়ামকে ঘিরে রাখা লোহার বেড়ার নিচ দিয়ে ঢুকে পড়েন প্রচুর দর্শক।
তাঁদের হতাশ হতে সময় লাগেনি। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠা রনগিরি ডাম্বুলা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের গ্যালারি খালি হতে শুরু করে শ্রীলঙ্কা ৭ উইকেট হারনোর পরই। লাউড স্পিকারে বেজে চলা হাই ভলিউমের মিউজিক তখন হয়ে যায় বাংলাদেশের দুর্দান্ত জয়েরই আবহসংগীত।
 

্রিন্ট

আরও সংবদ