খুলনা | শনিবার | ১৯ জুলাই ২০২৫ | ৪ শ্রাবণ ১৪৩২

সাগরে নীরব ধ্বংসযজ্ঞ অবৈধ ট্রলিং ট্রলারের লাগাম টানবে কে!

|
১২:১৬ এ.এম | ১৯ জুলাই ২০২৫


সাগরে ট্রলারে করে মাছ ধরতে গিয়ে এক ধ্বংসাত্মক পদ্ধতি বেছে নিচ্ছেন ট্রলার মালিকেরা। বঙ্গোপসাগরের বুকে চলা নীরব এই ধ্বংসযজ্ঞের নাম ‘ট্রলিং ট্রলার’। ছোট কাঠের ট্রলারকে অবৈধভাবে যান্ত্রিক ‘ট্রলিং ট্রলারে’ রূপান্তর করে এবং ছোট ফাঁসের বেহুন্দি জাল ব্যবহার করে মাছের রেণু, ডিমওয়ালা মা মাছ ও প্রাকৃতিক খাদ্য নিধন করা হচ্ছে। মৎস্য বিশেষজ্ঞদের মতে, মাছ শিকারের এই অপচর্চা সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক প্রজনন চক্রকে ভেঙে দিচ্ছে। যার ফলে মাছের উৎপাদন আশঙ্কাজনকভাবে কমছে। এটি খুবই উদ্বেগজনক।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বরগুনার পাথরঘাটা থেকে ২০২৩ সালে এই ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমের ধারা শুরু হয়। স্থানীয় ট্রলারমালিক মাসুম আকনের নেতৃত্বে দু’টি ট্রলার যান্ত্রিকভাবে রূপান্তরিত হওয়ার পর বর্তমানে শুধু পাথরঘাটায় অন্তত ৩৮টি এমন ট্রলার চলছে। মহিপুরে ৭০টির বেশি, ভোলায় ৯০টি এবং চট্টগ্রামের কুতুবদিয়ায় ২০০টির মতো ট্রলার একইভাবে রূপান্তরিত হয়ে বঙ্গোপসাগরের অগভীর অঞ্চলে মরণফাঁদ পেতেছে।
জেলেরা জানান, এসব ট্রলারের বেহুন্দি জালের ফাঁস এতটাই ছোট যে পানি ছাড়া আর কিছুই এর ফাঁক গলিয়ে বের হতে পারে না। ফলে রেণু, ডিম, এমনকি মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য শামুক, ঝিনুক, প্রবাল, শৈবালও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকুয়াকালচার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী সতর্ক করেছেন, যদি অবিলম্বে এই ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম বন্ধ না হয়, তবে দেশের মৎস্যভান্ডার ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থাও এই যান্ত্রিক জালপদ্ধতিকে বিশ্বের অন্যতম বিধ্বংসী কৌশল হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
তবে উদ্বেগের বিষয় হলো এসব ট্রলারমালিক উচ্চ আদালতে রিট করে প্রথমে ছয় মাসের জন্য কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি নেন এবং পরবর্তী সময়ে তা বারবার নবায়ন করাচ্ছেন। এর ফলে মৎস্য বিভাগ চাইলেও আইনি জটিলতার কারণে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের পরিচালক মোল­া এমদাদুল­াহ’র মতে, বেহুন্দি জালের লাইসেন্স নিয়ে সেগুলো ট্রলারে বসিয়ে পরে রিট করে বৈধতার দাবি করা হচ্ছে।
এই আইনি ফাঁকফোকর দেশের অমূল্য সামুদ্রিক সম্পদকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। সামুদ্রিক সম্পদ রক্ষা এবং দেশের মৎস্য খাতের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে অবিলম্বে এই নীরব ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করা প্রয়োজন। উচ্চ আদালতকে এই রিটগুলোর বিষয়ে জনস্বার্থের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে। একই সঙ্গে সরকারকে মৎস্য আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে এবং অবৈধভাবে রূপান্তরিত এই ট্রলারগুলোর বিরুদ্ধে দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। ট্রলার মালিক ও জেলেদেরও এ ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

্রিন্ট

আরও সংবদ