খুলনা | মঙ্গলবার | ১৫ জুলাই ২০২৫ | ৩০ আষাঢ় ১৪৩২

তলিয়ে গেছে মৎস্য ঘের-পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শত শত পরিবার

ভবদহে বৃষ্টি বাড়ার সাথে বাড়ছে দুর্ভোগের আশঙ্কা জলাবদ্ধতায় নির্ঘুম রাত পার করছেন স্থানীয়রা

শাহিন হোসেন, অভয়নগর (যশোর) |
১১:৩২ পি.এম | ১৪ জুলাই ২০২৫


যশোরের অভয়নগর উপজেলায় টানা বর্ষণে জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। কয়েকদিন বিরতির পর গত রোববার থেকে ফের শুরু হওয়া অবিরাম বৃষ্টিপাতে নওয়াপাড়া বন্দরের কার্যক্রম প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে লোড-আনলোড কার্যক্রম। বৃষ্টির মধ্যে প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করে অনেকে বাড়ি ফিরতে পারছেন না, আবার কেউ কেউ বাধ্য হয়ে ভিজে পথ পাড়ি দিচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি ও মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, টানা বৃষ্টিতে ভবদহ অঞ্চলের ১২৯ হেক্টর আবাদি জমি জলাবদ্ধ হয়েছে। তলিয়ে গেছে ২৫ হেক্টর আউশ ও ৪৫ হেক্টর আমন ধান, ৫৮ হেক্টর সবজি ও ১ হেক্টর জমির মরিচ। এ ছাড়া উপজেলার পায়রা, চলিশিয়া, শ্রীধরপুর, সিদ্ধিপাশা ও প্রেমবাগ ইউনিয়নে ২৮৪টি মাছের ঘের (২২৫ হেক্টর) ভেসে গেছে।উপজেলার পায়রা, চলিশিয়া, সুন্দলী ও প্রেমমবাগ ইউনিয়নসহ নওয়াপাড়া পৌরসভার ৫ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় ২০ গ্রামে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শত শত পরিবার। তবে এসব নদী ও খালে প্রচুর পরিমাণে কচুরিপানা আটকে থাকতে দেখা যায়। অনেক মৎস্যঘের মালিক তার ভেসে যাওয়া মাছ আটকাতে ঘেরপাড়ে বালুর বস্তা ফেলে বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এ সময় উপজেলার সরখোলা গ্রামে পানিবন্দি রবিউল হোসেন বলেন, এভাবে বৃষ্টি হলে ঘরের ভেতরে পানি ঢুকতে বেশি সময় লাগবে না। বাঁশের সাঁকো দিয়ে চালু করতে হচ্ছে। এক সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি হয়েও এখনো কোনো সরকারি সহযোগিতা মেলেনি।
সোমবার বিকেলে নওয়াপাড়া স্বাধীনতা চত্বরে দেখা যায়Ñতীব্র বৃষ্টির কারণে অনেক পথচারী দোকানপাটের সামনে দাঁড়িয়ে বৃষ্টির থামার অপেক্ষায় রয়েছেন। খুলনা বিএল কলেজের শিক্ষার্থী সবুজ হালদার বলেন, “মশিয়াহাটি যাবো এক ঘণ্টা হলো দাঁড়িয়ে আছি, কিন্তু বৃষ্টি থামার কোনো লক্ষণ নেই।” উপজেলার সর্বত্র বৃষ্টির দাপট চলছে, তবে সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক বিরাজ করছে ভবদহ এলাকার মানুষের মধ্যে। অতীত অভিজ্ঞতায় আশঙ্কা করা হচ্ছে, এবারও জলাবদ্ধতা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। 
ভবদহ পাড়ের ঘের ব্যবসায়ী ইউসুফ শেখ বলেন, “আমডাঙ্গার বিলে আমাদের কয়েক শত বিঘা ঘের রয়েছে। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে পানি দ্রুত বাড়ছে। জলাবদ্ধতা হলে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাবো।”সুন্দলী এলাকার বাসিন্দা লিয়াকত আলী বলেন, “গতবারের মতো এবারও মাছের ঘের ভেসে যাওয়ার ভয় পাচ্ছি। তাই আগেভাগেই নেট কিনেছি। কিন্তু দেখছি বৃষ্টির সুযোগ নিয়ে নেটের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা।” অন্যদিকে, বাজারেও পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব। নওয়াপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী রহিম জানান, “বাজারে লোকজন নেই বললেই চলে। বৃষ্টির কারণে বেচাবিক্রিও তলানিতে এসে ঠেকেছে।”
জলাবদ্ধতা প্রতিরোধে দায়িত্বরত যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জির সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
স্থানীয়দের আশঙ্কা, যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া না হলে ভবদহ আবারও জলাবদ্ধতার ভয়াবহ দুঃস্বপ্নে ফিরে যাবে। ফলে এখনই পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা সচল করা, খাল খনন এবং জলাবদ্ধতা প্রতিরোধে দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি হয়ে উঠেছে। অন্যথায়, শুধু মাছের ঘের নয়Ñআর্থিক ক্ষতি, স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং সামাজিক দুর্ভোগ ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। উপজেলার ডুমুরতলা গ্রামের নবনিতা রানী বিশ্বাস বলেন, আমাদের এই ভবদহের জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধন হবে কি? সরকার আসে, সরকার যায় অথচ ভবদহের জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হয় না।কোটা গ্রামের মৎস্যঘের মালিক শরিফুল ইসলাম বলেন, ৩০০ বিঘা জমির দুইটি মৎস্যঘের ভেসে গেছে। অর্ধকোটি টাকার মাছ ছাড়া হয়েছিল। এলাকায় অসংখ্য মৎস্যঘের ভেসে যেতে শুরু করেছে।
এ ব্যাপারে অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পার্থ প্রতিম শীল বলেন, ভবদহের জলাবদ্ধ এলাকায় পানিবন্দি পরিবারের মাঝে ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। অবৈধ নেট-পাটা-কারেন্ট জাল ও কচুরিপানা অপসারণে উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। যারা নদী, খাল ও বিলে অবৈধভাবে নেট-পাটা ও জাল বসিয়ে পানিপ্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। খাল সংস্কারে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে।

্রিন্ট

আরও সংবদ