খুলনা | শনিবার | ২৬ জুলাই ২০২৫ | ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

গোপালগঞ্জে নৈরাজ্য হামলাকারীদের গ্রেফতার করতে হবে

|
১১:৫৮ পি.এম | ২০ জুলাই ২০২৫


জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পূর্বনির্ধারিত ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচি চলাকালে কার্যত নিষিদ্ধ আ’লীগ এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ যেভাবে হামলা চালিয়েছে, চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে তা অচিন্তনীয়। বুধবার দুপুরের পর অনুষ্ঠানস্থল ঘিরে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হলেও পরে তা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়। দিনভর হামলা, সংঘর্ষ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং মুহুর্মুহু গুলির শব্দে পুরো শহর পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয় বিভিন্ন স্থাপনা ও যানবাহনে। চারদিকে নেমে আসে আতঙ্ক। এ ঘটনায় অন্তত চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বুধবার রাত ৮টা থেকে পরদিন (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করে স্থানীয় প্রশাসন। তিন দফা শেষে রোববার সকাল থেকে কারফিউ শিথিল করা হয়। জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। সব মিলিয়ে গোপালগঞ্জের অবস্থা থমথমে।
বুধবারের এ ঘটনা থেকে ধারণা পাওয়া যায়, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম এবং ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করা হলেও গোপালগঞ্জে তাদের তৎপরতা থেমে নেই। হয়তো এ দুই সংগঠনের দেশের অন্যান্য স্থানের নেতাকর্মীরা গোপালগঞ্জে গিয়ে জড়ো হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এনসিপির কর্মসূচি ঘিরে গৃহীত নিরাপত্তাব্যবস্থার মাঝে কীভাবে নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা হামলা চালাতে পারলো? সেই সাহস তারা কোথায় পেল? কোথা থেকে এর নির্দেশনা এলো? এসব বিষয়ের তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার। দ্বিতীয়ত, এনসিপির এ কর্মসূচি ছিল তাদের মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ এবং পূর্বনির্ধারিত। সেক্ষেত্রে গোপালগঞ্জে তাদের কর্মসূচি ঘিরে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে কিনা, সে ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে গোয়েন্দা তথ্য থাকা এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুতি গ্রহণের কথা। তেমন তথ্য ও প্রস্তুতি তাদের ছিল কিনা, সেটিও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। 
বস্তুত দেশ এখন একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এখনো সর্বত্র স্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। নানা কারণে বিরাজ করছে অস্থিরতা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। এ অবস্থায় যে কোনো কর্মসূচি গ্রহণের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য সংগঠনকে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে। কোনো অশুভ শক্তি যাতে পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করে ফায়দা নিতে না পারে, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। সামনে জাতীয় নির্বাচন। এ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের ওপর নির্ভর করছে দেশবাসীর বহু কাক্সিক্ষত গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ। কাজেই নির্বাচনের আগে পতিত স্বৈরাচারের দোসররা যাতে দেশে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, অন্তর্র্বতী সরকারের পাশাপাশি প্রতিটি রাজনৈতিক দলের উচিত সে ব্যাপারে সজাগ ও সতর্ক থাকা। গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে হামলা চালিয়ে যারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে, তাদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে, এটাও কাম্য।

্রিন্ট

আরও সংবদ