খুলনা | মঙ্গলবার | ১৫ জুলাই ২০২৫ | ৩০ আষাঢ় ১৪৩২

‘১৫ লাখ টাকা চায় দুর্বৃত্তরা মুখে ঢোকায় বন্দুকের নল’

৫ ঘন্টার চেষ্টায় নগরীতে অপহৃত খাদ্য পরিদর্শক উদ্ধার, গ্রেফতার ২

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:৩১ এ.এম | ১৫ জুলাই ২০২৫


নগরীর ৪নং ঘাট এলাকা থেকে খাদ্য কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার মজুমদারকে রোববার রাতে অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় তারা ১৫ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছিল। সুশান্ত তিন লাখ ২০ হাজার টাকা দিতে সম্মত হন। বিকাশে ২০ হাজার টাকা নেয়ার পরপরই পুলিশের তৎপরতা শুরু হয়। পরে রাত ১২টার দিকে তেরখাদা আজগড়া স্কুলের সামনে হাত-চোখ বেঁধে তাকে ফেলে চলে যায় অপহরণকারীরা। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অপহরণের ঘটনা সম্পর্কে এসব তথ্য দেন সুশান্ত কুমার। তিনি খাদ্য বিভাগের খুলনার ৪নং ঘাট ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত আছেন। তার মূল পদ খাদ্য পরিদর্শক।
অপহরণের ঘটনায় ওই কর্মকর্তার স্ত্রী মাধবী রানী মজুমদার পাঁচ অপহরণকারী ও বিকাশে টাকা নেয়া দুই এজেন্টসহ সাতজনকে আসামি করে মামলা করেন (নং ১৬, ১৪/০৭/২০২৫)। আসামিীা হলেন তেরখাদা উপজেলার আজগড়া গ্রামের মোঃ রেজা, বাবু মন্ডল, জামাল হাওলাদার, নাছির, টুনু এবং বিকাশ এজেন্ট আলমগীর কবির ও মুসা খান। তাদের মধ্যে দুই বিকাশ এজেন্টকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মূল অপহরণকারী পাঁচজন এখনও পলাতক।
গ্রেফতারকৃতরা হলো রূপসার আইচগাতীর মোঃ মইনুদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে আলমগীর কবির (৪৮) এবং রূপসার শিরগাতীর মোঃ মালেক খানের ছেলে মুসা খান (২৮)।
রোববার সন্ধ্যা ৭টার দিকে নগরীর ৪নং ঘাট এলাকা থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায় কয়েকজন দুর্বৃত্ত। অপহরণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। পুলিশের একাধিক টিম সাড়ে ৫ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে খুলনার তেরখাদার আজগড়া বিআরবি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে হাত ও চোখ বাঁধা অবস্থায় সুশান্তকে উদ্ধার করে। বর্তমানে তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, স্বজন ও ঘাট এলাকার শ্রমিকরা সেখানে ভিড় করেছেন। সুশান্তের চোখ, পিঠ, পায়ের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন। 
খাদ্য পরিদর্শক সুশান্ত মজুমদার জানান, কয়েক দিন আগে মোঃ রেজা নামের এক ব্যক্তি ফোন করে টাকা চান। রোববার রেজা তার সঙ্গে দেখা করতে ৫নং ঘাট এলাকায় যান। একটি দোকানে তারা একসঙ্গে চা খান। এরপর মোল­াহাটে যাওয়ার কথা বলে সুশান্তর কাছ থেকে দুই হাজার টাকা নেন রেজা। 
সুশান্ত বলেন, ‘চায়ের বিল দিয়ে রাস্তা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন আমাকে জাপটে ধরে। কিছু সময় ধস্তাধস্তির পর ওরা আমাকে ট্রলারে ওঠায়। দুই পাশ থেকে আমার পেটে বন্দুকের নল ধরে। ট্রলার ওই পারে জেলখানা ঘাটে গেলে আরও ৫-৭ জন তাদের সঙ্গে যোগ দেয়।’
তিনি বলেন, ‘প্রথমে আমার কাছে ১৫ লাখ টাকা চায়। আমি বলি এতো টাকা আমি কোথায় পাবো। ৫০ হাজার টাকা দেয়ার কথা জানালে মুখে বন্দুকের নল ঢুকিয়ে দেয়। চোখ-পিঠে ঘুষি মারে। তখন ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা দিতে রাজি হই। আমার পরিবার প্রথমে ২০ হাজার টাকা আমার মোবাইলে পাঠায়। তখন মাথায় হেলমেট পরিয়ে তারা আমাকে আজগড়া স্কুলে নিয়ে যায়। পরে সেখানে থেকে পুলিশ আমাকে উদ্ধার করে।’ 
রেজার সঙ্গে তার পরিচয়, চাঁদা দাবির ফোনে কেন গোপনে সাক্ষাতে রাজি হলেন-এসব বিষয়ে সুশান্ত কোনো কথা বলেননি। রেজার পরিচয় নিয়েও ধুম্রজাল তৈরি হয়েছে।
তেরখাদা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মেহেদী হাসান জানান, রাত সাড়ে ১২টার দিকে খুলনা থানা পুলিশ তেরখাদা থানা পুলিশের সহায়তায় বিআরবি মাঠ থেকে ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করেছে।
খুলনা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাওলাদার সানওয়ার হুসাইন মাসুম বলেন, অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
 

্রিন্ট

আরও সংবদ