খুলনা | বুধবার | ১৬ জুলাই ২০২৫ | ১ শ্রাবণ ১৪৩২

চিকিৎসক নিয়োগে অনিয়ম পরীক্ষা ছাড়া যোগ্যতা যাচাই হলো কী করে

|
১২:১০ এ.এম | ১৬ জুলাই ২০২৫


সরকারি চাকুরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থীর যোগ্যতা যাচাই করার জন্য পরীক্ষা নেওয়ার বিধান আছে। কোনো ক্ষেত্রে মৌখিক পরীক্ষা আবার কোনো ক্ষেত্রে লিখিত ও মৌখিক দু’টিই নেওয়া হয়। সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রার্থিতা আহŸান করার কথা থাকলেও বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেটা মানেনি। নিজস্ব নোটিশ বোর্ডে একটি ‘নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি’ টানিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছে, যা আইনের লঙ্ঘন।
শিশু হাসপাতালের ওই নোটিশ বোর্ডে জাতীয় বেতন স্কেলে নবম গ্রেডের পাঁচ ধরনের কর্মকর্তার (শিশু মেডিসিন, শিশু সার্জারি, শিশু অ্যানেসথেসিয়া, ইএনটি ও ম্যাক্সিলোফেসিয়াল) ৪২টি পদে ৩৫ বছরের কম বয়সী বাংলাদেশি নাগরিকদের পক্ষ থেকে দরখাস্ত আহŸান করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে শিশু হাসপাতালে প্রশিক্ষণরত ও অধ্যয়নরত চিকিৎসকেরা অগ্রাধিকার পাবেন বলেও জানানো হয়। যেখানে প্রতিযোগিতার সুযোগ নেই, সেখানে অগ্রাধিকারের প্রশ্ন আসে কী করে?
হাসপাতালের নোটিশ বোর্ডের বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার কারণে বাইরের কেউ আবেদন করেননি। শিশু হাসপাতালের প্রশিক্ষণার্থী ও শিক্ষার্থীরাই আবেদন করেছেন। হাসপাতালের পরিচালক মাহবুবুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ৬৫ জনের থেকে দু’চারজন বেশি আবেদন করেছিলেন। ড্যাবের বিলুপ্ত হওয়া কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও হাসপাতাল পরিচালনা বোর্ডের সদস্য এম এ কামাল বলেছেন, নিয়োগ পাওয়া ৬৫ চিকিৎসকই ড্যাবের। ড্যাবের সদস্য হলে কারও চিকিৎসক পদে নিয়োগ পেতে বাঁধা নেই। কিন্তু সেটা হতে হবে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। পরীক্ষায় যাঁরা ভালো করবেন, তাঁদেরই নিয়োগ পাওয়ার কথা।
জামায়াত-সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন এনডিএফের সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম এ নিয়োগে স্বচ্ছতার ঘাটতি থাকার যে অভিযোগ করেছেন, সেটা অমূলক নয়। উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তি না থাকায় সারা দেশের চাকুরিপ্রত্যাশীরা এ নিয়োগ সম্পর্কে জানতেই পারেননি। এ বিষয়ে পরিচালনা বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক এ কে এম আজিজুল হক অ্যাডহক ভিত্তিতে ছয় মাসের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে পরীক্ষা নেওয়ার প্রয়োজন হয়নি বলে যে যুক্তি দেখিয়েছেন, সেটি অগ্রহণযোগ্য নয়। হাসপাতালের জরুরি প্রয়োজনে অস্থায়ী ভিত্তিতে চিকিৎসক পদে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে, কিন্তু সেটি হতে হবে পরীক্ষার মাধ্যমে।
নিয়োগে বাতিলের দাবিতে হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচিও পালন করেছেন চিকিৎসকেরা। নিয়োগ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কারণ দর্শাও নোটিশ দিয়েছিল এবং হাসপাতালের পরিচালক জবাবও দিয়েছেন। কিন্তু এ জবাবে সন্তুষ্ট হতে না পেরে ১০ জুলাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
যে হাসপাতালে চিকিৎসকের সংখ্যা শতাধিক, সে হাসপাতালে পরীক্ষা ছাড়া ৬৫ জনকে অস্থায়ী নিয়োগ দেওয়া যায় না। বিশেষ সংগঠনের সদস্যদের নিয়োগ পাওয়ার ঘটনাও অস্বাভাবিক। ওই সংগঠনের বাইরে কি যোগ্য শিক্ষার্থী নেই? আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সদস্য হলেই সরকারি হাসপাতালে নিয়োগ পেতেন। এখন যদি ড্যাবের সদস্যরা নিয়োগ পেয়ে থাকেন, তাহলে পরিবর্তনটা কী হলো? চিকিৎসা খাতে দলীয়করণ ও স্বজনতোষণের অভিযোগ চলে আসছিল বহু বছর ধরে। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পর সেই ধারার পরিবর্তন ঘটেনি, কুশীলব বদল হয়েছে মাত্র।
সবশেষে বলব, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রণীত কমিটির প্রতি আমরা আস্থা রাখতে চাই। আশা করি, তারা সংশ্লিষ্ট সবার মতামতের ভিত্তিতে ন্যায্য সুপারিশ করবে এবং তার ভিত্তিতে মন্ত্রণালয়ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। স্বাস্থ্য খাতের অনিয়মব্যবস্থা দূর করতে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

্রিন্ট

আরও সংবদ